কুমিল্লা ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টে যুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে ওয়ার সিমেট্রি
✒️ মহানগর ডেস্ক
কুমিল্লা শহরের ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে রয়েছে ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট। এই ক্যান্টনমেন্টের একটু উত্তর দিকে অবস্থিত ওয়ার সিমেট্রি। টিলার নীচে উঁচুনীচু ভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত বিভিন্ন দেশের সৈনিকদের সমাধিক্ষেত্র সারি সারি সাজানো হয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত, মিয়ানমার, জাপান, আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশের কমপক্ষে ২০০ থেকে ৩০০ সৈনিকের দেহ সারিবেঁধে সমাধিস্থ হয়েছে। ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত সৈনিক ও সেনা কর্মকর্তাদের সমাধিস্থল এটি।
ওই যুদ্ধে ৪৫ হাজার কমনওয়েলথ সেনা মারা যায়। এর মধ্যে ভারতীয় উপমহাদেশের ২৭ হাজার নিহত সেনাদের স্মৃতি সংরক্ষণে ভারতে ১০টি, মিয়ানমারে তিনটি, পাকিস্তানে দুটি, সিঙ্গাপুরে একটি, মালয়েশিয়ায় একটি, জাপানে একটি, থাইল্যান্ডে দুটি, বাংলাদেশের চট্টগ্রামে একটি, কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার ময়নামতিতে একটিসহ আটটি দেশে ২২টি সমাধিক্ষেত্র তৈরি করা হয়।
ময়নামতি ওয়্যার সিমেট্রিতে ব্রিটেনের ৩৫৭ জন, কানাডার ১২ জন, অস্ট্রেলিয়ার ১২ জন, নিউজিল্যান্ডের চারজন, দক্ষিণ আফ্রিকার একজন, ভারতীয় উপমহাদেশের ১৭৮ জন, রোডেশিয়ার তিনজন, পূর্ব আফিকার ৫৬ জন, পশ্চিম আফিকার ৮৬ জন, মিয়ানমারের একজন, বেলজিয়ামের একজন, পোল্যান্ডের একজন ও জাপানের ২৪ জন যুদ্ধবন্দিসহ ৭৩৭ জন সমাহিত আছেন। তখন থেকে শহিদের সমাধিস্থল ময়নামতি ওয়্যার সিমেট্রি দেশ-বিদেশে পরিচিতি লাভ করে।
কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সংগঠন কমনওয়েলথ গ্রেইভস কমিশনের তত্ত্বাবধানে এ সমাধিক্ষেত্র পরিচালিত হয়। সমাধিক্ষেত্রটির প্রবেশমুখে একটি তোরণ ঘর, যার ভিতরের দেয়ালে এই সমাধিক্ষেত্রে ইতিহাস ও বিবরণ ইংরেজি ও বাংলায় লিপিবদ্ধ করে একখানা দেয়াল ফলক লাগানো রয়েছে। ভিতরে সরাসরি সামনে প্রশস্থ পথ, যার দুপাশে সারি সারি কবর ফলক। সৈন্যদের ধর্ম অনুযায়ী তাদের কবর ফলকে নাম, মৃত্যু তারিখ, পদবির পাশাপাশি ধর্মীয় প্রতীক লক্ষ করা যায়- খ্রিস্টানদের কবর ফলকে ক্রুশ, মুসলমানদের কবর ফলকে আরবি লেখা (যেমন: হুয়াল গাফুর) উল্লেখযোগ্য।
প্রশস্থ পথ ধরে সোজা সম্মুখে রয়েছে সিঁড়ি দেয়া বেদি, তার উপরে শোভা পাচ্ছে খ্রিস্টধর্মীয় পবিত্র প্রতীক ক্রুশ। বেদির দুপাশে রয়েছে আরো দুটি তোরণ ঘর। এ সকল তোরণ ঘর দিয়ে সমাধিক্ষেত্রের পিছন দিকের অংশে যাওয়া যায়। সেখানেও রয়েছে আরো বহু কবর ফলক। প্রতি দুটি কবর ফলকের মাঝখানে একটি করে ফুলগাছ শোভা পাচ্ছে। এছাড়া পুরো সমাধিক্ষেত্রেই রয়েছে প্রচুর গাছ। প্রতিটি সারির ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন ধরনের ফুলগাছ লাগানো হয়েছে। ওয়ার সিমেট্রির চারপাশে বিভিন্ন গাছ ও ফুলগাছ দেখা যায়। ঘন সবুজ দূর্বা ঘাস ওয়ার সিমেট্রিকে আরো সুন্দর করে তুলেছে।
ওয়ার সিমেট্রিকে আমরা ইংরেজ কবরস্থান বলে থাকে। সবুজে ঘেরা বিভিন্ন প্রজাতির ফুলগাছ বেষ্টিত এই জায়গায় গেলে আনন্দিত মনকে অজানা বিষণ্নতার পরশ দিয়ে যাবে। সমাধিক্ষেত্রের সম্মুখ অংশের প্রশস্থ পথের পাশেই ব্যতিক্রমী একটি কবর রয়েছে, যেখানে একসাথে ২৩টি কবর ফলক দিয়ে একটা স্থানকে ঘিরে রাখা হয়েছে। এই স্থানটি ছিল মূলত ২৩ জন বিমানসৈনিকের একটি গণকবর, যেখানে লেখা রয়েছে “These plaques bear the names of twenty three Airmen whose remains lie here in one grave” নিবিড় এই সুন্দর পরিবেশে ভ্রমণ পিপাসুরা কিছু সময় কাটিয়ে দিতে পারেন নির্বিঘ্নে-নিশ্চিন্তে।ঢাকা থেকে কুমিল্লা ৯৬ কিলোমিটারের পথ। ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে সরাসরি বাস যাতায়াত করে। ঢাকা থেকে প্রাইম, তিশা, এশিয়া লাইন ইত্যাদি বাসে আপনি সরাসরি যেতে পারেন। বাস ভাড়া জনপ্রতি ১২০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে। এছাড়া চট্টগ্রাম ও ফেনীর যেকোনো বাসে চড়েই পৌঁছাতে পারেন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত। কুমিল্লা শহরের ৭ বা ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে রয়েছে ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট। এই ক্যান্টনমেন্টের একটু উত্তর দিকে ওয়ার সিমেট্রি। ঢাকা বা দেশের অন্য কোনো স্থান হতে এসে নামতে হবে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট। এখান হতে পায়ে হাঁটার পথ। যেতে সর্বোচ্চ লাগবে ১০ মিনিট। চাইলে রিকশা বা অটোরিকশা করেও যেতে পারেন।
থাকার জন্য কুমিল্লায় বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল চন্দ্রিমা, হোটেল নুরজাহান, হোটেল সোনালী, হোটেল শালবন, হোটেল নিদ্রাবাগ, আশীক রেস্ট হাউস ইত্যাদি। ভাড়া ২০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে।