ঘুমের হইতে নামায উত্তম
ধর্ম ডেস্ক।।
‘আপনি কি সালাত আদায় করেন?’ এটা যেন একটা পরশ পাথর যা দিয়ে যাচাই হবে, যার সাথে দেখা হলো, তিনি সত্যিকারের মুসলমান কি না। নিজেকে মুসলমান হিসেবে পরিচয় দেয়া আর মুসলমান হওয়া এক নয়।
দিনে পাঁচবার সালাত বা নামাজ পড়া ইসলামের একেবারে প্রাণকেন্দ্রের বিষয়। নিয়মিত নামাজ আদায় এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রশংসার মাধ্যমে জীবনের যাবতীয় কাজকে তাৎপর্যপূর্ণ করা যায়। অতএব নিয়মিত নামাজি হওয়ার ব্যাপারে আমাদের সমস্যা কেন থাকবে?
উমরাহ প্রথম যেবার করলাম, তা ছিল আমার জীবনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা গুলোর একটি। আমার ওপর এর প্রভাব পড়েছিল।
পবিত্র কাবা ঘরের এত নিকটবর্তী হওয়া গভীর আলোড়ন সৃষ্টিকারী অভিজ্ঞতা বটে। যেখানে পূর্ববর্তী সব নবী আ:দের মতো আমাদের প্রিয় নবীজী সা: চলাফেরা এবং ইবাদত করেছিলেন, ঠিক সে জায়গাটিতে উপস্থিত থাকা খুবই বিস্ময়কর।
অনেকের সাথে মক্কায় অবস্থানকালে যেসব বিষয় আমাকে সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছিল, তার মধ্যে একটি হলো ফজরের নামাজের আজান। হাজার হাজার মানুষ তখন সব দিক থেকে কাবার দিকে এগোতে থাকতেন নামাজের জামাতে শামিল হওয়ার উদ্দেশ্যে।
মাঝরাতে ঘুম থেকে ওঠা মোটেও কঠিন মনে হতো না। কারণ কাবা শরিফে সালাত আদায় করার বিষয় নিজের মধ্যে ভীষণ সাড়া জাগাত। যখন বিরাট জনতার সাথে মিলে কাবার দিকে অগ্রসর হতাম, বাড়ি ফেরা কী জিনিস, তা ভাবতেই পারতাম না।
যা হোক, যারা ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজের জন্য মসজিদে যান, সব মুসলমানের অনুপাতে তারা সংখ্যালঘু। তা নয় কি? মক্কা ছাড়া অন্যত্র আজানের আহরন পুরোপুরি উপেক্ষা করা এবং বিছানায় আরামে শুয়ে থাকা খুবই সহজ।
রমজানের মতো বিশেষ কোনো সময়ে কিংবা হজ পালন উপলক্ষে নামাজের ব্যাপারে নিষ্ঠাবান হওয়া এবং ইসলামের অনুসরণকে গুরুত্বের সাথে নেয়া কতই না সহজ মনে হয়।
কথা হলো, রমজান মাসে আমাদের মধ্যে ক’জনই বা মসজিদে গিয়ে তারাবির নামাজ আদায় করেছেন?
এটা আমাদের জীবনের একটা বিরোধী বিষয় যে, আমরা ভালো হওয়ার জন্য এত আকাঙ্ক্ষা পোষণ করি; তবুও পুরনো ফাঁদে বারবার পড়ে সে কাজগুলোই করি, যে জন্য পরে আফসোস করতে হয়। মানুষ হিসেবে আমরা কতই না অদ্ভুত।
টেলিভিশনের সামনে বসে কিংবা ইন্টারনেটে চ্যাটিং করে আমরা অলসের মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিতে পারি। তবুও নামাজের জন্য দশ মিনিট সময় আলাদা করে রাখা যায় না।
অবশ্যই আমরা (আল্লাহর কাছে) কোনো কিছু চাওয়ার জন্য নামাজ পড়ি। তখন নামাজ আদায় করা আমাদের জন্য কোনো সমস্যা হতে পারে না।
এটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার এবং এতে কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। যখন একটি বিমান আকাশ থেকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়, যে যাত্রীর ধর্মীয় অনুভতি সবচেয়ে কম, তিনিও তখন আল্লাহর কাছে দু’হাত তোলেন।
যখন প্রিয়জনের মারাত্মক রোগ ধরা পড়ে, অথবা যখন কোনো ইন্টারভিউতে ভালো করার জন্য আমরা অধীর হয়ে উঠি, তখন আমরা আল্লাহর কাছেই মুনাজাত করি।
আজানের বাণী
আজানের বাণী আমাদের আহ্বান জানায় নামাজ বা সালাত এবং নিরাপত্তার দিকে। আমরা আল্লাহতায়ালার সামনে হাজির আছি এটা জানাই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ নিরাপত্তা।
কারণ তিনিই তো নিয়ন্ত্রণ করেন সবকিছু। আমরা বেশি দুশ্চিন্তা করি এবং অনেক সময় নষ্ট করি এটা ভেবে যে, কী ঘটতে পারে। অথচ আল্লাহ সবকিছুর নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং আমাদের ভয়ের কিছু নেই।
মাঝ রাতে ঘুম থেকে ওঠা, যখন সবকিছু নীরব-নিস্তব্ধ এবং আকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টার সামনে সিজদায় লুটিয়ে পড়া কতই না চমৎকার।
তখন আমাদের পাশে আর কেউ থাকে না। আল্লাহর সামনে আমরা পরিপূর্ণভাবে আত্মনিবেদিত হতে পারি অন্তরের সবকিছু ঢেলে দিয়ে, তাঁর কাছে প্রার্থনা করে এবং তাঁর শুকরিয়া আদায়ের মাধ্যমে।
আকাশ থেকে পড়া বোমা নয়, নিত্যদিনের দুঃখ-দুর্ভোগ, জ্বালা-যন্ত্রণা যা প্রায় সময়ে আমাদের নিঃশেষ করে দিতে চায়, এর কবল থেকে রেহাই পেতে আজান ডাকছে আমাদের।
আজানের আহবান একমাত্র আল্লাহতায়ালার শরণাপন্ন হওয়ার উদ্দেশ্যে। তিনিই আমাদের সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জানেন, তিনিই সর্বাধিক যত্ন নেন আমাদের এবং তিনিই চান আমাদের পরিণতি হোক সর্বোত্তম।
তাই দ্রুত ছুটে যেতে হবে নামাজ আদায়ের জন্য; আশ্রয় নিতে হবে এক আল্লাহর। জীবনে অর্থহীন ও নিষ্ফল সবকিছু যত শিগগির সম্ভব ত্যাগ করতে হবে; আর এই জীবনের স্রষ্টার ইবাদতের দিকে হতে হবে মনোযোগী।