২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাহাড়ি সাপের আতঙ্কে আনসার সদস্যদের জীবনযাপন

কুবি প্রতিনিধি।।
বৃষ্টি এলে টিনের অসংখ্য ছিদ্র দিয়ে অনবরত পড়তে থাকে পানি, কাদায় মাখামাখি হয়ে যায় মেঝে। দেয়ালেও ধরেছে ফাটল। পাহাড়ী পাহাড় সাপ ও নানা ধরণের পোকামাকড়ের আতঙ্কও রয়েছে। আবাসনের জন্য নির্ধারিত টিনশেডের ৩টি রুমে বর্ষা এলেই যেন ভোগান্তি চরমে উঠে। এসব নানান সমস্যার মধ্য দিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আনসার সদস্যরা।আনসার সদস্যদের অভিযোগ, “প্রতিবার বর্ষা এলেই এসব সমস্যার কথা জানানো হলেও তাদের ভোগান্তি লাগবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে নেওয়া হয়নি আজও কোনো ব্যবস্থা। আশ্বাসেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে আনসার সদস্যদের।”

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন মোট ২৯ জন আনসার সদস্য। কাজী নজরুল ইসলাম হলের পূর্ব পাশে টিনশেডের ৩টি রুম।

পাশাপাশি ৩টি রুমে গাদাগাদি করে থাকেন ১৯ জন। রুমগুলোর উপরে থাকা টিনে ছিদ্রের অভাব নেই। বর্ষায় বৃষ্টির পানি থেকে বাঁচতে ছিদ্রের মুখে বোতল কিংবা পলিথিন বেঁধে দিয়েছেন আনসার সদস্যরা।

তারপরেও বৃষ্টির পানিতে মেঝেতে ইট-বালি-কাদায় মাখামাখি হয়ে সার্বক্ষণিক স্যাঁতসেঁতে হয়ে থাকে। ইটের গাঁথুনি দেয়া দেয়ালগুলোতেও প্যালেস্তরা নেই। এরই মধ্যে কয়েকটি স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল।

দায়িত্ব পালনকারী প্রতিষ্ঠানেই আনসারদের থাকার ব্যবস্থার কথা থাকলেও আনসারদের বাকি ১০ জনের জন্য ক্যাফেটেরিয়ার পাশে মাত্র একটি কক্ষ বরাদ্দ রয়েছে। সেখানে গাদাগাদি করে থাকেন আনসার সদস্যরা।

এ ঘরটি মূলত অন্য একটি প্রকল্পের শ্রমিক শেড ছিল। প্রকল্প শেষে বসবাস অনুপযোগী এ ঘরেই আনসারদের থাকার ব্যবস্থা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

অন্যদিকে দায়সারাভাবে করা অনিরাপদ বিদ্যুতের লাইনেও যেকোনো মূহুর্তে ঘটতে পারে দূর্ঘটনা। তাছাড়া রুম ঘেষেই পাহাড়ি টিলা হওয়ায় পাহাড়ী সাপেরও হয় নিত্য আনাগোনা। বসবাস অনুপযোগী এসব কক্ষেই দিনের পর দিন বসবাস করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসাররা।

এসব সমস্যা নিয়ে প্রশাসনের কাছে একাধিকবার মৌখিক ও লিখিতভাবে আবেদন জানানো হয়। তবে এর বিপরীতে গতবছর শুধুমাত্র টিনে পুডিং দিয়েই দায় সারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপরে আবারও আবেদন জানালে আশ্বাস ছাড়া কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এসব বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আনসার সদস্যরা।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘আনসারদের থাকার এতো দূরাবস্থা এটা তো আমাদের জানাতে হবে। আমি বিষয়টি লিখে রাখলাম। এটা নিয়ে ভিসি স্যারের সাথে আমি আলোচনা করবো।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আনসার সদস্য জানান, এখানে আমাদেরকে অমানুষের মতো বসবাস করতে হচ্ছে। এটা কোনভাবেই থাকার উপযোগী নয়। আমরা একাধিকবার প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু এর কোন সমাধান আমরা পাইনি। আমরা অসহায়। অন্য কোথাও আনসার সদস্যদের এতা কষ্টে থাকতে হয়না।

আনসারদের সহকারী প্লাটুন কমান্ডার মো. বাচ্চু বলেন, আমাদের এ কক্ষগুলো একেবারেই থাকার অনুপযোগী। প্রশাসনকে আমরা অবহিত করেছি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ছাদেক হোসেন মজুমদার বলেন, টিন শেডটাকে পরিবর্তন করার জন্য প্রায় ৩ মাস আগে আমাদের একটা আবেদন দেয়া আছে। গতবছর টিনে পুডিং দিয়ে ছিদ্রগুলো বন্ধ করা হয়েছিল। আনসারদের জন্য আলাদা আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় তাদের এ লেবার শেডে থাকতে হচ্ছে।এ বিষয়ে প্রকৌশল দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এস. এম. শহিদুল হাসান বলেন, আমি আনসারদের থাকার শেডটি ঘুরে দেখেছি। এটা অনেক আগের করা। দেয়ালগুলো ড্যামেজ হয়ে গেছে। প্রশাসন থেকে আনসারদের শেডটি সংস্কারের জন্য কোন নির্দেশনা আমরা পাইনি। তবে এটা সংস্কার করা যাবেনা। হয় আনসারদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে নতুবা এটি ভেঙ্গে নতুন করে করতে হবে। সাময়িক টিন ঠিক করে থাকার ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে না।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘‘বিষয়টা নিয়ে আমি আলাপ করবো। যদি এটা সংস্কার করা না যায় তাহলে নতুন করে করার বাজেট আছে কি না আমি দেখছি ”

আরো দেখুন
error: Content is protected !!