জুয়ায় ১০০ টাকা হেরে আত্মগোপনে ১২ বছর
নিউজ ডেস্ক।।
জুয়া খেলায় মাত্র ১০০ টাকা হেরে পরিবারের সদস্যদের ভয়ে আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন পোশাকশ্রমিক মো. সুমন মিয়া।
তখন তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর। দীর্ঘ ১২ বছর পর সেই সুমন মিয়াকে উদ্ধার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। দীর্ঘ সময় আত্মগোপনে থাকা সুমন বিয়েও করেছেন, আছে সন্তানও।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিবিআই ঢাকা মেট্রোপলিটন (উত্তর) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার (পিবিআই) মো. জাহাঙ্গীর আলম।
পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, ২০১০ সালের ৩১ আগস্ট কর্মস্থল ডায়মন্ড প্যাকেজিং গার্মেন্টসের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন কিশোর সুমন। পথে জুয়ারিদের পাল্লায় পড়ে হারেন ১০০ টাকা।
নিজ উপার্জনে কেনা মোবাইল ফোন দিয়ে দিতে হয় জুয়াড়িদের হাতে। টাকা ও মোবাইল হারানোর ভয় আর ক্ষোভে বাসায় ফেরার সাহস পাননি তিনি।
নিখোঁজের পর প্রথমে জিডি তারপর অপহরণ মামলা করেন তাঁর বাবা। জিডিতে সুলায়মান হোসেন (২৮), শাওন পারভেজ (১৮), মো. রুবেল (২০), মো. সোহাগ (২০) ও মো. মানিককে (২৫) আসামি করা হয়। তাঁরাই সেই জুয়ার আয়োজন করেছিলেন।
পুলিশ সুপার আরও জানান, সুমন জুয়া খেলায় হেরে যাওয়ায় আসামি সুলায়মান তাঁর মোবাইল ফোন নিয়ে নেন। দীর্ঘ ১০ বছরে পুলিশের বিভিন্ন সংস্থা মামলাটি তদন্ত করেছে।
তদন্তকারী কর্মকর্তারা এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করে নিখোঁজ সুমনকে উদ্ধারের চেষ্টা করেছেন। তবে সুমনকে অপহরণে জড়িত থাকার প্রমাণ না পাওয়ায় আসামিদের দায়মুক্তি দিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করলেও সুমনের বাবা প্রতিবারই নারাজির আবেদন করেছেন। এতে গত ১০ বছর ধরে ঝুলে ছিল মামলাটি। দীর্ঘ ১২ বছর আত্মগোপনে থেকে উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে মামলাটির সমাপ্তি হলো।
উদ্ধার হওয়া সুমনের বরাত দিয়ে পিবিআই জানায়, জুয়ায় হেরে হারিয়ে ফেলা মোবাইলের বিষয়ে বাবার কাছে কী সদুত্তর দেবেন এ ভয়েই তিনি মিরপুর থেকে গুলিস্তানে চলে যান।
সারা দিন গুলিস্তানে ঘোরাফেরা করেন। রাতেও বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করেন। পরদিন সকালে বায়তুল মোকাররম মসজিদে শুয়ে থাকেন। সেখানকার এক লোক তাকে শাহবাগে ফুলের মার্কেটে নিয়ে নাশতা খাওয়ায়।
পরে শাহবাগ এলাকার একটি হোটেলে শুধু থাকা ও খাওয়ার শর্তে কাজ পান তিনি। ওই হোটেলের বাবুর্চি হারুনের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয়। তাঁর সঙ্গে সুমন ভোলার লালমোহনের মঙ্গল শিকদার এলাকায় একাধিকবার যান। এরপর শাহবাগ এলাকায় বিভিন্ন চটপটির দোকানে কাজ, পপকর্ন বিক্রি, বাসের হেলপারসহ বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেন।
পিবিআই আরও জানিয়েছে, এরই মধ্যে নানু ওস্তাদ নামে এক ড্রাইভারের সঙ্গে সুমনের পরিচয় হয়। পরিচয় গড়ে ওঠে জোনাকি নামের একটি মেয়ের সঙ্গেও। একপর্যায়ে জোনাকির মা জোসনার সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক হয়।
বছর তিনেক আগে জোসনার স্বামী বকুল মোল্লা তাঁর স্ত্রীকে তালাক দিলে সুমন কিছুদিন পর জোসনাকে বিয়ে করেন। তাদের হাবিবুল্লাহ নামে তিন মাস বয়সী একটি ছেলেও রয়েছে। একপর্যায়ে সুমনের বাবার সঙ্গে জোসনা মোবাইলে কথা বলেন। সেই সূত্র ধরেই সুমনকে উদ্ধার করে পিবিআই।
দীর্ঘ এক যুগ পর ছেলেকে ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত সুমনের বাবা মোজাফফর মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলে যখন নিখোঁজ হয়, তখন রমজান মাস। সকালে বের হয়ে রাতেও যখন ছেলে ফেরেনি ।
তখন আমরা খোঁজাখুঁজি করি। মিরপুরের সব জায়গায় খুঁজেছি আমরা। তারপর পল্লবী থানায় জিডি করি। ছেলেকে খুঁজতে ফকিরের কাছেও গেছি।’