৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যেভাবে ঘুমালে সুস্থ থাকা যায়

স্বাস্থ্য কথা ডেস্ক।।
আমরা সবাই জানি, মানসিক ও দৈহিকভাবে ভালো থাকার জন্য ঘুমের ব্যাপ্তি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

তবে কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ঘুমানোর পজিশনটাও গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা বলছে, অনেকের জন্যই বাম কাত হয়ে ঘুমানো স্বাস্থ্য ও সুন্দর ঘুমের জন্য সহায়ক হতে পারে। ভারতের আয়ুর্বেদ জগত থেকে এমন তত্ত্ব প্রদান করা হয়েছে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘাড়ে-হাত-পায় ব্যথা অনুভব করেন অনেকে। হয়তো রাতে বেকায়দায় ঘুমিয়ে পড়েছিলেন বলে। তাই কীভাবে ঘুমোচ্ছেন তা অত্যন্ত গরুত্বপূর্ণ হয়ে যায় জীবনের এ তালিকাতে। সোজা হয়ে শোওয়া সবচেয়ে ভালো বলে ধরে নেওয়া হতো বহু দিন ধরে। কিন্তু হালের গবেষণা বলছে, এক পাশ ফিরে শোওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে অনেক বেশি ভালো। ঠিক মতো শুতে পারলে পিঠে-কোমরে ব্যথা কমে যেতে পারে। যাদের নাক ডাকার সমস্যা আছে সেটাও অনেকটা কমে যায়।

যাদের ওবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো জটিল অসুখ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও নাক ডাকা একটি প্রধান উপসর্গ। এই রোগ থাকলে হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন বা ডায়াবিটিসের সমস্যাও তৈরি হতে পারে। এক পাশ ফিরে শুলে এ রোগের আশঙ্কা কমবে।

একদিকে ঘুমনোর ঝুঁকি কী কী

পিঠ আর কোমরের ব্যথা কমলেও একদিকে সারাক্ষণ শুয়ে থাকলে শরীরের অন্য অংশে ব্যথা হয়ে যেতে পারে। তাই মাঝে মাঝে পাশ বদল করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে থুতনি যেন বুকের কাছে ঝুঁকে না যায়। তা হলে ঘাড়ে বা গলায় ব্যথা হতে পারে। খুব নরম বালিশ বা গদিতে তাই না শোওয়াই ভালো।

কোন দিকে শুলে উপকার বেশি

ঘুমের মধ্যে পাশ ফেরা বা বদল করা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে বাঁ দিকে শোওয়া শরীরের পক্ষে বেশি উপকারি বলে ধরে নেওয়া হয়। কারণ এ ভাবে শুলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ বেশি খোলামেলা ভাবে শ্বাস নিতে পারে এবং শরীর থেকে যাবতীয় বিষাক্ত পদার্থ সহজেই বেরিয়ে যেতে পারে। পেটের উপর ভর দিয়ে শুলে শরীরের বিভিন্ন প্রতঙ্গে সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে।

ঘুমোতে যাওয়ার আগে যা খেয়াল রাখতে হবে

১। একটা মোটামুটি শক্ত গদি ব্যবহার করুন। খুব শক্ত হলেও ঘুম আসতে অসুবিধা হবে। এক্ষেত্রে একটা শক্ত বালিশ নিতে পারেন।

২। বাঁ দিকে করে ঘুমনোর চেষ্টা করুন। কান, ঘার যেন সমান্তরাল থাকে। থুতনি যেন বুকের দিকে ঝুঁকে না যায়।

৩। হাত মুখের কাছ থেকে সরিয়ে শরীরের পাশে রাখুন।

৪। দু’পায়ের ফাঁকে একটা বালিশ নিন। যাতে দুই হাঁটু লেগে না যায়।

৫। হাটু সামান্য মুড়ে শুলে শিরদাঁড়ায় বেশি টান পড়বে না।

৬. গর্ভবতী নারীদের জন্য উত্তম বাম কাত হয়ে ঘুমানো। গর্ভবতী মায়েদের শুধু রক্ত সঞ্চালনই বাড়ে না, এতে পিঠের ওপর তৈরি হওয়া চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং জরায়ু যকৃতের সাথে চেপে ধরে না। আর এতে জরায়ু, কিডনি ও গর্ভাশয়ে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। আর এজন্য চিকিৎসকরা গর্ভবতী নারীদের ঘুমের অধিকাংশ সময় বাম কাত হয়ে শোওয়ার জন্য পরামর্শ দেন।

৭. হৃদপিন্ডের প্রদাহ কমায়: ক্লিনিক্যাল গ্যাস্ট্রো অ্যান্ট্রোলজির জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাম কাত হয়ে ঘুমালে এসিড রিফ্লক্স (এসিডের বিপরীতমুখী প্রবাহ) হ্রাস পায়। কারণ আমাদের পাকস্থলি দেহের বাম পাশে থাকে। আর ডান কাত হয়ে ঘুমালে এ লক্ষণ বেড়ে যেতে পারে। আর এ জন্য হৃদপ্রদাহের ব্যক্তিদের জন্য অন্তত ১০ মিনিট বাম কাত হয়ে শোওয়া উচিত।

৮. হজম সক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
খাদ্যবস্তু হজমের জন্য বাম কাত হয়ে ঘুমানো ডান কাত হয়ে ঘুমানোর চেয়ে সহায়ক। কারণ পাকস্থলির পজিশন ও মধ্যাকর্ষণ এ ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। বিশেষকরে, বাম কাত হয়ে ঘুমালে খাদ্যবর্জ্য বৃহদান্ত্র থেকে ডিসেন্ডিং কোলনের দিকে সহজে যেতে পারে। আমাদের পেটের বাম দিকে থাকে পাকস্থলি ও অগ্ন্যাশয়। বাম কাত হয়ে ঘুমালে পাকস্থলি ও অগ্ন্যাশয় থেকে এনজাইম বা পাচক রস নি:সরণে ভূমিকা রাখে।

বিশেষ সতর্কতা:
তবে সতর্ক থাকার প্রয়োজনও রয়েছে। যাদের হৃদরোগ, গ্লুকোমা, শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত কারণে ঘুম ভঙ্গের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য বাম কাত হয়ে ঘুমানো হিতে বিপরীত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি।

সূত্র: আনন্দবাজার

আরো দেখুন
error: Content is protected !!