২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

অশ্রু শুধু শোক নয়, জীবন রক্ষারও উপায় হতে পারে!

স্বাস্থ্য কথা।।
দৃষ্টিশক্তি প্রাণী শরীরে এক জাদুকরি ক্ষমতা। আর চারপাশের রঙিন পৃথিবীকে আমরা দেখি দু’চোখ দিয়ে। এ চোখেরই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে অশ্রু।

বিজ্ঞান বলছে, শুধু কান্নার সময় নয়, প্রায় সকল সময়েই আমাদের চোখে থাকে নোনা জলের উপস্থিতি। স্বাভাবিক সময়ে এর পরিমাণ হয় সাত মাইক্রোলিটার বা এক ফোটা পানির দশ ভাগের একভাগ। 

নোনা জল বলাটা অবশ্য ভুল। বরং অশ্রু হচ্ছে আমাদের রক্তের পরিশোধিত রূপ। এটি আমাদের চোখে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের যোগান দেয় এবং জীবাণু সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রথম সারির সুরক্ষা হিসেবে কাজ করে, ময়লা পরিষ্কার করে। আবার চোখে আঘাত পেলেও তা সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।

রক্তে বিদ্যমান নানা জৈব-রাসায়নিক উপাদান আমাদের অশ্রুতেও থাকে। এমন কিছু উপাদান আমাদের শরীরে কোনো রোগে দেখে দিয়েছে কিনা- সে সম্পর্কে আভাস দিতে পারে। 

যেমন; কারো অশ্রুতে গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি থাকলে তিনি ডায়াবিটিস বা বহুমূত্র রোগ আক্রান্ত বলে বোঝা যায়। নির্দিষ্ট কিছু এনজাইম মিললে জানা যাবে তিনি কিডনির সমস্যায় ভুগছেন।

মূলত; এসব রোগ নির্ণয়েই চিকিৎসকরা রক্ত পরীক্ষা করে থাকেন। কিন্তু, অশ্রুর বৈশিষ্ট্যের কল্যাণে নিকট ভবিষ্যতে তারা এটি পরীক্ষা করেই রোগ নির্ণয় করতে পারবেন।

এনিয়ে চলমান গবেষণায় এর মধ্যে বেশকিছু সফলতা মিলেছে। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, আমাদের অশ্রুতে ক্যানসার, স্কেলেরসিস, ডায়াবেটিস মেলিটাস, সিজটিক ফিব্রোসিস এবং পার্কিনসন্স রোগের লক্ষ্মণ পাওয়া যায়। এসব রোগ সচরাচর দেখা যায় এবং অধিকাংশই এক পর্যায়ে রোগীর জীবনকে বিপন্ন করে তোলে।

অ্যালেঝেইমার বা স্মৃতি বিলোপের মতো রোগের লক্ষ্মণও অশ্রুতে থাকে কিনা- তা জানতেও আরেকটি গবেষণা চলছে। কিছু কিছু রোগের জন্য আবার শুরু হয়েছে পরীক্ষা। যেমন; এখন স্তন ক্যান্সার শনাক্তে রোগীর অশ্রু পরীক্ষা করা হচ্ছে।

এর ফলে রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা ব্যয় অনেকগুণে কমতে পারে এবং রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে তা শনাক্ত করে সারিয়ে তোলা যাবে। 

বিজ্ঞানীদের আশা, এক সময় হয়তো সরাসরি রক্ত পরীক্ষার চাইতে এটি বেশি নির্ভুল ফলও দিতে পারবে।

চলমান বিশ্বমারি নিয়ন্ত্রণেও আশার আলো দেখাচ্ছে এ পদ্ধতি। বর্তমানে অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মাধ্যমে কোভিড-১৯ শনাক্তের পদ্ধতি চালু আছে। সবচেয়ে নির্ভুল উপায়টির জন্য রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। কিন্তু, অশ্রুতেও সার্স কোভ-২ ভাইরাসের আরএনএ পাওয়া গেছে। তাই অশ্রুর নমুনা থেকেও হয়তো অ্যান্টিবডি শনাক্তের পরীক্ষা করা যাবে। 

এই সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে হয়তো করোনাভাইরাস শনাক্তে দ্রুত এবং সস্তায় অশ্রু পরীক্ষার উপায় তৈরি হবে। রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন না থাকায় ঘরে বসেই র‍্যাপিড টেস্ট কিটের সাহায্যে সংক্রমণ পরীক্ষা করতে পারবেন সাধারণ মানুষ।

ফলে সংক্রমণ প্রতিরোধ ও রোগ চিকিৎসাতেও যোগ হবে নতুন অগ্রগতি। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা পেলে প্রাণও বাঁচবে অনেকের।

অশ্রুর সম্ভাবনা প্রচুর এবং তা সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্যের অবস্থা সম্পর্কে জানাতে পারে। অশ্রু মনিটর করার বিশেষ কন্টাক্ট লেন্স চোখে পরলে তা সব-সময় পরিধানকারীর দেহের নানা উপসর্গ বিশ্লেষণ করে জানাবে।

ফলে মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন থাকতে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাবেন। তাই রোগ- ব্যাধি থেকে বেঁচে যাওয়া-সহ পরবর্তীতে চিকিৎসার খরচও কমবে।
 
এই সম্ভবনাতে ইতোমধ্যেই আকৃষ্ট হয়েছে নোভারটিস এবং গুগলের মতো বৃহৎ ওষুধ ও প্রযুক্তিখাতের শীর্ষ কোম্পানি। বাজার ধরতে অন্যরাও অন্যরাও কোমর বেঁধে নেমেছে। ফলে বর্তমানে বিশ্বের বেশ কিছু বড় ল্যাবরেটরিতে এ সংক্রান্ত প্রযুক্তি তৈরির গবেষণা চলছে। 

আর প্রযুক্তি যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে, তাতে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী আগামী এক দশকেরও কম সময়ের মধ্যেই আসবে চাঞ্চল্যকর সফলতা। তখন অশ্রু শুধু শোক নয়, জীবন রক্ষারও উপায় হবে। সূত্র: সায়েন্টিফিক আমেরিকান।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!