২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আবারও বাড়ছে ডিমের দা’ম

নিজস্ব প্রতিবেদক।।
আগস্টে ডিমের ডজন ১৫৫ টাকা ছাড়িয়ে যায়। চলতি মাসে দাম কমে ১২০ টাকায় নামলেও তা আবার ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করেছে। একটু করে দাম বেড়ে দুই সপ্তাহে ডিমের ডজন ছুঁয়েছে ১৪০ টাকা।

গত বছরের অক্টোবরে ডিমের ডজন ৯০ টাকা থেকে বেড়ে হয় ১১০ টাকা। ওই সময় ব্যবসায়ীরা জানান, করোনার সময় ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে।

ফলে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন কমে গেছে। বাজারে মুরগি ও ডিমের চাহিদা বেশি থাকলেও ওই পরিমাণ সরবরাহ নেই। ফলে দাম বাড়ছে।

চলতি বছরের মে মাস থেকে দাম আরও বাড়তে শুরু করে। ৫ আগস্ট বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে এবং ভর্তুকি কমাতে সরকার সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ালে ডিমের দাম লাফিয়ে বেড়ে যায়।

টিসিবির হিসাব অনুযায়ী, ওই সময় ফার্মের মুরগির ডিমের হালি বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়, যা তারও এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৩ থেকে ৪৭ টাকা। এক মাস আগে ছিল ৩৮ থেকে ৪০ টাকা হালি।

আর এক বছর আগে ছিল ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বাড়ে ২০ শতাংশের মতো, এক মাসে এক-তৃতীয়াংশ এবং এক বছরে বাড়ে ৫৪ শতাংশের বেশি।

ডিমের এমন দাম বৃদ্ধিতে ক্রেতার অসন্তোষের মধ্যে ডিম আমদানির চিন্তা করে সরকার। ২৯ আগস্ট সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এ কথা জানান।

ওইদিনই ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এরপর ডিমের দাম কিছুটা কমে আসে।

টিসিবির হিসাবমতে, গত সপ্তাহে ডিমের হালি ছিল ৪০ থেকে ৪৩ টাকা। আর শুক্রবারে বিক্রি হয়েছে ৪৩ থেকে ৪৭ টাকায়।

কারওয়ান বাজারের ভাই ভাই এগ শপের মালিক সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, প্রতি হালি সাদা ও লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। আর প্রতি ডজনের দাম পড়ছে ১৩৫ টাকা।

দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তিনি গত দুই দিনের বৃষ্টিকে দুষলেন। এই বিক্রেতা বলেন, ‘বৃষ্টি হলে রাস্তায় গাড়ি বের হতে চায় না। নানা রকম দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। এসব কারণে ডিমের সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।’

ডিমের দাম দুই সপ্তাহ ধরে একটু একটু করে বাড়ছে বলে জানান বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম। বলেন, ‘দুই সপ্তাহ থেকেই অল্প অল্প করে দাম বাড়ছে। ডিমের ডজন ১৩০ টাকায় নেমেছিল। সেখান থেকে আবার বাড়ছে।’

কাঁঠালবাগানের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আবার ডিমের দাম আগের জায়গায় যাওয়ার জন্য লাফাচ্ছে। এই কয়েক দিনেই হালিতে ৫-৬ টাকা বেড়েছে।’

মাংসের দাম বৃদ্ধি:
গরু, খাসি ও সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। গত সপ্তাহেও প্রতি কেজি খাসির মাংস ছিল ৯০০ টাকার মধ্যে, শুক্রবার তা বিক্রি হয়েছে ৯৫০ থেকে ১ হাজার টাকায়। আর গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭০০ টাকা কেজি দরে, যার দাম ছিল ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা। বিক্রেতা রিফাত বলেন, ‘সব কিছুর দাম বাড়ছে, হের লাইগ্যা দাম বাড়ছে।’

আরেক বিক্রেতা আমজাদ বলেন, ‘পশুর আমদানি কম, বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, তাই দাম বেশি।’
কেজিতে ৪০ টাকা বেড়েছে সোনালি মুরগির দাম। সিদ্দিক ব্রয়লার হাউসের বিক্রেতা সোহাগ বলেন, ‘সোনালি মুরগি কেজিতে ৩০-৪০ টাকা বাড়ছে। গত সপ্তাহে দাম ছিল ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা, আজ বিক্রি হইতাছে ৩৩০ টাকা কেজি।’

এ ছাড়া প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৭৫ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা, লাল লেয়ার মুরগি ২৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

সোহাগ বলেন, ‘বিদ্যুতের সরবরাহ কম। এসব মুরগির খামারে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ লাগে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যবসায়ীরা মুরগি উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। আর উৎপাদন খরচও বেড়েছে। দামও বাড়ছে।’

চালের দামে মতভেদ:
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্যমতে, প্রতি কেজি সরু চালের কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬২ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে।

টিসিবি বলছে, সপ্তাহের ব্যবধানে দর কমেছে ১ দশমিক ৫২ শতাংশ। তবে বাজার বলছে ভিন্ন কথা। এমনকি বিক্রেতারাও ভিন্ন মত দিয়েছেন।

‘আল্লাহর দান রাইস ভান্ডার’-এর আব্দুল আউয়াল তালুকদার বলেন, ‘চালের দাম কেজিতে ২-১ টাকা বেড়েছে। মিনিকেট ৭৪-৭৫, আটাশ ৫৪-৫৫, নাজিরশাইল রকমভেদে ৮০-৯০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।’

বিপরীত তথ্য দেন হাজি রাইসের মাইন উদ্দিন মানিক। তিনি বলেন, ‘চালের দাম কেজিতে ২-৩ টাকা কমেছে। মিনিকেট ৭৪ টাকা, আগে ছিল ৭৬-৭৭ টাকা, আটাশ ৫৬ টাকা, আগে ছিল ৬০ টাকা, আর নাজিরশাইল ৮৪ থেকে ৮৮ টাকা এবং স্বর্ণা ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

এই দরে চাল বিক্রির কথা জানিয়েছেন তেজগাঁও এলাকার আরিফ জেনারেল স্টোর ও আউয়াল ভ্যারাইটি স্টোরের বিক্রেতারা।

১০ থেকে ১৫ টাকা বাড়তি সবজিতে:
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সবচেয়ে বেশি দামের সবজি গাজর ও টম্যাটো– কেজি ১২০ টাকা। দাম বেড়েছে অন্যান্য সবজিরও। পটল, ঢ্যাঁড়স, কাকরোল, এগুলোর সবই ৫০ টাকা কেজি। কয়েকদিন আগেও এসব সবজির কেজি ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে।

ক্রেতা দিলীপ গোমেজ দাম শুনেই চোখ কপালে তুললেন, ‘সব জিনিসের দাম এত বেশি! ক্যা?’ বিক্রেতার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন।

বিক্রেতা মো. আরিফ বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে দুই দিন থেকে সব সবজির দাম বেড়ে গেছে। বৃষ্টির আগেও কেজিতে ১০ টাকা করে কমে বিক্রি করেছি এসব সবজি। বৃষ্টির শেষ হয়েছে, এর পরেই এমন দাম।’

টম্যাটো ও গাজরের দামের বিষয়ে জানতে চাইলে এই বিক্রেতা বলেন,‘এগুলো চায়না থেকে আসে। এজন্যই দাম বেশি।’

এর কারণ জানতে চাইলে তার কাছে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে ধানমন্ডির বাসিন্দা রাহাত বলেন, ‘এসব গাজর চায়না থেকে আমদানি করা হয়। সারা বছরই পাওয়া যায়। ব্যবসায়ীরা দাম সবসময় এই স্তরেই রাখে আরকি।’

কারওয়ান বাজার ও অন্যান্য বাজার ঘুরে জানা গেছে, সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা। বেড়েছে সোনালী মুরগি, খাসি ও গরুর মাংসের দাম। আর দুই সপ্তাহ ধরে আবারও ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে ডিমের দাম।

বাজারে করলা ও বেগুন কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ধুন্দল ৬০ টাকা, দেশি শশা ৮০ টাকা ও হাইব্রিড শশা ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বৃষ্টিকেই দুষছেন বিক্রেতারা। কারওয়ান বাজারে ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘মাল কম আসলে (আমদানি কমলে) দাম বাড়ে। বৃষ্টির কারণে মাল আসেনি।’

বৃষ্টি হলেই কেন দাম বাড়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির মধ্যে কৃষকরা ফসল তুলে বাজারে আনতে পারেন না। আবার অনেক সময় ফসল নষ্ট হয়। এসব কারণে আমদানি কম হয়, দাম বাড়ে।’
রকমভেদে মরিচের কেজি বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে আলু ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

বিক্রেতা আলীম শেখ জানান, আদার কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। প্রতি কেজির দাম ১৪০ টাকা, যা কয়েক দিন আগেও ১২০ টাকা ছিল। তবে পেঁয়াজ ও রসুন আগের দরেই বেচাকেনা হয়েছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা ও রসুন ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!