খুবই কষ্ট লাগে যখন দেখি আযানের সময় বেশ কিছু মুসলিম ভাই-বোন নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
ধর্ম ডেস্ক
♥
খুবই কষ্ট লাগে যখন দেখি আযানের সময় বেশ কিছু মুসলিম ভাই-বোন নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সালাতের সময় হয়ে বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে কিন্তু তারা উদাসীন। কিন্তু,এরই মধ্যে কিছু মানুষের ছুটে বেড়ানো চোখে পড়ার মতো।
তাদের মনের ভিতর যেন একটা অস্থিরতা কাজ করে,আযান দিতে দেরি কিন্তু মসজিদে যেতে দেরি করে না এরা। সালাত সচেতন এই ভাইবোনদের দেখলে আল্লাহ পাকের একটা আয়াত চোখে ভাসে,যেখানে আল্লাহ পাক বলেছেন,
“ঐ সকল মুমিনরা সফল যারা তাদের সালাতে বিনয়াবনত।”
[১]তারা তাদের সালাতের প্রতি অন্তরের ইখলাস এবং বিনয়ের ও গুরুত্বের সাথে সালাতে হাজির হওয়ার জন্য অবশ্যই সফল হবেন কেননা আল্লাহর বাণী সত্য। আল্লাহর ঘরে সবচাইতে বেশি সংখ্যক মুসল্লির সাক্ষাৎ পাওয়া যায় যোহরের ওয়াক্তে। লাঞ্চ ব্রেক থাকায় অতি সহজেই সারাদিনের কাজের মধ্যে ঢুবে থাকা মানুষগুলো অতি সহজেই এই সময় জামাতে শামিল হয় আর আজকের সুখবর এই মানুষগুলোর জন্য।
সূর্য মধ্যআকাশ থেকে পশ্চিমে ঢলে পড়ার পর যোহরের ওয়াক্তের সূচনা এবং এই ওয়াক্ত চলে প্রায় আসরের পূর্ব পর্যন্ত। সারাবছর মোটামুটি এই ওয়াক্তটুকু নির্দিষ্ট থাকে আর ফরজ ও সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ মিলিয়ে মোট দশ রাকাত সালাত আদায় করতে হয় এই সময়ে অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের মধ্যে সবচাইতে বেশি রাকাতের সালাত এটি।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই দশ ওয়াক্তের সালাতকে যদি আরেকটু বাড়িয়ে বারো রাকাত করে নেন তবে হয়তো মসজিদে আপনার আরো পাঁচ মিনিট সময় বেশি দিতে হবে কিন্তু এর বিনিময়ে আপনাকে একটা সুখবর আমি দিতে পারি।
কি সেই সুখবর?
সেই সুখবর শুনিয়েছেন নবীজী ﷺ ,
“যে ব্যক্তি জোহরের পূর্বে এবং পরে চার রাকাত নামাজ আদায় করবে, জাহান্নামের আগুন আল্লাহ তায়ালা তার ওপর হারাম করে দিবেন।”
সুবহানাল্লাহ!
[২]বিনয়াবনত মুমিন হিসেবে, মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি হিসেবে আল্লাহর ঘোষণা মোতাবেক আপনার জন্য তো সফলতা আল্লাহ পাক দিবেনই কিন্তু এর পাশাপাশি যদি অতিরিক্ত কিছু সালাত যোগ করে নিজের পরকালকে সহজ করা যায় তবে কেনই বা আপনি সেই সালাত বাদ দিবেন।
আপনার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে যাওয়ার অর্থ বুঝতে পারছেন?
আপনার উপরে আল্লাহ পাক যদি জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেন তবে জান্নাতের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় পাওয়া ছাড়া যে আর কোনো পথ আপনার জন্য খোলা থাকছে না।এভাবে দুনিয়াতে বসেই আপনি আপনার হিসেব সহজ করে নিতে পারবেন,তবে কেনই বা তা বাদ দিবেন।
দেখুন,চার রাকাত ফরজের পূর্বে আপনি চার রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ এমনেই পড়ছেন। আর এর পর দুরাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ পড়ছেন তো বাকি রইল মাত্র দুরাকাত সালাত, যা নফল সালাত হিসেবে আদায় করে নিলেই আপনার এই হাদীসের উপর আমল হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
তবে নবীজী ﷺ তিরমিজী শরীফের পরবর্তী হাদীসে এই সালাতকে সুন্নত বলেছেন,
“যে ব্যক্তি জোহরের নামাজের পূর্বের এবং পরের চার রাকাত সুন্নত নামাজ এর পূর্ণ খেয়াল রাখবে (নিয়মিত আদায় করবে), মহান আল্লাহ তায়ালা তার থেকে জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেবেন।”
[৩]এই হাদীসের মধ্যে এটা স্পষ্ট প্রকাশিত হয় যে,এই দুই রাকাত সালাত নবীজী ﷺ আদায় করতেন যার জন্য একে সুন্নাত বলা হয়েছে। পাশাপাশি আরেকটা ব্যাপার খেয়াল রাখবেন, একবার আমল শুরু করলে তা নিয়মিত চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন কেননা নবীজী ﷺ এর বর্ণনায় এসেছে,”পূর্ণ খেয়াল রাখবে (নিয়মিত আদায় করবে)”। অর্থাৎ, নিয়মিত আদায় করে যেতে হবে।
তাই একটু কষ্ট করে আসুন দুই রাকাত সালাত বাড়িয়ে যোহরের ওয়াক্তে বারো রাকাত সালাত আদায় করে নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করতে চেষ্টা করি। হয়তোবা এই অতিরিক্ত পাঁচ মিনিট সময়ের ব্যবহার আপনার জীবনের দীর্ঘ পরকালের রাস্তা মসৃণ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট হলো।
[১] সূরা মুমিনুন: আয়াত নং ১-২
[২] তিরমিজি, হাদিস নং: ১/৫৫৩
[৩] তিরমিজি, হাদিস নং: ১/৫৫৪