কুমিল্লায় তরমুজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ
সৈয়দ বদরুদ্দোজা টিপু
একদিকে চলছে রমজান মাস, অন্যদিকে মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারের কঠোর বিধি-নিষেধ। এই দুই মিলে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে তরমুজের দাম। কয়েকদিনের ব্যবধানে তরমুজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
সোমবার (২৬ এপ্রিল) কুমিল্লার বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার বাজারে প্রথম যখন তরমুজ আসে মান ও বাজার ভেদে প্রতি বড় সাইজের তরমুজ ২৫০টাকা হইতে ৩০০টাকা ছোট সাইজের তরমুজ ১৫০ টাকা হইতে ২০০ টাকা, যা রোজা শুরু হওয়ার আগে ছিল। মাঝখানে ছিল বড় সাইজের ৩৫০ টাকা হইতে ৪০০টাকা আর এখন প্রতিটি বড় সাইজের তরমুজ ৫০০টাকা হইতে ৬০০ টাকার মধ্যে।
তরমুজের এই অস্বাভাবিক দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজার কারণে তরমুজের চাহিদা বেড়ে গেছে। অন্যদিকে বিধি-নিষেধের কারণে কুমিল্লায় তরমুজ কম আসছে। এছাড়া তরমুজের মৌসুম ও শেষ হয়ে আসছে। এসব কারণেই তরমুজের দাম বেড়ে গেছে।
তারা আরও বলছেন, তরমুজের মৌসুম খুব বেশি দিন থাকে না। দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যায়। কুমিল্লায় সবচেয়ে বেশি তরমুজ আসে বরিশাল ও খুলনা থেকে। ইতোমধ্যে বরিশালের তরমুজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এখন খুলনা থেকে তরমুজ পাইকারিরা মালাপাড়া, নিমসার, ইলেটগঞ্জ নিয়ে আসে ঐখান থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা শতক হিসাবে কিনে আনে।
তরমুজ বিক্রি করা পুলিশ লাইনের মোঃ মোসলেম বলেন, গাড়ি ভাড়া বেশি হওয়ায় গত বছরের তুলনায় এবার তরমুজের দাম বেশি।
তিনি বলেন, বাজারে যখন নতুন তরমুজ আসে সে সময় প্রতি তরমুজ বিক্রি করেছি২৫০/- হইতে ৩০০/- টাকা। মাঝে দাম কমে নাই কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে যে দামে কেনা পড়ছে তাতে বড় তরমুজ ৫০০/- টাকা হইতে ৬০০/- টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব না।
মোঃ মোসলেম আরও বলেন, রোজার কারণে এখন তরমুজের চাহিদা বেড়েছে। আবার লকডাউনের কারণে তরমুজ আসা কমেছে। আমরাও অনেক কষ্ট করে আড়ৎ থেকে তরমুজ আনছি। এছাড়া তরমুজের মৌসুম আস্তে আস্তে শেষ হয়ে আসছে। সবকিছু মিলিয়ে তরমুজের দাম বেড়ে গেছে। এবার তরমুজের দাম আর কমার সম্ভাবনা কম।
তিনি আরও বলেন, ছোট হোক বা বড় এখন সব তরমুজই লাল ও মিষ্টি। তবে অবশ্যই বড় তরমুজের চাহিদা বেশি। এ কারণে দামও বেশি।
উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, তরমুজে খুব সামান্য ক্যালোরি আছে। তাই তরমুজ খেলে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না। তরমুজের ৯২ শতাংশই পানি। শরীরে পানির অভাব পূরণে ফলের মধ্যে তরমুজই হলো আদর্শ ফল। তরমুজে আছে পর্যাপ্ত ভিটামিন এ, সি, পটাশিয়াম ও আঁশ। মৌসুমি এই ফলটির রয়েছে নানা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তরমুজ হলো ভিটামিন ‘বি৬’-এর চমৎকার উৎস, যা মস্তিষ্ক সচল রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তরমুজে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি খেলে দেহের অক্সিডেটিভ স্ট্রেসজনিত অসুস্থতা কমে। এই ফলটি নিয়মিত খেলে প্রোস্টেট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে না। তরমুজের আরো একটি গুণ হলো, এটি চোখ ভালো রাখতে কাজ করে। তরমুজে ক্যারোটিনয়েড থাকায় এ ফলটি চোখ ও দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। সেই সঙ্গে চোখের নানা সমস্যার প্রতিষেধক হিসেবেও কাজ করে তরমুজ।
চিকিৎসকরা বলেন, ক্যারোটিনয়েড রাতকানা প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। তরমুজে প্রচুর পানি এবং কম ক্যালরি থাকায় পেট পুরে তরমুজ খেলেও ওজন বাড়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, তরমুজে থাকা উচ্চ পরিমাণে সিট্রুলিন মানবদেহের ধমনির কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখে এবং রক্তচাপ কমিয়ে দেয়।