জালিয়াতি ধরে শাস্তির মুখে শিক্ষক
নিউজ ডেস্ক
ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেননি। তবুও মেধা তালিকায় ১২তম স্থান অর্জন করেন এক শিক্ষার্থী।
জালিয়াতির মাধ্যমে মেধা তালিকায় স্থান করে নেয়ার বিষয়টি ধরে ফেলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের একজন শিক্ষক। বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর ওই অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আর ভর্তি হতে আসেননি। তবে বিষয়টি কেন গণমাধ্যমে এলো তা নিয়ে ওই শিক্ষককে বিভাগীয় শাস্তি দিতে তৎপর হয়েছে কর্তপক্ষ। ঘটনাটি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে সিন্ডিকেট।
তবে যাদের গাফিলতির কারণে ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই মেধা তালিকায় এক শিক্ষার্থী ১২তম হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যার ফলে বিষয়টি এখন টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে।
এর মধ্যে আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ (আসক) বেশ কয়েকটি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান ওই শিক্ষকের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় আবেদন করেন এক শিক্ষার্থী। তবে আবেদন করলেও ওই শিক্ষার্থী পরীক্ষায় উপস্থিত হননি। ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, পরীক্ষা না দিয়েও ওই শিক্ষার্থী মেধা তালিকায় ১২তম স্থান অধিকার করেছেন।
এই অসঙ্গতির বিষয়টি বি-ইউনিট কমিটিকে জানান প্রবেশপত্র বাছাই কমিটির সদস্য সচিব মাহবুবুল হক ভূঁইয়া। পরে গণমাধ্যমে ঘটনাটি ভালোভাবেই প্রচার হয়।
এ ব্যাপারে দুটি তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন—কাদের গাফিলতির কারণে এমন ঘটনা ঘটলো এবং গণমাধ্যমে ঘটনাটি কীভাবে এলো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, ‘চারটি ধাপের পরে একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষার ভাইবার জন্য ডাকা হয়। প্রথম ধাপে ভুল হলে অবশ্যই দ্বিতীয় ধাপে ধরা পড়বে। নয়তো তৃতীয় কিংবা চতুর্থ ধাপে। কোনো ধাপেই যখন একজন শিক্ষার্থীর পরীক্ষা না দেয়ার বিষয়টি ধরা পড়ল না তখন এখানে জালিয়াতির আশ্রয় ছাড়া অন্য কোন কাকতালীয় বিষয় হতে পারে না।’
এমন ঘটনার পরই বিভিন্ন গণমাধ্যমে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা না দিয়ে মেধা তালিকায় ১২তম হওয়ার বিষয় নিয়ে খবর প্রচার হয়।
এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কে এই ঘটনা গণমাধ্যমকে জানিয়েছে তা বের করার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। যেখানে প্রথম তদন্ত কমিটি এ ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার ক্ষেত্রে মাহবুবুল হক ভূঁইয়া জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পায়নি।
পরে বিশ্বদ্যিালয় থেকে উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠন করে। দ্বিতীয় তদন্ত কমিটি সাংবাদিকের সঙ্গে ফোনালাপ এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মাহবুবুল হককে দায়ী করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।
তিন সদস্য বিশিষ্ট উচ্চতর দ্বিতীয় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. সৈয়দুর রহমান বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও একজন শিক্ষার্থীর ১২তম হওয়ার বিষয়টিতে দায়িত্বে গাফিলতি ধরা পড়েছে।’
‘কোনভাবেই ভর্তি পরীক্ষার কমিটি এ দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থীর একটি বিষয় বিচ্ছিন্ন বা কাকতালীয় হতে পারে। সেক্ষেত্রে ওই একজনের বিষয়টা যদি গণমাধ্যমে ভর্তি জালিয়াতি হিসেবে ঢালাওভাবে প্রচার হয় সেটাও ঠিক না। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন হয়। আমার তদন্ত কমিটি দুইটা বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে তদন্ত করেছি। একটা হচ্ছে কাদের গাফিলতির কারণে একজন শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া ১২তম হলো? আর এই একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে কারা গণমাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষাকে জালিয়াতি উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেক্ষত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহবুবল হক ভুঁইয়ার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আমরা তদন্ত রিপোর্ট পেশ করেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের কাছে। সেখানে কিছু সুপারিশ উল্লেখ করেছি। দুইটি বিষয়কে কীভাবে সমাধান করে ভবিষ্যতের জন্য আরও সর্তক থাকা যায় তাও তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি।’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া জানান, ‘গণমাধ্যমে খবরটির আসার সঙ্গে আমি জড়িত নই। এ বিষয়ে আমি সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানিয়েছি। তদন্ত কমিটিও প্রমাণ করতে পারেনি আমার জড়িত থাকার বিষয়টি। তবুও শুনেছি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
বিষয়টি উপাচার্যকে জানানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মাহবুবুল হক ভুইয়া বলেন, ‘আমি ও আমার সহকর্মীরা ভিসি স্যারের কাছে সব জানিয়েছি।’
এ ব্যাপারে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘আসলে শিক্ষককে বিভাগীয় শাস্তি দেয়া বা জালিয়াতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে মেধা তালিকায় স্থান দেয়ার বিষয়গুলো ঠিক না।’
‘প্রথমে বলব, একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে মেধা তালিকায় এলে তা থেকে অবশ্যই দায়িত্ব অবহেলার বিষয়টি সামনে আসে। দ্বিতীয়ত গণমাধ্যমে বিষয়টিকে যেভাবে রটানো হয়েছে তাও ঠিক হয়নি। আমরা একটা প্রসেসের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছি। এখানে নিরপক্ষ তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন বিষয় সুপারিশ করেছেন। আমি বলব, কারো প্রতি অন্যায় করা হবে না। তবে আমরা শেষটা এমনভাবে করতে চাই যেন ভবিষ্যতে কেউ দায়িত্ব অবহেলা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট হয় এমন কোন কাজ না করেন। সুন্দর সমাধানই আমাদের লক্ষ্য।’