কুমিল্লায় অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য নিহতের ঘটনায় ঘাতক বাস চালক গ্রেফতার
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানার নাজিরা বাজার এলাকায় তিসা পরিবহনের ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট মোঃ দিদার হোসেন (৩৮)এর নির্মম মৃত্যুর ঘটনায় ঘাতক বাস চালক মোঃ বাবুল (৩০)কে সনাক্ত ও দেবীদ্বার থানার দক্ষিন মিল্লাবাড়ী এলাকা থেকে র্যাব-১১, সিপিসি-২ কর্তৃক গ্রেফতার।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীসহ বেশ কয়েকটি স্থানে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি হয়।
এ প্রেক্ষিতে র্যাব অতিদ্রুততার সাথে জড়িত ঘাতক পরিবহন চালক ও সংশ্লিষ্ট অপরাধীদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানাযায় গত ১০ মার্চ ২০২২ তারিখ সকালে কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানাধীন নাজিরা বাজার এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রামমুখী লেনে মহাসড়কের উপর তিসা পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রন হারিয়ে একটি মোটরসাইকেলকে পিছন থেকে ধাক্কা দিলে মোটরসাইকেল চালক অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট মোঃ দিদার হোসেন(৩৮) গুরুতর আহত হয়।
তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরন করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।
দূর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির বিস্তারিত পরিচয়ঃ বি-বাড়িয়া জেলার জেলার নবীনগর থানার শিবপুর গ্রামের সফিকুল ইসলামের ছেলে মোঃ দিদার হোসেন (৩৮)। দূর্ঘটনা পরবর্তীতে ঘাতক ড্রাইভার বাসটি রেখে পালিয়ে যায়।
উক্ত দূর্ঘটনায় ময়নামতি হাইওয়ে থানার এএসআই মোঃ আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানায় সড়ক ও পরিবহন আইন ২০১৮ এর ৯৮/১০৫ ধারায় একটিমামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-১২ তারিখ ১০/০৩/২০২২ইং।
এরই প্রেক্ষিতে র্যাব একটি ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। গোয়েন্দা নজরদারী ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় র্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লা অতিদ্রুত ঘাতক চালককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লা এর আভিযানিক দল ১৩ মার্চ ২০২২ তারিখ দুপুরে কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার থানার দক্ষিন মিল্লাবাড়ী এলাকা হতে ঘাতক বাস চালক মোঃ বাবুল (৩০), পিতা-মৃত ইদ্রিস মিয়া, গ্রাম-দক্ষিন মিল্লাবাড়ী, থানা-দেবীদ্বার, জেলা-কুমিল্লাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী বর্ণিত সড়ক র্দর্ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেন।
গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ বাবুল (৩০) স্বাক্ষরতা সম্পন্ন একজন ব্যক্তি যিনি কোন প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহন করেনি। সে বিগত বার বছর যাবৎ কুমিল্লা ও ঢাকায় ড্রাইভিং পেশায় নিয়োজিত আছে। ড্রাইভিং পেশা শুরুর পূর্বে সে ছয় মাস বাসের হেলপার ছিল এবং পরবর্তীতে কোন প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ ছাড়াই সে বাসের চালক হিসেবে কাজ শুরু করে।
তার বার বছরের ড্রাইভিং পেশায় প্রথম সাত বছর তার কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না এবং পরবর্তীতে সে ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করে।
গ্রেফতারকৃত মোঃ বাবুল(৩০), প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, গত ১০ মার্চ ২০২২ তারিখ সকাল ০৬:০০ ঘটিকায় যাত্রী নিয়ে বি-বাড়িয়া জেলার নবীনগর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করে। ঘটনার পূর্বের দিন রাতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নেওয়ার কারনে তার চোখে ও মুখে ক্লান্তি ছিল।
এছাড়া অতিদ্রুত ঢাকা পৌছাতে পারলে যথেষ্ঠ বিশ্রাম নেওয়া যাবে এবং পুনরায় আরেকটি ট্রিপ নিয়ে দিনের মধ্যেই বি-বাড়িয়ায় ফেরত আসা যাবে তাই গ্রেফতারকৃত আসামী প্রতিযোগিতামূলক ড্রাইভিং এ মনোনিবেশ করে।
ক্লান্তিহীন গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত গতি ও অভিজ্ঞতার অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানাধীন নাজিরা বাজার এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রামমুখী লেনে মহাসড়কে পূর্ব থেকে ইউটার্ন করার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে দাড়িয়ে থাকা মোঃ দিদার হোসেন (৩৮)কে দেখেও ঘাতক চালক বাসটি ব্রেক করে থামাতে পারেনি।
গাড়ীর অধিক গতি থাকার কারণে কাছাকাছি এসে লক্ষ্য করলেও গাড়িটি সে নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে দূর্ঘটনাটি সংঘটিত করে।
পরবর্তীতে সে স্থানীয় লোকজনের ভয়ে তার চালানো দূর্ঘটনা কবলিত বাসটি রেখে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পলায়ন করে এবং চান্দিনা থানাধীন এলাকার একটি ফার্মেসিতে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহন করে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঘাতক চালক নিজের মুঠোফোনটি বন্ধ করে দিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়।
উক্ত বিষয়ে গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাকে কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন।