সাইক্লোন ইয়াস দিবসেই পূর্ণিমা ও চন্দ্রগ্রহণ; গতি বাড়িয়েছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস, ২ নম্বর সতর্ক সংকেত
নিউজ ডেস্ক
ক্রমশ শক্তি বাড়িয়ে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। তার মধ্যে জোড়া ফলার মতো অপেক্ষা করছে পূর্ণিমা ও পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। এই তিনের যোটকে ইয়াস-এর শক্তি আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা। আর সে রকম হলে স্থলভাগে আঘাত পাওয়ার সময় ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ হতে পারে আরও বেশি। ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে উপকূল এলাকায়।
পূর্ণিমার প্রভাবে বুধবার সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে শুরু হবে জোয়ার। সকাল ১০টা ৪৮ মিনিটে সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছবে জোয়ার। তার পর থেকে ফের পানির উচ্চতা নামতে শুরু করবে। সন্ধ্যা ৬টা ৩ মিনিট নাগাদ ভাটার প্রভাবে জলতল থাকবে সব থেকে নীচে। তার পর থেকে ফের শুরু হবে জোয়ারের প্রভাব। রাত ১১টা ৪ মিনিট নাগাদ ফের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছবে জোয়ার। জোয়ার চলাকালীন জলের উচ্চতা সর্বাধিক সাড়ে ৫ মিটার উঠতে পারে।
অন্য দিকে বুধবার দুপুর ৩ট ১৫ মিনিটে শুরু হওয়ার কথা পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। চলবে সন্ধ্যা ৬টা ২৩ মিনিট পর্যন্ত। ২০২১ সালে এটিই প্রথম ও শেষ ‘ব্লাড মুন’ হতে চলেছে।
ইয়াস-এর স্থলভাগে আছড়ে পড়ার সময় যদি একটু বদল হয় অর্থাৎ সকালের দিকে কিংবা একটু রাতের দিকে আছড়ে পড়ে তা হলে তার প্রভাব অনেক বেশি সাংঘাতিক হতে চলেছে। এমনিতেই গতি বাড়িয়েছে ইয়াস। ঘূর্ণিঝড় যত স্থলভাগের দিকে এগোবে তত তার গতি বাড়বে। তাই পূর্বাভাসে দেওয়া সময়ের আগেই ধাক্কা মারতে পারে ইয়াস।
পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ইয়াস গতি বাড়িয়েছে। গত ৬ ঘণ্টায় ইয়াস ঘণ্টায় ৭ কিলোমিটার বেগে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়েছে। এটি আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে এগোবে বলে ধারণা আবহাওয়াবিদদের। আগামী ১২ ঘণ্টায় শক্তি সঞ্চয় করে ইয়াস প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে। তার পরের ২৪ ঘণ্টায় আরও শক্তি নিয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হয়ে উঠবে।
সোমবার সন্ধ্যায় ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে ইয়াস ভারতের ওড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকার মাঝামাঝিতে আঘাত হানবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।পরে ইয়াস আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে ২৬ মে সকালের দিকে ওড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছবে। ওই দিন দুপুরের দিকে ওড়িষ্যার পারাদ্বীপ এবং পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের মধ্যে ওড়িষ্যার বালাসোরের কাছ দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
২৬ মে বিকাল বা সন্ধ্যায় আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। সেসময় পূর্ণিমা থাকায় জলোচ্ছ্বাস হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর। এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের গতিমুখ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যার দিকে। তবে কোনো কারণে এর গতিপথ পাল্টে গেলে এটি বাংলাদেশের উপকূলে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করছে। বাতাসের গতিবেগ ৬২ কিলোমিটার। যা ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঝড়টি আইলা বা আম্পানের মতো সুপার সাইক্লোনে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা নেই।
বাংলাদেশের উপকূল থেকে ৬০০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরে পাক খেতে থাকা ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ ঘণ্টায় ৭ কিলোমিটার বেগে এগোচ্ছে।
২৬ মে ভোর নাগাদ উত্তর উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের খুলনা উপকূলের কাছ দিয়ে উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় পৌঁছাতে পারে। তবে ঝড়টি কিছুটা গতিপথ বদলেছে। এটি এখন ভারতের উড়িষ্যার দিকে যাচ্ছে। যে কোনো সময় এই ঝড়ের গতিপথ আবার পরিবর্তন হতে পারে। যদি গতিপথ বদলায় তাহলে বাংলাদেশের উপকূলের দিকেও আসতে পারে। এক্ষেত্রে ঝড়টি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও বরগুনা জেলাকে আঘাত করতে পারে বলে জানা গেছে আবহাওয়া অফিস সূত্রে।
তবে গতিপথ বদলালেও ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে পড়বে দেশের চারটি জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও বরগুনায়। এসব জেলায় দমকা হাওয়াসহ প্রচুর বৃষ্টিপাত হতে পারে। কিছুটা ক্ষতিগ্রস্তও হতে পারে।
সোমবার সন্ধ্যা ছয়টায় ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ৫৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পশ্চিমে, মোংলা থেকে ৬৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুশিয়ারি সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত বিশেষ সতর্কবার্তায় বলা হয়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে এবং এর আশপাশের এলাকায় সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ইয়াস দুপুর পর্যন্ত প্রায় একই এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৬৮৫ কিলোমিটার থেকে কিছুটা এগিয়ে ৬৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে। কক্সবাজার থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে এগিয়েছে। কিন্তু মোংলা ও পায়রা থেকে একই দূরত্বে আছে এখনো। মোংলা বন্দর থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা বন্দর থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল বলে বিশেষ সতর্কবার্তায় জানানো হয়।