১২ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৭শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাদক উদ্ধারসহ চোরাকারবারীদের গ্রেফতারে প্রশংসিত কুমিল্লার ছত্রখিল ফাঁড়ি পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।
কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী পাঁচথুবী ও আমড়াতলী ইউনিয়নে বিগত ৫ মাসে বিপূল পরিমান মাদক উদ্ধার, বেশ কয়েকজন তালিকাভুক্ত মাদক কারবারীসহ ৪৩ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতারে এলাকাবাসীর প্রশংসা কুঁড়িয়েছে পুুলিশ।এলাকাটি ভারত সীমান্ত ঘেষা হওয়ায় মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের জন্য এলাকাটি কুমিল্লার একটি অন্যতম জোন। মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতার কারণে ওই এলাকার ছত্রছিল পুলিশ ফাঁড়ি নানা কারণেই বিতর্কিত হয়। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এ ফাঁড়ির ইনচার্জ হিসেবে এসআই শেখ মফিজুর রহমান যোগদানের পর পাল্টে গেছে মাদক ব্যবসার ট্রানজিট রোড হিসেবে খ্যাত ওই এলাকাটি।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন লোকদের নিয়ে এলাকায় তিনি মাদক বিরোধী সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি মাদক ক্রয়-বিক্রয় ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। কুমিল্লার বর্তমান পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ এর দিক নির্দেশনায় এরই মধ্যে ইনচার্জ মফিজুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে গ্রেফতার হয়েছেন এলাকার অন্তত ৪৩ চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ী। উদ্ধার করা হয়েছে বিপূল পরিমান ফেনসিডিল ও ইয়াবা। কিন্তু ইনচার্জের গৃহীত মাদক বিরোধী কর্মকান্ডে কোনঠাসা হয়ে নানা অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে এলাকার একটি চক্র।

জানা যায়, অত্র ফাঁড়িতে ইনচার্জ হিসেবে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি যোগদান করেন শেখ মফিজুর রহমান। পরে জানুয়ারি মাসে ১০জন আসামী ও ১টি সিএনজিসহ ১০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেন। ফেব্রুয়ারি মাসে ৯জন আসামীসহ ৭১ বোতল স্কাইপ এবং ৬১ পিস ইয়াবা,মার্চ মাসে ৯জন আসামিসহ ১১০০ পিস ইয়াবা এবং ৭ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেন। এ অভিযানে আলোচিত একাধিক মামলার আসামি ও মাদক সম্রাট মাঝিগাছার মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে মোঃ আলো রহমান, আলো মিয়া, কোটিশ্বর গ্রামের মৃত বাচ্চু মিয়ার ছেলে মোঃ জুয়েল মাদক সম্রাটকে গ্রেফতার করা হয়। এপ্রিলে ৭ জন আসামীসহ ১৬৮০ পিস ইয়াবা, ৩ কেজি গাঁজা, ১১২ বোতল ফেন্সিডিল, ৬ রাউন্ড গুলি, ১৯ পিস ভারতীয় আমদানি নিষিদ্ধ যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। এ সময় আলোচিত মাদক সম্রাট শাওয়ালপুর গ্রামের সফিক মেম্বারের বাড়ি থেকে গুলি সহ বিপুল পরিমান মাদক দ্রব্য উদ্ধার করে পুলিশ এবং তার নামে পৃথকভাবে অস্ত্র, মাদক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়। জামবাড়ি এলাকায় চিহ্নিত একাধিক মাদক মামলার আসামি মাদক সম্রাট নামে পরিচিত মৃত আঃ জব্বারের ছেলে সামিউল বাশার গ্রেফতার করা হয়। মে মাসে ৮মাদক ব্যবসায়ীসহ ৩ হাজার ৫০ পিস ইয়াবা, ৩৬ কেজি ৫০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়।

এ অভিযানে গাবতলি গ্রামে আলোচিত মাদক সম্রাট এবং মাদকের ডন ভারতে ৫০ হাজার পিস ইয়াবাসহ আঃ মালেকের ছেলে এমদাদুল হক,আমজাদ ভারতে গ্রেফতার হয়ে পরে জামিনে দেশে ফিরে মাদক ব্যবসা শুরু করলে তাকে মাদকসহ গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও এ মাসে মাদক সম্রাট বসন্তপুর গ্রামে মৃত অহিদ মিয়ার ছেলে একাধিক মামলার আসামি দেলোয়ার হোসেন, দেলু এবং মতি নগরে মাদক সম্রাট আকতারকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযানে তাদের বাড়ি থেকে ১৮ কেজি গাঁজা এবং ভারতীয় আমদানি নিষিদ্ধ ৪০ হাজার ৬৮০ পিস ওষুধ উদ্ধার করা হয়। পৃথক অভিযানে সদর দক্ষিণ মডেল থানা এলাকায় ডাকাতি মামলার আসামি গ্রেফতারকালে ডাকাত সেলিম এর হেফাজত হইতে ১টি কাঠের বাটযুক্ত একনালা বন্ধুক, ডাকাতির কাজে ব্যবহার করা ২ টি কাটার, ২টি ষ্টীলের তৈরি সাবল,কাটের বাটযুক্ত ৪ টি দা ও রশি উদ্ধার করা হয়। চলতি মাসে ৬ কেজি গাঁজা ১হাজার পিস ইয়াবাসহ বাশমঙ্গল গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে আবদুল কাদের প্রকাশে চঞ্চলকে গ্রেফতার করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, বর্তমান ইনচার্জ মফিজুর রহমান মাদক ব্যবসায়ীদের নিকট আতংক। তাঁর অভিযানের কারণে এলাকার মাদক ব্যবসা অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় কমে এসেছে। অতীতে এ পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতার অভিযোগ উঠায় জনমনে পুলিশের ভাবমূতি প্রশ্নবিব্ধ হয়ে পড়ে। কিন্তু বর্তমান ইনচার্জ মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান এবং চিহিৃত কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতারের কারণে বেশ প্রশংসিত হয়েছেন।

পাঁচথুবী ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন বাহালুল জানান, ছত্রখিল পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশের ভূমিকার উপর নির্ভর করছে সীমান্ত ঘেষা ২ ইউনিয়ন এলাকার মাদক সেবন ও ক্রয় বিক্রয় করার বিষয়টি। চলতি বছরের শুরুতে বর্তমান ইনচার্জ শেখ মফিজুর রহমানের যোগদানের পর থেকে এলাকার সচেতন লোকদের নিয়ে ঐক্যবব্ধ হয়ে তিনি মাদক বিরোধী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু পুলিশের এসব অভিযানে চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের পৃষ্ঠপোষকরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে এবং গণমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে।

ইনচার্জ শেখ মুফিজুর রহমান বলেন, বর্তমান পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ মহোদয় মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলায়েন্স থেকে আমাদের দায়িত্ব পালন করতে বলেছেন। তাই পুলিশ সুপারের দিক-নির্দেশনায় এ ফাঁড়ির আওতাধীন এলাকায় মাদক সেবন ও ক্রয় বিক্রয় বন্ধ রাখতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এলাকাকে মাদকমুক্ত করতে তিনি সকলের ঐক্যবব্ধ সহযোগিতা কামনা করেছেন।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!