করোনার ভয়ভীতি উপেক্ষিত কুমিল্লার ঈদ বাজার
সৈয়দ বদরুদ্দোজা টিপু
দীর্ঘ দেড় মাস পর নারী ক্রেতারা ঘর থেকে বেড়িয়ে আসতে পেড়ে মহা খুশি তারা। সারাদেশে ন্যায়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসকে উপেক্ষা করে মহা আনন্দে নগরীর ব্যস্ততম কান্দিরপাড় এলাকা শপিংমল ও ফুটপাতের দোকানগুলোতে কেনাকাটা করছেন দেদারসে। শারীরিক সুরক্ষার কথা ভুলে গিয়ে একে অপরের গা-ঘেঁষে কেনাকাটায় মগ্ন হয়ে পড়েছেন তারা। দেখে মনে হয় ঈদ উৎসবের আনন্দে ভুলে গেছেন লকডাউনের কথা। ঈদ কেনাকাটায় বেপরোয়া ভিড়। স্বাস্থ্য বিধির নিয়ম কাননকে উপেক্ষা করে ভিড় করা এই ক্রেতাদের মধ্য বেশির ভাগই তরুনী মহিলা।
সকাল থেকে রাত অবধি ব্যস্ততায় বেসামাল শো রুম ও দোকান মালিক কর্মচারিগন। ভিড় নিয়ন্ত্রণ ও যানবাহনের জ্যাম থেকে বাঁচতে গত ২০ শে রমজান থেকে কুমিল্লার কান্দিরপাড় এলাকায়টি যান চলাচল নিষিদ্ধ করেছে জেলা পুলিশ প্রশাসন।
এছাড়া নগরীতে মুভমেন্ট পাস নিয়ে বিধিনিষেধের শুরুতে কড়াকড়ি থাকলে তা এখন আলোচনা থেকে বহু দূরে। এখন মুভমেন্ট পাস চেক করতে দেখা যাচ্ছে না পুলিশকে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এখনো চলছে মুভমেন্ট পাস চেকিং।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, করোনাভীতি উপেক্ষা করেই ঈদ কেনাকাটায় ব্যস্ত নগরীর বিভিন্ন মার্কেটগুলো। বিশেষ করে গতবছর করোনা কারনে অনেকেই ঈদের বাজার করতে পারেনি, তাই এবার জেলার বিভিন্ন উপজেলার থেকে কেনাকাটা করতে ছুটে আসছে নগরীর শপিংমল গুলোতে ।এবার মেয়েদের তৈরি পোশাকের দোকানগুলোতে চলছে তরুণ-তরুণীদের কেনাকাটার ধূম। নগরীর কান্দিরপাড়ের অভিজাত শপিং মল সাত্তার খান কমপ্লেক্স, খন্দকার হক টাওয়ার, ময়নামতি গোল্ডেন টাওয়ার, আনন্দ সিটি সেন্টার, হোসনে আরা ম্যানশন, গণি ভূঁইয়া ম্যানশন, সাইবার ট্রেড, নূর মার্কেট, হিলটন টাওয়ার, রামঘাট এলাকার কুমিল্লা টাওয়ার, রেইস কোর্সের ইস্টার্ন এয়াকুব প্লাজা ও নগরীর নজরুল এভিনিউতে আড়ং, রঙ, বিশ্বরঙ, সাদাকালো, অঞ্জনস, লাকসাম রোডের ইজি, বাদুরতলায় ইনফিনিটি, ক্যাটসআই, কান্দিরপাড়ের ম্যানস্ ওয়ার্ল্ডের শো-রুমেও হরদম জমে ওঠেছে কেনাকাটা।
নগরীর খন্দকার হক টাওয়ারের এক দোকানের মালিক জানান, গত বছর করোনার কারনে আমরা দোকান খুলতে পারিনি, সরকার ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে দোকানপাট খুলে দিসে । গত কয়েক বছরে তুলনায় বেচাকেনা একটি কম। তবে মোটামোটি ভালো বিক্রি হচ্ছে।
সদর দক্ষিন উপজেলা থেকে নগরী হিলটন টাওয়ারে শপিং করতে আসা ফারজানা আক্তার সাথী বলেন ,গত বছরও করোনা কারনে শপিং করতে পারিনি। এবার আম্মুকে নিয়ে অনেক কষ্ট করে সিএনজি করে আসছি শপিং করতে।করোনা হলে আর কি করবো? আমাদের তো শপিং করতে হবে ।
এক্সটাসি দোকানে দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের শার্ট ও গেঞ্জি ৩ হাজার থেকে ৬ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ওকে বুটিকস দোকানে মেয়েদের রকমারি পোশাক এবার বেশ নজর কেড়েছে। এখানে এমএলটি থ্রি-পিস ৪ হাজার ২০০, সাওয়া ৩ হাজার ৫০, ৫ হাজার ২০০ টাকা এবং নিশামনি ফেব্রিক্স দোকানে গুজরাটি, বিনয়সহ বিভিন্ন ব্রান্ডের থ্রি-পিস ৩ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
বোরকা বাজারেও নারীদের বেশ কেনাকাটা চলছে। দুবাই বোরকা হাউজসহ অন্যান্য বোরকা হাউজে আবায়া বোরকা ৭ হাজার ৫০০ টাকা, ইরানী ৬ হাজার ৫০০ টাকা, দুবাই বোরকা ১১ হাজার ৫০০ টাকা ও কাপ্তান বোরকা ৯ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ডিজাইন ও কাপড় অনুসারে ১ হাজার টাকারও বোরকা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন বলেন সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সীমিত পরিসরে সকাল দশটা থেকে রাত আটটা অব্ধি দোকান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো দোকান মালিক সমিতি। কিন্তু কেনাকাটায় মানুষের এই ঢ্ল নামায় পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হচ্ছে না। তবে দোকান মালিক সমিতি স্বাস্থ্য বিধি মানার বিষয়টি মনিটর করছে।
জেলার সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন বলেন, এভাবে অবাধে মার্কেট গুলোতে ভিড় খুবই ঝুকিপূর্ণ। তিনি বলেছেন করোনা প্রতিরোধে ব্যক্তি সচেতনতারা বিকল্প নেই। ঈদের কেনাকাটার চাইতে জীবন বাচানো জরুরি।
এই দিকে করোনার মাঝেই এভাবে শপিং করতে আসা গৃহিনি মুনমুন জানান কখন আবার শপিংমল বন্ধ হয়ে যায় এই আতংকে তাড়াহুড়ো করেই কেনা করছেন।
উল্লেখ্য ৬০ লক্ষ জনবসতির কুমিল্লার ১৭ উপজেলা ছাড়াও আশপাশের জেলা গুলো থেকেও এখানে মানুষ কেনাকাটা করতে আসে।