৯ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যেভাবে চেতনানাশক বিস্কুট খাইয়ে ইজিবাইক ছিনতাই করতো তারা

নিউজ ডেস্ক।।
কেউ গাড়িচালক, আবার কেউ ভুয়া স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিতো। এমন পরিচয়ের আড়ালে চেতনানাশক মেশানো বিস্কুট খাইয়ে অজ্ঞান করে ইজিবাইক ছিনতাই করতো চক্রটি।

নারীসহ ইজিবাইক ছিনতাইকারী এ চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১০)।

মঙ্গলবার (৪ জুলাই) ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি ও মাদারীপুরের শিবচর এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতাররা হলেন— মো. শফিকুল ইসলাম (৪৫),নুর ইসলাম (৩২), গোলাম রাব্বি (২৫), মো. আব্দুর রহমান (২৭), মোছা. শীমা আক্তার (২৮) ও শাহনাজ (৩৭)।

এসময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত চেতনানাশক মিশ্রিত বিস্কুট, চেতনানাশক ওষুধ, ভিকটিম ফিরোজের মোবাইল ফোন ও ১টি চোরাই সিএনজি উদ্ধার করা হয়।

বুধবার ( ৫ জুলাই) ঢাকার কেরাণীগঞ্জ রাজেন্দ্রপুরে র‍্যাব-১০ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।

তিনি জানান, গত ২৭ জুন ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার হাসনাবাদ এলাকার বাসিন্দা মো. ফিরোজ (২২) নামে একজন ইজিবাইক চালক প্রতিদিনের মতো জীবিকা নির্বাহের জন্য ইজিবাইক নিয়ে বের হয়।

আনুমানিক বিকাল ৫টা থেকে তার পরিবারের লোকজন তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে বিভিন্নভাবে খোঁজ-খবর নেয়। সন্ধান না পেয়ে ফিরোজের বাবা কিবরিয়া গাজী গত ২৮ জুন দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

এরপর থেকে নিখোঁজ ইজিবাইজ চালক ফিরোজকে উদ্ধার করতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

আসামিদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে ফরিদ উদ্দিন জানান, গত ২৭ জুলাই গ্রেফতার শফিকুল, নুর ইসলাম, গোলাম রাব্বি, আব্দুর রহমান, শীমা আক্তার ও শাহনাজ ইজিবাইক ছিনতাই করার উদ্দেশ্যে ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার হাসনাবাদ এলাকায় অবস্থান করে।

নুর ইসলাম, গোলাম রাব্বি, শীমা ও শাহনাজ হাসনাবাদ গরু হাটে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ভিকটিম ফিরোজের ইজিবাইক ভাড়া করে। গরুর হাটে যাওয়ার পর নুর ইসলাম ও গোলাম রাব্বিকে ইজিবাইক চালক ভিকটিম ফিরোজের সঙ্গে চা-বিস্কুট খাওয়ার কথা বলে শীমা ও শাহনাজ গরু হাটে চলে যায়।

পরবর্তী সময়ে নুর ইসলাম ও গোলাম রাব্বি নিকটস্থ চায়ের দোকান থেকে এক প্যাকেট বিস্কুট ক্রয় করে। পরে তারা কৌশলে ওই বিস্কুটের প্যাকেটটি পরিবর্তন করে চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুট ইজিবাইক চালক ফিরোজকে খাওয়ায়।

ফিরোজের শরীরে চেতনানশক ওষুধের ক্রিয়া শুরু হলে তারা ইজিবাইকসহ ফিরোজকে ওই এলাকা থেকে সরিয়ে কাউটাইল এলাকায় নিয়ে যায়।

সেখানে যাওয়ার পর নুর ইসলাম ও গোলাম রাব্বি ভিকটিম ফিরোজকে বেসামাল অবস্থায় গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে ইজিবাইক নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার পাগলা এলাকায় নিয়ে গিয়ে তাদের দলনেতা শফিকুল ইসলামের নিকট হস্তান্তর করে। শফিকুল ইসলাম ওই ইজিবাইকটি শহিদ নামে একজন ব্যক্তির কাছে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়।

ছিনতাইয়ে কার কী ভূমিকা:

গ্রেফাতর শফিকুল ইসলাম অজ্ঞান পার্টি চক্রটির দলনেতা। সে পেশায় সিএনজিচালক। ওই পেশার আড়ালে সে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে সিএনজি/ ইজিবাইক ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ও নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। তার বিরুদ্ধে মাদক, চুরি, অসাধুভাবে চোরাই মালামাল বেচাকেনাসহ ৪টি মামলা রয়েছে।

গ্রেফতার নুর ইসলাম পেশায় ট্রাক গাড়ির হেলপার। সে শফিকুলের নেতৃত্বে সিএনজি/ইজিবাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে চালকদের চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুট খাওয়ানোর দায়িত্ব পালন করে থাকে।

গ্রেফতার গোলাম রাব্বি পেশায় ইজিবাইক চালক। সে শফিকুলের নেতৃত্বে ইজিবাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে চালকদের চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুট খাওয়ানো ও ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পালন করে।

গ্রেফাতর আব্দুর রহমান পেশায় সিএনজি চালক। সে শফিকুলের নেতৃত্বে ছিনতাই করা সিএনজি চালানোর দায়িত্ব পালন করে। তার কাছ থেকে ভিকটিম ফিরোজের মোবাইলটি উদ্ধার করা হয় বলে জানা যায়।

গ্রেফতার শাহনাজ বিস্কুটের ক্রিমের সঙ্গে মেশানোর জন্য বিক্রয়নিষিদ্ধ চেতনানশক ওষুধ অবৈধভাবে বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে সংগ্রহ করতো।

সে শফিকুল ইসলামের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতো এবং সেখানে থেকে তারা বিস্কুটের সঙ্গে চেতনানশক মিশিয়ে ইজিবাইক ও সিএনজি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করতো।

গ্রেফতার শীমা আক্তার, শাহনাজের সঙ্গে বিস্কুটের ক্রিমের সঙ্গে বিক্রয়নিষিদ্ধ চেতনানশক ওষুধ মেশানো ও সিএনজি বা ইজিবাইক ভাড়া করে তাদের পূর্ব-পরিকল্পিত স্থানে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পালন করতো।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!