জেনে নিন নিয়মিত ইলিশ মাছ খেলে যে সব রোগ থেকে দূরে থাকা যায়
লাইফস্টাইল ডেস্ক।।
ইলিশ এমন একটি মাছ যা পছন্দের তালিকায় রাখেন না এমন মানুষ খুব কমই আছেন। এর স্বাদ ও গন্ধ খাবারের লোভ বাড়িয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, ইলিশ মাছ পুষ্টিগুণেও ভরপুর। যা অন্য যেকোনো মাছকে সহজেই হার মানাতে পারে।
প্রোটিন সমৃদ্ধ এই ইলিশ হাজারো রোগেরই প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। যা অনেকেরই অজানা। চলুন তবে আজ জেনে নেয়া যাক ইলিশ খেলে আমাদের কী কী উপকার মিলবে-
চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
ভিটামিন এ এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে৷
সর্দি কাশি ও ক্যান্সারের চিকিৎসায়
ইলিশে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। এই উপাদানটি ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। সাধারণ সর্দি বা কাঁশি থেকে বাঁচাতেও ইলিশের অবদান আছে।
পাচনক্রিয়ার উন্নতি
ইলিশ মাছ পেটের যাবতীয় সমস্যা থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। পেটের আলসার ও কোলাইটিস প্রতিরোধে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড মহৌষধের ভূমিকা পালন করে।
স্নায়ুরোগের দাওয়াই
ইলিশে থাকা পলি-আনস্যাচুরেটেড ও মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড মূলত ডিমেনশিয়া, পার্কিনসনস বা অ্যালঝাইমার্সের মতো স্নায়ুরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ভিটামিন ও খনিজ উপাদান
ইলিশকে অনেকে ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের পাওয়ার হাউজ বলেও আখ্যা দেয়। ইলিশ মূলত জিংক, প্রোটিন, সেলেনিয়াম, আয়োডিন, পটাশিয়াম ইত্যাদি উপাদানে ভরপুর।
ফুসফুসের সুস্থতা
গবেষণায় দেখা যায়, সামুদ্রিক মাছ ফুসফুসের সুস্থতায় ব্যাপক অবদান রাখে। ইলিশেরও শিশুদের হাঁপানি সারানোর ক্ষমতা রয়েছে। বিশেষত যাদের ফুসফুসের রোগ রয়েছে তাদের সপ্তাহে অন্তত একবার ইলিশ খাওয়া উচিত।
ডিপ্রেশন রোধে
ইলিশে আর্জিনিন নামে একটি অ্যামিনো এসিড পাওয়া গেছে। এই উপাদানটি প্রোটিন উৎপাদনে সাহায্য করে। তবে একটি গবেষণায় জানা গেছে, আর্জিনিন মেজর ডিপ্রেসিভ ডিজ-অর্ডার (এমডিডি) প্রতিরোধ কার্যকর। নিয়মিত ইলিশ খেলে ডিপ্রেশনও কমতে পারে।
আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধে
আর্থ্রাইটিস রোধে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের অবদান আছে। মূলত ইমিউন মডুলেটরি বৈশিষ্ট্যের কারণে তারা প্রদাহের লিপিড মধ্যস্থতাকারীর অগ্রদূত হিসেবে কাজ করে। এভাবে এই উপাদান প্রদাহজনক রিয়েকশনকে নিয়ন্ত্রণ করে বাতের ব্যথা সারাতে পারে। বাতের রোগীরা ইলিশ খেলে নানাভাবে উপকৃত হতে পারেন।
ত্বকের পরিচর্যায় ইলিশ
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড ত্বকের অতিবেগুনী রশ্মি প্রতিহত করার ক্ষমতা বাড়ায়। তাছাড়া অ্যাকজিমা কিংবা সোরিয়াস থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এছাড়া ইলিশে প্রচুর পরিমাণে কোলাজেন পাওয়া যায়। এই শক্ত, অদ্রবণীয় ও তন্তুযুক্ত প্রোটিন ত্বককে স্থিতিস্থাপকতা ও শক্তি প্রদান করে। ফলে ত্বক টানটান ও কোমল হয়ে ওঠে। এমনকি আপনার ত্বকের বয়স বাড়তে দেয়না।
রক্ত সঞ্চালন ও হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে
ইলিশ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডে সমৃদ্ধ। সচরাচর এই উপাদানটি সামুদ্রিক মাছে বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড দেহে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড নিউরোনাল, রেটিনা ও ইমিউনাল ফাংশন থেকে শুরু করর ভ্রূণের বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এমনকি কার্ডিওভাস্কুলার ফাংশনের উন্নতি ঘটাতেও ইলিশের গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। এরফলে দেহের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি হয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। হৃদপিণ্ডের সুস্থতার ক্ষেত্রেও ইলিশের গুরুত্ব অপরিসীম।
জিংক
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জিংক সমৃদ্ধ খাবারের প্রতি বেশি মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। জিংক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ইলিশে জিংকের পাশাপাশি ক্রোমিয়াম ও সেলেনিয়ামের প্রাধান্য আছে। এই উপাদানগুলো ইমিউন সিস্টেমকে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া কিংবা ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা প্রদান করে। এমনকি কোষের মূল উপাদান ডিএনএ এবং প্রোটিন উৎপাদনে জিংকের অবদান আছে।
গর্ভাবস্থায় জিংক একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। গর্ভাবস্থা, শৈশব, এবং সঠিক শারীরিক বৃদ্ধি নিশ্চিতকরণে জিংক প্রয়োজন। সেলেনিয়াম দেহে বিশেষ ধরণের প্রোটিন অর্থাৎ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এনজাইম তৈরিতে সহায়তা করে। কোষের ক্ষয়রোধে এই এনজাইম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।