বাতাসেও ছড়ায় করোনা, যেভাবে সতর্ক থাকবেন
বাতাসেও এখন করোনার জীবাণু। প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার সময়ও বুঝি ফুরিয়ে এসেছে! সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, বাতাসে করোনাভাইরাস সক্রিয় থাকার প্রমাণ মিলেছে। এ কারণেই করোনা সংক্রমণের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
করোনাভাইরাস একটি বায়ুবাহিত রোগ হিসেবে প্রমাণ মিলেছে। কথা বলার সময়, কাশি বা হাঁচি দেওয়ার সময় আমাদের মুখ থেকে যে ড্রপলেটগুলো বের হয়ে থাকে; সেগুলোই বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির ড্রপলেটগুলো যদি বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে; তখন ওই বাতাসের মাধ্যমে সুস্থ ব্যক্তিও সংক্রমিত হতে পারেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লুএইচও)মতে, ড্রপলেটের সুক্ষ্ম কণা বা এয়ারোসোল বাতাসে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বাতাসে করোনাভাইরাসের জীবাণু অনেক সময় এবং দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ড্রপলেট নিউক্লিআই এতোটাই সূক্ষ্ম কণা যার মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ কণাগুলোকে বলা হয় এয়ারোসোল। সাধারণ ড্রপলেট ও ড্রপলেট নিউক্লিআইয়ের মধ্যে পার্থক্য হলো, ড্রপলেট সাধারণত ভারি হওয়ার কারণে মাটিতে পড়ে যায়।
অন্যদিকে ড্রপলেট নিউক্লিআই মাটিতে পড়ে না বরং ভেসে বেড়ায়। আবার ৬ ফিটেরও বেশি দূরত্বে ভেসে যেতে পারে। এমনটি হলে আপনি করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে না গেলেও বাতাসের মাধ্যমে আক্রান্ত হতে পারেন।
গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সার্স কোভ-২ এয়ারসোলের মাধ্যমে ছড়িয়ে যেতে পারে। ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) একটি প্রতিবেদন অনুসারে, কোভিড-১৯ বায়ুবাহিত হতে পারে।
এ ছাড়াও ল্যানসেটের সাম্প্রতিক একটি গবেষণাতেও দাবি করা হয়েছে, কোভিড-১৯ বায়ুর মাধ্যমে ড্রপলেট নিউক্লিআইয়ের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে। শুক্রবার দ্য ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত সমীক্ষা অনুসারে প্রমাণিত হয় যে, কোভিড-১৯ এর জন্য দায়ী সার্স কোভ-২ ভাইরাসটি মূলত বাতাসে ভেসে থাকতে পারে ছোট ছোট ড্রপলেটের মাধ্যমে।
ল্যানসেটের গবেষণা অনুযায়ী, কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাইরের তুলনায় ঘরেই অনেক বেশি। কারণ ঘরে বেশি বাতাস চলাচল করতে পারে না। তাই পরিবারের যে কারও হাঁচি-কাশির মাধ্যমে করোনাভাইরাস ঘরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
আর এই বাতাসে মিশে থাকা ভাইরাসের মাধ্যমে অন্যরাও আক্রান্ত হতে পারে কোভিড-১৯ এ। ভাইরাসটির বায়ুবাহিত সংক্রমণ ঘরের মানুষের জন্য আরও বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যেসব সতর্কতা মেনে চলা জরুরি
>> এয়ারসোল থেকে নিজেকে রক্ষা করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো ভিড়ের মধ্যে না যাওয়া।
>> সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা।
>> বায়ুচলাচল কম এমন ঘরে প্রবেশ করবেন না। এটি ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
>> ব্যাংকে, সুপারশপে বা দোকানে প্রবেশ করলেও কম সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
>> এমন মাস্ক পরতে হবে, যেটি মুখের সঙ্গে লেগে থাকবে। কাপড়ের মাস্ক পরলে ৩ স্তরবিশিষ্ট হতে হবে।
>> সার্জিকেল মাস্ক পরলে উপরে একটি কাপড়ের মাস্ক পরে নিবেন; যাতে ভালোভাবে মাস্ক মুখে আটকে থাকে।
>> অফিসে যদি বদ্ধ ঘরে কাজ করতে হয়, সেক্ষেত্রে দরজা-জানালা খোলার ব্যবস্থা করতে হবে।
>> এসির ফিল্টারগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। সেইসঙ্গে এসির বাতাসের পাশাপাশি ঘরে যাতে বাতাস প্রবেশ করতে পারে; সে ব্যবস্থা করতে হবে।
>> বিভিন্ন অফিসে এ সময় কার্বন-ডাই-অক্সাইড মিটার, হেপা ফিল্টার, এয়ার ক্লিনারের ব্যবস্থা রাখতে পারে। এতে করে ধারণা পাওয়া যাবে ঘরে কতটুকু পরিমাণে বাতাস চলাচল করছে।
>> অবশ্যই সবসময় মাস্ক পড়ে থাকতে হবে।
>> কারও সঙ্গে কথা বলার সময় দূরত্ব বজায় রেখে অবশ্যই মাস্ক পরে কথা বলুন।
>> ঘরের মধ্যেও মাস্ক পরিধান করুন। পরিবারের সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিন।
সুত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া/ দ্য কনভারসেশন