যুবলীগ হোক সোনার বাংলা গড়ার অন্যতম কারিগর
নিউজ ডেস্ক।।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে তার যুব বয়স।
এ সময় থেকেই তিনি বাংলা, বাঙালি ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ভাবনায় নিমগ্ন ছিলেন। যুবকদের ওপর ভর করেই তিনি এঁকেছিলেন সাফল্যের নকশা। তিনি যে স্বপ্ন দেখতেন, সে স্বপ্ন যুবকদের মধ্যে সঞ্চারিত করতে চেষ্টা করতেন। যুবকদের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে তিনি উপদেশ-নির্দেশ দিতেন।
১৯৭৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর এক ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘জোয়ান ভাইয়েরা, দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন এ হবে তোমাদের ব্রত। মানুষকে ভালোবেসো, মানুষকে সেবা করো। বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য বাংলার জনগণের পাশে থেকে তোমরা কাজ করো।’‘বিশ্বে এলো নতুনবাদ, মুজিববাদ-মুজিববাদ’-বঙ্গবন্ধুর সময়ে এ দেশের ছাত্র-যুবকরা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানের মতো এ স্লোগানটিও স্বতঃস্ফূর্তভাবে দিত। মুজিববাদ হলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লালিত, চর্চিত ও প্রচারিত রাজনৈতিক দর্শন ও মূল্যবোধ। মুজিববাদের প্রতিটি স্তরেই রয়েছে সুখী-সমৃদ্ধ, মানবিক বাংলাদেশ গড়ার ইতিবৃত্ত ও কালোত্তীর্ণ মুক্তি-দর্শনের পথ।
স্বাধীনতার পর মুজিববাদ বাস্তবায়নে প্রতিকূলতা হিসাবে কাজ করেছে মুক্তিযুদ্ধে পরাজিতদের ষড়যন্ত্র, কতিপয় রাজনীতিকের ব্যক্তিগত মুনাফাতত্ত্ব, শিক্ষার অনগ্রসরতা ও যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা।
মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা বঙ্গবন্ধুর দর্শনকে মনেপ্রাণে লালন করেনি, আবার জনস্রোতের কারণে প্রকাশ্যে বিরোধিতাও করতে পারেনি, স্বাধীনতার পর ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে ব্যর্থ করতে তারা সক্রিয় হয়েছেন, অনেকে মুজিববাদকে যথাযথভাবে অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছেন, এমনকি একটি গোষ্ঠী মুজিববাদকে বিকৃতভাবেও প্রচার করেছে। এসব দিক থেকে ব্যতিক্রম ছিলেন শেখ ফজলুল হক মনি।
আগাগোড়া মুজিববাদী রাজনীতিবিদ ও দার্শনিক শেখ ফজলুল হক মনি ছিলেন একাধারে লেখক, সাংবাদিক, তাত্ত্বিক, সম্পাদক এবং শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার নির্ভীক সংগঠক। শেখ মনির মৌলিকত্ব হচ্ছে তিনি শুধু স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ চাননি, সেই সঙ্গে চেয়েছেন স্বাধীন সমাজব্যবস্থা অর্থাৎ বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন, যা বঙ্গবন্ধু ও মুজিববাদের অন্যতম দর্শন।
মুক্তিযুদ্ধে মুজিববাহিনীর অন্যতম লক্ষ্যও ছিল সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে একটি শোষণ-বৈষম্যহীন স্বাধীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু সে সময়ে যথাযথভাবে মুজিববাদ বাস্তবায়ন করা ছিল অত্যন্ত কঠিন।
১৯৭৩ সালের ১৩ মার্চ এক নিবন্ধে শেখ ফজলুল হক মনি লিখেছিলেন, ‘এ সংগ্রাম অতি দুস্তর, মুজিববাদ কায়েমের সংগ্রাম অতি কঠোর সংগ্রাম।’ শেখ ফজলুল হক মনি সেই কঠিন সংগ্রামকেই ব্রত হিসাবে নিয়েছিলেন।
এ কারণে হয়তো তিনি স্বাধীনতার সময় ভারত সরকারের কাছ থেকে পাওয়া ‘শিক্ষকতার প্রস্তাব’ বা স্বাধীনতার পর মন্ত্রিত্ব কিংবা ক্ষমতার চেয়ারে বসেননি। সোনার বাংলার পথকে সুগম করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশের প্রথম যুব রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।
তরুণ নেতাকর্মীদের মাঝে পড়াশোনা, দেশসেবার দীক্ষা ও সাংস্কৃতিক চেতনা ছড়িয়ে দিতে তিনি বিভিন্ন কর্মসূচিও নিয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সামরিক-বেসামরিক ঘাতকচক্র সপরিবারে বঙ্গবন্ধু এবং শেখ মনি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সামসুন্নেসা আরজু মনিকে হত্যার মাধ্যমে সে পথকে রুদ্ধ করেছিল। খুনি হায়েনার দল ও তাদের দোসরদের সৃষ্ট বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে কখনো আত্মীয়ের বাসায়, কখনো পলাতক থেকে, কখনো অন্য রাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়ে বড় হয়েছেন তাদের দুই সন্তান পরশ ও তাপস।
চরম প্রতিকূলতা ও মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বড় হওয়া শেখ ফজলে শামস পরশকে যুবলীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয় সপ্তম কংগ্রেসে (২৩ নভেম্বর ২০১৯)। দায়িত্ব নিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ এবং তার কন্যার দেশের প্রতি হৃদয়ের ভালোবাসা থেকে আমি সাহস পাই।
তাই আজ আমি আপনাদের সামনে বলতে চাই, আমার ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, আমি সম্পূর্ণ সততার সঙ্গে সে দায়িত্ব পালন করব।’ তার প্রায় দুই বছরের নেতৃত্বে যুবলীগের নেতাকর্মীদের নামে-বেনামে ব্যানার-ফেস্টুন, প্রচার-প্রচারণা বন্ধ করা, নেতৃত্ব নির্বাচনের মানদণ্ড নির্ধারণ, পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়তে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে নেতাকর্মীদের শপথ, দরিদ্র ও আশ্রয়ণহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ কার্যক্রম, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, হিজড়া, ঋষি ও অবহেলিত-প্রান্তিক সম্প্রদায়কে সহযোগিতা, করোনাকালীন দুস্থদের অ্যাম্বুলেন্স, টেলি মেডিসিন এবং বিনামূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিতরণ কর্মসূচি খুব বেশি প্রচারিত না হলেও যুবলীগের মানবিক ধারাকে সমৃদ্ধ করেছে।
যুবসমাজ একটি জাতির স্তম্ভ; সভ্যতা, সংস্কৃতি ও উন্নয়নের কারিগর। যুবকদের গুরুত্ব সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধ করার দায়িত্ব শুধু মন্ত্রী বা সদস্যদের নহে। এ ব্যাপারে যুবসমাজকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
যুবলীগের বর্তমান চেয়ারম্যানের কণ্ঠে আমরা যখন শুনি- ‘…আমি ঘৃণা করতে পছন্দ করি না। এমনকি সত্যি কথা বলতে, আমার পিতা-মাতার খুনিদেরও আমি চেষ্টা করেছি ঘৃণা না করতে। ঘৃণাকে আমি একটা সামাজিক ব্যাধি হিসাবে দেখি’-তখন প্রত্যাশা জাগা স্বাভাবিক, যুবলীগ হবে মানবিক।
যুবলীগ হবে অন্যায়, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিসহ সব সামাজিক ব্যাধির প্রতিবন্ধক। শেখ ফজলুল হক মনির প্রেরণায় শানিত হয়ে যুবলীগের নেতাকর্মীরা হবে মুজিবাদর্শের আদর্শ সৈনিক। মুজিববর্ষ ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সেই প্রত্যাশা সবার।