২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুমিল্লা চান্দিনায় ভাতিজাকে ফাঁসাতে মেয়েকে হত্যা, পরে হামলার নাটক

নিজস্ব প্রতিনিধি।।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভীর জানান, সাত শতক জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ভাতিজাদের ফাঁসাতে নিজের মেয়েকে হত্যার পরিকল্পনা করেন সোলেমান।

সে অনুযায়ী ঘটনার আগের দিন স্ত্রীকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেন। এরপর শুক্রবার কয়েকজন প্রতিবেশীকে নিয়ে মেয়ে সালমাকে ঘরেই শ্বাসরোধে হত্যা করেন তিনি। মরদেহ পুকুরপারে নিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয়।

জমি নিয়ে বিরোধে ভাতিজাদের ফাঁসাতে মেয়েকে হত্যা করেছেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন কুমিল্লার চান্দিনার সোলেমান মিয়া। পরে নিজের ওপর হামলার নাটক সাজিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্তের চেষ্টা করেছেন তিনি।

চান্দিনায় মাদ্রাসাছাত্রীকে গলাকেটে হত্যার ঘটনার তদন্ত শেষে একথা জানিয়েছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম তানভীর আহমেদ। তিনি জানান, হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জেলা পুলিশ কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলনে তানভীর বলেন, ভাতিজাদের বিরুদ্ধে মেয়ে সালমা আক্তারকে খুনের অভিযোগে মামলা করেন সোলেমান।

তবে জিজ্ঞাসাবাদের সময় এজাহারের সঙ্গে তার বক্তব্যের গড়মিল পাওয়া যায়। এরপরই তদন্তের মোড় ঘুরে যায়। এক পর্যায়ে তিনি নিজেই মেয়েকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন।

উপজেলার গল্লাই ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামে গত শুক্রবার রাতে ১৪ বছরের সালমা আক্তারকে গলাকেটে হত্যা করা হয়। পরদিন সকালে বাড়ির পাশের পুকুরপাড় থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় নিজের ভাতিজাদের নাম উল্লেখ করে মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সালমার বাবা সোলেমান। সে সময় সোলেমান বলেন, এলাকার পারিবারিক সাত শতক জমি নিয়ে ভাতিজাদের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব চলছিল। এর জেরে তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে।

এ ঘটনার তিন দিন পর সোলেমানের ওপরও হামলা হয় বলে পুলিশকে জানানো হয়। গলায় জখম নিয়ে সোলেমান ভর্তি হন কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভীর জানান, বছরখানেক আগে সোলামান মিয়ার সঙ্গে সাত শতক জমি নিয়ে তার ভাতিজা শাহ আলম এবং শাহ কামালের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ নিয়ে একাধিকবার সালিশও হয়। পরে দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি মামলা করেন।

এর জেরে ভাতিজাদের ফাঁসাতে নিজের মেয়েকে হত্যার পরিকল্পনা করেন সোলেমান। সে অনুযায়ী ঘটনার আগের দিন স্ত্রীকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেন। এরপর শুক্রবার আত্মীয় আব্দুর রহমান ও কয়েকজন প্রতিবেশীকে নিয়ে মেয়ে সালমাকে ঘরেই শ্বাসরোধে হত্যা করেন তিনি। মরদেহ পুকুরপাড়ে ফেলে ক্ষতবিক্ষত করা হয়।

মামলার তদন্তের সময় তার সহযোগীদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিলে সন্দেহ দূর করতে নিজেকে জখম করেন সোলেমান। নিজেই ভর্তি হন হাসপাতালে। পরে পুলিশকে জানান, তার ওপর হামলা হয়েছে।

তানভীর জানান, তদন্তে সাক্ষীর সাক্ষ্য, আসামিদের অবস্থান এবং বাদীর এজাহারের সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের কথায় গড়মিল থাকায় পুলিশের সন্দেহ হয়।

এরপর জিজ্ঞাসাবাদে বাদীর আত্মীয় আব্দুর রহমান ও প্রতিবেশী মো. খলিল সালমাকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন। এর পর হাসপাতালে ভর্তি সোলেমানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এক পর্যায়ে তিনি পুরো বিষয়টি স্বীকার করেন।

তানভীর আরও জানান, এরপর বুধবার বিকালে হত্যা মামলায় আব্দুর রহমান ও খলিলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাদের বৃহস্পতিবার জ্যেষ্ঠ বিচারক হাকিম-২ আদালতে তোলা হলে সেখানে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তা রেকর্ড শেষে তাদের কারাগারে পাঠান বিচারক ইরফানুল হক চৌধুরী।

সোলেমান সুস্থ হলে তাকেও গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!