সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার পথে মাফিয়াদের গুলি, বাংলাদেশি যুবক নিহত ৩
আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় লিবিয়ায় ইঞ্জিনচালিত নৌকায় মাফিয়াদের গুলিতে তিন বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের আদিত্যপুর গ্রামে তাদের মৃত্যুর খবর পৌঁছালে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে। এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না স্বজনরা।
নিহতরা হলেন মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের আদিত্যপুর গ্রামের হাজী মো. তৈয়ব আলী খানের ছেলে ইমরান খান, রাজৈর উপজেলার দুর্গাবদ্দী গ্রামের ইমারাত তালুকদারের ছেলে মুন্না তালুকদার, একই উপজেলার ঘোষলাকান্দি গ্রামের কুদ্দুস শেখের ছেলে বায়েজিত শেখ।
স্বজনরা জানান, একটু ভালো থাকতে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত ৮ অক্টোবর বাড়ি ছাড়েন ইমরান খান। সরাসরি ইতালি পৌঁছে দেয়া হবে এমন শর্তে প্রতিবেশী ও মানবপাচারচক্রের সদস্য শিপন খানের সঙ্গে চুক্তি হয় ২২ লাখ টাকায়। কিন্তু ইমরানকে লিবিয়ায় আটকে নির্যাতন করে পরিবার থেকে আরও ১৮ লাখ টাকা আদায় করা হয়।
এরপর পহেলা নভেম্বর লিবিয়া থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালির উদ্দেশ্যে যাত্রা করলে ভূমধ্যসাগরে মাফিয়ার গুলিতে মারা যান ইমরান। পরে মঙ্গলবার ইমরানের মৃত্যুর খবর পায় পরিবার।
শুধু ইমরান নয়, একইভাবে মাফিয়াদের গুলিতে ওইদিন মারা যান মুন্না তালুকদার ও বায়েজিত শেখ। তাদের মরদেহ ফেলে দেয়া হয় সাগরে। ঘটনা জানাজানি হলে ঘরে তালা ঝুলিয়ে লাপাত্তা দালাল চক্রের পরিবারের লোকজন।
তবে, দালাল শিপনের স্বজনদের দাবি, এই ঘটনায় জড়িত নন শিপন। জোর করে কারই পাসপোর্ট নেননি তিনি।
অভিযোগ আছে, কয়েক বছর ধরে লিবিয়ায় অবস্থান করছেন শিপন। এরপর আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে এলাকার যুবকদের খুব সহজে ইতালি নেয়ার প্রলোভন দেখান তিনি। এর আগেও মৃত্যুর মত এমন ঘটনা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে অভিযুক্ত।
ইমরানের বড়বোন ফাতেমা আক্তার বলেন, শিপন দালাল আমার ভাইকে মেরে ফেলছেন। এই দালালের কঠিন বিচার চাই। আমার ভাইয়ের মরদেহটি যেন একবারের জন্য হলেও দেখতে পাই, সেই পদক্ষেপ নেয়ার সরকারের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।
ইমরানের আত্মীয় সাজ্জাদ মাতুব্বর বলেন, ‘দালাল শিপনের হাত অনেক লম্বা। এর আগেও একইভাবে কয়েকজন যুবকের মৃত্যু হয়েছে। টাকা দিয়ে সবাইকে ম্যানেজ করেন তিনি। শিপন খানের কোনো বিচার না হওয়ায় এই অপরাধ থামছেই না। আমরা দালাল শিপন ও তার সহযোগীদের কঠিন বিচার দাবি করছি।’
নিহত মুন্নার খালা খাদিজা আক্তার বলেন, ‘দালাল শিপনকে ধারদেনা করে ৪০ লাখ টাকা দিয়েছি। আমরা ভাগিনার মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। এই দালালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। পাশাপাশি মুন্নার মরদেহ দেশে ফিরিতে আনতে সরকারের কাছে আকুতি জানাচ্ছি।’
বায়েজিতের বাবা কুদ্দুস শেখ বলেন, ‘আমার ছেলের এমন মৃত্যু কীভাবে মেনে নেবো? দালাল প্রথমে স্বীকার যাননি, পরে লিবিয়া থেকে আমাদের জানানো হয়। এই দালাল এখন লাপাত্তা। এতগুলো টাকা দিয়ে ছেলের এমন মৃত্যুর শোক কীভাবে সইবো?
দালাল শিপনের চাচি সেতারা বেগম বলেন, ‘শিপন অনেক মানুষকেই নিয়েছে। কিন্তু গুলিতে কেউ মারা গেছে, বা শিপন কাউকে গুলি করে মেরে ফেলেছে এই ঘটনা আমরা এর আগে কখনই কিছুই জানি না। শিপন লিবিয়ায় অবস্থান করছে। ওর পরিবারের লোকজনও এখন বাড়িতে নাই। ঘরে তালা ঝুলছে। আমরা এর বেশি কিছু বলতে পারবো না।’
এ দিকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়ে মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম জানান, লিবিয়ায় গুলিতে তিন যুবকের মৃত্যুর খবর বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি।
এই ঘটনায় নিহতের পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দালালদের কোনোপ্রকারেই ছাড় দেয়া হবে না।