গোটা পৃথিবীর বোঝা নিজের ঘাড়ে নেবেন না
ধর্ম ও জীবন ডেস্ক।।
হতাশমুক্ত জীবন
কিছু মানুষের অভ্যন্তরীণ বিবাদ এমন তীব্র আকার ধরে যে তা যুদ্ধে রূপ নেয়। এ যুদ্ধ যুদ্ধের ময়দানে হয় না; বরং তাদের শোয়ার ঘরে, অফিসে ও বাড়িতে সংঘটিত হয়।
এসব মানুষ সব কিছুতে হতাশ হয়ে পড়ে। মুদ্রাস্ফীতি ঘটলে এরা রাগান্বিত হয়ে যায়। বৃষ্টি হতে দেরি হলে অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠে, আর যখন তাদের মুদ্রার মান হ্রাস পেয়ে যায়, তখন তারা অতিশয় ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। কারণ পৃথিবীতে যা-ই ঘটুক, তাদের অস্থির, উদ্বিগ্ন ও বিরক্ত করে তোলে। মুনাফিকদের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা যেকোনো শোরগোলকে তাদের বিরুদ্ধে মনে করে।’ (সূরা আল মুনাফিকুন, আয়াত : ৪)
এমন মানুষের প্রতি পরামর্শ হলো, গোটা বিশ্বের বোঝা নিজের ঘাড়ে নেবেন না। যা কিছু ঘটে তার বোঝা ভূমিকেই বহন করতে দিন। কিছু মানুষের আত্মা সব ধরনের ধোঁকা, প্রতারণা ও ভ্রান্ত ধারণাকে স্থান দেয়। ফলে সর্বাপেক্ষা তুচ্ছ বিষয়েও সে কষ্ট পায়। এটা এমন আত্মা, যা তার অধিকারীকে ধ্বংস করবেই।
সুনীতিবান ও সৎপথে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ সংকটে বিচলিত হয় না; বরং সংকট তাদের দৃঢ়প্রত্যয় ও ঈমানকে আরো শক্তিশালী হতে সাহায্য করে। কিন্তু দুর্বল চিত্তদের জন্য বিপরীত অবস্থাটাই সত্য। যখন তারা প্রতিকূল অবস্থা ও সংকটের কবলে পড়ে, তখন তাদের ভয়ের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
বিপর্যয়ের সময় একটি সাহসী আত্মার চেয়ে বেশি উপকারী আর কোনো কিছু নেই। যার এমন আত্মা আছে সে-ই প্রশান্তমনা। তার দৃঢ় বিশ্বাস ও শীতল স্নায়ু (প্রশান্ত মন ও ঠাণ্ডা মাথা) আছে।
অন্যদিকে কাপুরুষ ও ভীতরা কোনো নির্দিষ্ট দিনের আসন্ন বিপদের আশঙ্কা ও পূর্বানুভূতিতে নিজেদের কয়েক দফা জবাই করে। তাই আপনি যদি আপনার জন্য একটি সুপ্রতিষ্ঠিত জীবন আশা করেন, তাহলে সব অবস্থা সাহস ও অধ্যবসায়ের সঙ্গে মোকাবেলা করুন। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনের নির্দেশনা হলো—‘আর যারা দৃঢ় বিশ্বাসী নয়, তারা যেন আপনাকে বিচলিত না করে।’ (সূরা রুম, আয়াত : ৬০)
অন্য আয়াতে এসেছে, ‘তাদের ষড়যন্ত্রে আপনি মনঃক্ষুণ্ন হবেন না।’ (সূরা নাহল, আয়াত : ১২৭)
আপনার পরিবেশের চেয়েও বেশি দৃঢ়প্রত্যয়ী হোন এবং দুর্বিপাকের করাল থাবার চেয়েও বেশি হিংস্র হোন। দুর্বল চিত্তধারীদের আল্লাহ করুণা করুন।
কেননা, এমন কত ঘটনা ঘটে যে তারা সামান্যতম ভূকম্পনেও বিচলিত হয়ে যায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর অবশ্যই আপনি তাদের জীবনের প্রতি সব মানুষের চেয়ে বেশি লোভী দেখতে পাবেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৯৬)।
প্রত্যয়ীদের সম্পর্কে বলছি যে তারা তাদের রবের সাহায্যপ্রাপ্ত হয়ে থাকে ও তারা তাঁর প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে দৃঢ়প্রত্যয়ী।
(ড. আয়েজ আল-কারনি রচিত লা তাহজান অবলম্বনে)