১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাশরুমের যত ঔষধিগুণ

লাইফস্টাইল ডেস্ক।।
মাশরুম ক্লোরোফিলবিহীন ছত্রাক জাতীয় উদ্ভিদ এবং নতুন ধরনের সবজি যা সম্পূর্ণ হালাল, সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও উচ্চ খাদ্যশক্তি এবং ভেষজগুণে ভরপুর। এর মধ্যে ২৫-৩০% প্রোটিন আছে যা অত্যন্ত উন্নত ও নির্ভেজাল। এতে উপকারী শর্করা ও চর্বি আছে।

মাশরুম পছন্দ করেন না এমন লোক কমই পাওয়া যায়। বিশ্বের নানা দেশে, নানাভাবে মাশরুম খাওয়ার চল রয়েছে। এক এক দেশে মেলে মাশরুমের এক এক রকম প্রজাতি। সব মাশরুম বা ছত্রাক কিন্তু খাওয়ার উপযোগী নয়। খাওয়ার উপযোগী মাশরুম সাধারণত চাষ করা হয়।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীর ভালো রাখতে সাহায্য করে মাশরুম। পেট ভালো রাখতে সাহায্য করে মাশরুম। ডায়েটে মাশরুম রাখলে অতিরিক্ত ফ্যাট জাতীয় খাবারের ক্ষতি অনেকটাই ঠেকানো যায়।

মাশরুম বিভিন্ন জটিল রোগের প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। মাশরুমের পুষ্টিগুণের পাশাপাশি যেসব ঔষধিগুণ পাওয়া যায় সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক!

মাশরুমের যত ঔষধিগুণ

১. গর্ভবতী মা ও শিশুদের রোগ প্রতিরোধে:

মাশরুমে আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন ও মিনারেলের এমন সমন্বয় আছে যা শরীরের ইমিউন সিষ্টেমকে উন্নত করে। নিয়োসিন ও অ্যাসকরবিক এসিড বা ভিটামিন সি’র প্রাচুর্য থাকায় মাশরুম স্কার্ভি, পেলেগ্রা প্রভৃতি শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের রোগ প্রতিরোধে উপকারী।

২. বহুমুত্র প্রতিরোধে

বহুমুত্র বা ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের শর্করা ও ফ্যাট জাতীয় খাবার ক্ষতিকারক। ফ্যাট ও শর্করা কম এবং আঁশ বেশি থাকায় বহুমুত্র বা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য মাশরুম বিশেষ উপকারী ও ডায়াবেটিস রোগীদের আদর্শ খাবার। নিয়মিত খেলে ব্লাড সুগার কমিয়ে আনা সম্ভব।

৩. চর্মরোগ প্রতিরোধে মাশরুম

নানা ধরনের চর্মরোগ নিরাময়ে মাশরুম বিশেষভাবে উপকারী। ঝিনুক মাশরুমের নির্যাস থেকে খুশকি প্রতিরোধী ঔষধ তৈরি করা হয়।

৪. উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ প্রতিরোধে

মাশরুমে কোলেস্টেরল কমানোর অন্যতম উপাদান ইরিটাডেনিন, লোভাষ্টটিন, এনটাডেনিন, কিটিন এবং ভিটামিন বি, সি ও ডি থাকায় নিয়মিত মাশরুম খেলে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ নিরাময় হয়।

৫. দাঁত ও হাড় গঠনে

মাশরুমের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন ডি আছে। শিশুদের দাঁত ও হাড় গঠনে এই উপাদানগুলো অত্যন্ত কার্যকরী।

৬. ক্যান্সার ও টিউমার প্রতিরোধে

মাশরুমের বেটা-ডি, ল্যামপট্রোল, টারপিনয়েড ও বেনজো পাইরিন আছে যা ক্যানসার ও টিউমার প্রতিরোধ করে। ফ্রান্সবাসী পর্যাপ্ত পরিমাণ মাশরুম খান বলে গত এক শতাব্দী ধরে ক্যানসার রোগের প্রাদুর্ভাব কম বলে দাবি করা হয়। সম্প্রতি জাপানের জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউটের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে মাশরুমের ক্যানসার প্রতিহত করার ক্ষমতা আছে।

৭. মাশরুম এইডস প্রতিরোধক

মাশরুমে ট্রাইটারপিন থাকাতে বর্তমানে এটি বিশ্বে এইডস প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

৮. আমাশয় রোগ নিরাময়ে মাশরুম

মাশরুমে ইলুডিন এম ও এস থাকাতে আমাশয়ে উপকারী।

৯. হাইপার টেনশন

মাশরুমে স্ফিংগলিপিড এবং ভিটামিন-১২ বেশি থাকায় স্নায়ুতন্ত্র ও স্পাইনাল কর্ড সুস্থ রাখে। তাই মাশরুম খেলে হাইপার টেনশন দূর হয় এবং মেরুদণ্ড দৃঢ় থাকে।

১০. পেটের পীড়ায় ও প্রোটিন যোগানে

মাশরুমে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন আছে। এই প্রোটিন সুস্বাদু ও মুখরোচক। মাশরুমে পর্যাপ্ত পরিমাণ এনজাইম আছে। বিশেষতঃ ট্রিপসিন এবং অগ্নাশয় থেকে নির্গত জারকরস আছে বলে মাশরুম খাদ্য পরিপাক ও হজমে সাহায্য করে, রুচিবর্ধক এবং পেটের পীড়া নিরামক।

১১. কিডনির রোগ প্রতিরোধে

মাশরুমে নিউক্লিক এসিড ও অ্যান্টি-এলার্জেন থাকায় এবং সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকায়, কিডনি রোগ ও এলার্জি রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।

১২. চুল পড়া ও পাকা প্রতিরোধে

মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে সালফার সরবরাহকারী এমাইনো এসিড থাকায়, নিয়মিত খেলে চুল পড়া ও পাকা প্রতিরোধ করে।

১৩. দৃষ্টিশক্তি রক্ষায়

মাশরুমের খনিজ লবণ চোখের দৃষ্টিশক্তি রক্ষার জন্যও সমাদৃত।

১৪. হেপাটাইটিস-বি ও জন্ডিস

মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড, লৌহ এবং লিংকজাই-৮ নামক এমাইনো এসিড থাকায় হেপাটাইটিস-বি ও জন্ডিসের প্রতিরোধক।

১৫. এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা

শরীরে এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা দেখা দিলে নিয়মিত মাশরুম খেলে তা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

আপনার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রাখুন মাশরুম। মাশরুমের উপস্থিতি আপনার খাদ্যতালিকাকে করবে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও আকর্ষণীয়।

তথ্যসূত্র: সাজগোজ

আরো দেখুন
error: Content is protected !!