১০ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৫শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জেনে নিন আলহামদুলিল্লাহ পাঠের ফজিলত:

সুখে-দু:খে সব সময় আলহামদুলিল্লাহ বলতে হয়। আলহামদুলিল্লাহ বললে আল্লাহ আরো ভাল রাখবে। অবস্থার আরো উন্নতি করে দেবে। ভাল থেকে আরো ভাল করে দেবেন। আলহামদুলিল্লাহ না বললে অবস্থা যা আছে ওটাকে আরো খারাপ করে দেবেন।

সব সময় শুকরিয়া করতে হবে, আল্লাহর। শুকরিয়া করলে আল্লাহ নেয়ামত বাড়িয়ে দেন।

আল্লাহ বলেন:
“যদি নিয়ামতের শুকরিয়া কতো তবে নেয়ামত বাড়িয়ে দেব, আর যদি কুফরী করো আজাব দিব।” এখন আমরা আজাব চাইবো নাকি নিয়ামত চাইবো ? নিয়ামত চাইলে সর্বদা শুকরিয়া করতে হবে আল্লাহর।

আলহামদুলিল্লাহ’— এর অর্থ কী?
প্রকৃতপক্ষে এর মূল অর্থ দুটি। আলহামদুলিল্লাহ এর দুটি অংশ রয়েছে।

🔴প্রথমটি হল— আপনি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ (আল্লাহকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন), কৃতজ্ঞতা (শুধুমাত্র) আল্লাহর জন্য।
🔴আর দ্বিতীয় অংশ হলো— প্রশংসা; প্রশংসা আল্লাহর জন্য। কৃতজ্ঞতা ও প্রশংসা দুটি আলাদা বিষয়। একদিকে প্রশংসা আর অন্যদিকে কৃতজ্ঞতা, দুটি দিক।

মনে করুন: আপনি একটি সুন্দর বাড়ি দেখলেন, এবং প্রশংসা করলেন, কিন্তু আপনি বাড়িটিকে ধন্যবাদ দিবেন না। আপনি একজন অসাধারণ খেলোয়াড় দেখলেন, যিনি ফুটবল খেলেন, তিনি একটি অসাধারণ গোল করলেন। আপনি ঐ খেলোয়াড়ের প্রশংসা করবেন, কিন্তু আপনি ঐ খেলোয়াড়কে ধন্যবাদ দিবেন না, আপনি ঐ খেলোয়াড়ের প্রতি কৃতজ্ঞ হবেন না।

আপনি একটি অসম্ভব সুন্দর গাড়ি দেখলেন। আপনি গাড়িটির প্রশংসা করবেন, কিন্তু গাড়িটির প্রতি কৃতজ্ঞ হবেন না। আবার মাঝে মাঝে উল্টোটাও ঘটে। কিছু মানুষের প্রতি আপনি কৃতজ্ঞ থাকেন যদিও আপনি কখনো তাদের প্রশংসা করবেন না।

এমন ঘটে। এর উদাহরণ হচ্ছে— আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা একজন মুসলিমকে সকল অবস্থাতেই তার বাবা-মার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে বলেন, এমনকি তার বাবা-মা মুশরিক হলেও়! আপনাকে অবশ্যই আপনার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে হবে। এমনকি যদিও তারা আপনাকে শিরক করার জন্য জোর করেন। তারা চান আপনি ঈমান পরিত্যাগ করেন, তারপরও আপনাকে উনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে হবে। আপনি তাদের শিরক-এর প্রশংসা করবেন না, কিন্তু তারপরও আপনি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবেন।

অতএব জীবনের কোনো কোনো সময় আপনি প্রশংসা পাবেন কৃতজ্ঞতা ছাড়া, আবার কখনো কখনো কৃতজ্ঞতা দেখবেন প্রশংসা ছাড়া।

আর একটি বিষয়:
যার মধ্যে কৃতজ্ঞতা আছে কিন্তু প্রশংসা নেই, যেন বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। আপনারা ফিরাউনের বিষয়টি জানেন। ফিরাউন পছন্দ করুক আর নাই করুক সে মুসা (আ.)-কে তার প্রাসাদে বড় করেছে। এবং মুসা (আ.) ফিরাউনের কাছে অনেক অনেক বছর পর ফিরে আসেন। এরপর ফিরাউন প্রকৃতপক্ষেই মুসা (আ.)-কে মনে করিয়ে দিয়ে বলেছিল যে, তুমি কি এখানে অনেক বছর থাকোনি? তুমি কি এখানে অনেক বছর পার করোনি? আমরা কি তোমাকে শিশুকাল থেকে বড় করিনি এই বাড়িতে? ফিরাউন তার দয়ার কথা মুসা (আ.)-কে মনে করিয়ে দিচ্ছিল এবং স্বাভাবিকভাবেই কেউ যখন আপনার উপকার করে, আপনি তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকেন। তাই মুসা (আ.) ও এই উপকারের কথা স্বীকার করেন। এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি (মুসা আ.) বলেন— হ্যা তুমি আমার প্রতি দয়া করেছিলে।

যখন আপনি কারো উপকারের কথা স্বীকার করেন, তখন আপনি তাকে ধন্যবাদ দেন। এমনকি মুসা (আ.) ফিরাউনকে ধন্যবাদ দেন। যদিও তিনি কখনই তার প্রশংসা করবেন না। তাই আপনি কাউকে ধন্যবাদ দিতে পারেন প্রশংসা ছাড়া আর কাউকে প্রশংসা করতে পারেন কৃতজ্ঞতা ছাড়া।

যখন আমরা আলহামদুলিল্লাহ বলি— এর মানে আমরা বলি যে আমরা আল্লাহর প্রশংসা করছি তিনি যা কিছু করেন তার জন্য। উনি যা কিছু করেন তার সবকিছুই অসাধারণ, মহান। এর চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না। নিখুঁত, কোনো অভিযোগ নেই। এবং ওনার প্রশংসা করার পর আমরা ওনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকি যে উনি তা করেছেন এই জন্য।

প্রচন্ড গরম:
আজ কিছু মানুষ বাইরে বসে আছেন আপনাদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন যার জন্য এয়ারকন্ডিশন যথেষ্ট নয়, বলে ফেললেন— উফ যা গরম! কিন্তু মুসলিম হিসেবে আপনার মনে প্রথমে যা আসা উচিত সেটি হলো— আলহামদুলিল্লাহ আজ বেশ গরম, আলহামদুলিল্লাহ! এর মানে কি আপনি জানেন? আল্লাহকে ধন্যবাদ গরমের জন্য, এবং আমি আল্লাহর প্রশংসা করি গরমের জন্য। এটি ভিন্ন ধারার চিন্তা। এটি অন্যদের মত নয়।

কিছু মানুষ আছে যারা ঈশ্বর-এ বিশ্বাস করে, বিশ্বাস করুন আমি জানি। সব ধর্মের মানুষের সাথে আমার দেখা হয়। কিছু মানুষ আছে যারা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করে, কিন্তু তাদের যেটা নেই, প্রথমত তাদের যেটা নেই সেটা হলো— আলহামদুলিল্লাহ।

অসন্তুষ্টভাবে আলহামদুলিল্লাহ বলা: আর কিছু মুসলিম আছে যারা আলহামদুলিল্লাহ বুঝে না। তাই মাঝে মধ্যে তারা বলে— ‘আমি বেতন বেশি পাই না, তবে যাই হোক, আলহামদুলিল্লাহ!’

আপনি প্রকৃতপক্ষে আলহামদুলিল্লাহ বলছেন না। আপনি অভিযোগ করছেন আলহামদুলিল্লাহ বলার মধ্য দিয়ে। ‘পরিবারের সবাই কেমন আছে’, ‘এই আছে আরকি, আলহামদুলিল্লাহ।’ এই আলহামদুলিল্লাহ বলা কিন্তু সত্যিকারের আলহামদুলিল্লাহ না। আলহামদুলিল্লাহ হচ্ছে আপনার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে আপনি কৃতজ্ঞ। যা কিছু ভুল ঘটছে, তার মাঝেও আপনি সেখানে ভালো কিছু খুঁজে পাবেন।

আপনি যদি গরম অনুভব করেন, অন্তত আপনি অসুস্থ বোধ করছেন না। আপনার আরো কিছু খারাপ হতে পারত। আপনি জানেন যদি আপনার গাড়ির ট্রান্সমিশন সমস্যা থাকে, অন্তত গাড়ির ইঞ্জিনে তো কোন সমস্যা নেই। আপনার অনেক কিছুই ঠিক মত চলছে।

আমরা সেই দলের মানুষ যারা আলহামদুলিল্লাহ বলি। জানেন এর মানে কী? আমরা সবসময় কৃতজ্ঞ, আমরা সবসময় ইতিবাচক। আমরা যদি আলহামদুলিল্লাহ বুঝতাম, আমরা কখনো হতাশ হতাম না, একজন মুসলিম কখনো হতাশ হতে পারে না।

ইদানিং আপনি উম্মার মধ্যে দেখতে পাবেন যে, কিছু মানুষ মুসলিমদের অবস্থার জন্য অভিযোগ করছে। যেমন ধরুন আমরা মুসলিমদের অজ্ঞতার জন্য অভিযোগ করি অথবা মুসলিমদের মাঝে দুর্নীতির ব্যাপারে অভিযোগ করি। আমরা অভিযোগ করি, অভিযোগ করি, আর অভিযোগ করি। আমি আপনাদের বলছি তিনি আল্লাহ, যিনি আমাদের অবস্থার পরিবর্তন করেন। আমাদের যা করতে হবে তা হলো, আল্লাহর দিকে ফিরে যেতে হবে আলহামদুলিল্লাহ বলে। আমাদের ইতিবাচক থাকতে হবে, ইতিবাচক দলের মানুষ হতে হবে।

আল্লাহ তা’লা তাঁর প্রতি বেশী বেশী শুকরিয়া
(আলহামদুলিল্লাহ) করে তাঁর মুকাররাবীন বান্দাদের অন্তরভুক্ত আমাদের করে নিন-আমিন।

‘আলহামদুলিল্লাহ’ মিজানের পাল্লাকে ভারী করে এবং এটা সর্বোত্তম দোয়া। -তিরমিজি ও ইবনে মাজা

আরো দেখুন
error: Content is protected !!