কুমিল্লায় এসএসসি পরীক্ষার্থী ইমন হত্যা মামলার চার আসামী গ্রেফতার
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার এসএসসি পরীক্ষার্থী ইখতেখার হাসান ইমন(১৮) হত্যা মামলার এজাহার নামীয় প্রথম ৩ জনসহ মোট ৪ আসামীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১, সিপিসি-২ সদস্যরা।
ঘটনার সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম ইখতেখার হাসান ইমনের সাথে আসামী মোঃ নাছির উদ্দিন মুরগা নাছির(৪০) ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো।
উক্ত বিরোধের কারণে আসামী মোঃ নাছির উদ্দিন মুরগা নাছির ও তার সহযোগীরা প্রায় ভিকটিম ইখতেখার হাসান ইমনকে সময় সুযোগ হলে দেখে নিবে বলে হুমকি দিত।
গত ২০ ডিসেম্বর দাউদকান্দি মডেল থানাধীন মোহাম্মদপুর (পশ্চিম) ইউনিয়নের মালাখালা গ্রামের নারিকেলতলা জামে মসজিদের সামনে নারিকেলতলা নূরানী মাদ্রাসার বাৎসরিক ওয়াজ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত তারিখ বিকাল সাড়ে ৪ টার সময় ভিকটিম ইখতেখার হাসান ইমন বাড়ী হতে বের হয়ে ওয়াজ ও দোয়া মাহফিলে অংশ গ্রহণের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে।
সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৫ টার সময় ভিকটিম নিজ এলাকা পিপইয়াকান্দি হতে মালাখালা গ্রামের নারিকেলতলা জামে মসজিদের সামনে ওয়াজস্থলে আসলে আসামী মোঃ নাছির উদ্দিন মুরগা নাছির তাকে দেখতে পেয়ে বিষয়টি তার সকল সহযোগীদের অবগত করে তাদের একত্রিত করতে থাকে এবং ভিকটিম ইখতেখার হাসান ইমনকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
আসামী মোঃ নাছির উদ্দিন মুরগা নাছির ও তার সহযোগীরা অতর্কিতভাবে ভিকটিম ইখতেখার হাসান ইমনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং এক নাম্বার আসামী মোঃ নাছির উদ্দিন মুরগা নাছির তার হাতে থাকা ধারালো সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে পিছে থেকে ভিকটিম ইখতেখার হাসান ইমনকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার পিঠের ডান পাশে ঘাই মেরে গুরুতর জখম করে।
একই সাথে মোঃ নাছির উদ্দিন মুরগা নাছিরের সহযোগী দুই নাম্বার আসামী ইয়াছিন(২২) তার হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে ভিকটিমকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার বাম হাতের নিচে ঘাই মেরে গুরুতর জখম করে।
তিন নাম্বার আসামী হৃদয়(২৩) তার হাতে থাকা ধারালো ছেনি দিয়ে ভিকটিমকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার বাম হাতের উপরে পোচ দিয়ে গুরুতর জখম করে এবং পাঁচ নাম্বর আসামী মাইনুদ্দিন(১৮)সহ আরো ১৫/২০জন লোহার রড ও লাঠি সোঠা দিয়ে ভিকটিমকে এলোপাথারী মারধর করে মাটিতে ফেলে রেখে যায়।
পরবর্তীতে সিএনজি যোগে স্থানীয় জনতা ভিকটিম ইখতেখার হাসান ইমনকে আশংকা জনক অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, দাউদকান্দি, কুমিল্লায় নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার ভিকটিমের অবস্থা আশংকাজনক দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করলে ভিকটিমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেন।
সেখানে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় গত ২০ ডিসেম্বর রাত পৌণে ১০ টার সময় কর্তব্যরত ডাক্তার ভিকটিম ইখতেখার হাসান ইমনকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরবর্তীতে ২২ ডিসেম্বর ভিকটিমের চাচা জামাল(৪০) বাদী হয়ে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানায় ১২ জন এজাহারভূক্ত ও অজ্ঞাতনামা ১০/১৫ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর থেকেই আসামীরা পলাতক ছিল।
উক্ত নৃশংস হত্যার ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে খুব অল্প সময়ের মধ্যে তা ভাইরাল হয় এবং এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই নৃশংস হত্যাকান্ডের বিষয়টি জানতে পেরে র্যাব-১১, সিপিসি-২ তাৎক্ষনিক ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং দ্রুত আসামীদের গ্রেফতারের নিমিত্তে মাঠ পর্যায়ে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়।
মামলা লিপিবদ্ধ হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ২২ ডিসেম্বর ভোর রাত হতে দিনব্যাপী কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানাধীন বিভিন্ন গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার মালাখালা গ্রামের মৃত আজগর আলীর ছেলে ও এক নাম্বার এজাহারভূক্ত আসামী মোঃ নাছির উদ্দিন মুরগা নাছির, একই গ্রামের আঃ মান্নান এর ছেলেও দুই নাম্বার এজাহারভূক্ত আসামী ইয়াছিন ও বশির এর ছেলে ও তিন নাম্বার এজাহারভূক্ত আসামী হৃদয় এবং একই থানার নারিকেলতলা গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলেও পাঁচনাম্বার এজাহারভূক্ত আসামী মাইনুদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে দাউদকান্দি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
র্যাব-১১, সিপিসি-২ এর কোম্পানী অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।