২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ আরিফ রায়হানের মায়ের ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী।

মহানগর ডেস্ক।।
আজ মাকে হারানোর ব্যাথা আর শূণ্যতা ছাড়া আর কিছুই আমার ভাবনায় নেই -আরিফ রায়হান

আমার মনটা কখনো নরম, কখনো গরম আবার কখনো স্তব্ধ। বারবার হয়ে যায় মৃত্যুযাত্রী। এ যেন ক্লান্তিময় এক দিনের সূচনা।

আরিফ রায়হান, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী যুবলীগ।
মনের উদ্বেগকে কোনভাবেই মন থেকে আলাদা করা যাচ্ছে না এতোদিন, বৃথা চেষ্টা মাত্র। চাপা কান্না আর শত কষ্টের ভারে বাতাস যেন ক্রমশ ভারী হয়ে আসছে। স্পষ্টতই উপলব্ধি করছি।

এ মুহূর্তে মাকে হারানোর ব্যাথা আর শূণ্যতা ছাড়া আর কিছুই আমার ভাবনায় নেই।

২১শে আগস্ট আমার মায়ের ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৩ সালের এই দিনটিতেই আমরা মা’কে চিরতরে হারিয়ে ফেলেছি। সেই থেকে এ দিনটি একান্তই আমাদের হয়ে গেছে বিশেষ দিন হিসেবে। মায়ের অকালে চলে যাওয়াতে ভেতরটা ভীষণ ফাঁকা ফাঁকা লাগে।

সারাক্ষণই মনে হয় কী যেন নেই। আর মাঝে মধ্যে রাতের ঘুমের বালিশই হয়ে উঠে একটি পুকুর বা খাল। কান্নার আওয়াজ কে শুনে অন্ধ রাতে।

এমনি করে করে আর কত বছর কাটাবো এরকম মা হীন সেই প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খায় মনে প্রানে। অসীম এক স্তব্ধতা প্রতি মুহুর্তেই গ্রাস করে রাখে মন-প্রাণ। নিঃসীম নিরবতাই যেন আনন্দ। কাঁদতে চাইনা তারপরও বারবার ভারি ভারি অশ্রু বিন্দু এসে চোখ দুটোকে ঝাঁপসা করে ফেলে।

বিশেষ করে গতকাল থেকেই নিজেকে স্থির রাখতে পারছিলাম না। দৈনন্দিন কাজকর্মেও ছন্দপতন ঘটছে মনের অজান্তেই। কিন্তু তবুও জীবন থেমে নেই বিরামহীন ছুটা।

তারপরেও প্রত্যাশা পূরণের আশা, স্বত:স্ফূর্তভাবে নিজের কাজটিতে মনোযোগ দেয়া কিংবা স্বাভাবিক জীবনে অভ্যস্ত হওয়া এসব আর আগের মত হয়ে উঠে না কোনভাবেই। মা যখন সবাইকে ছেড়ে চিরতরে অনন্তলোকে যাত্রা করেন তখন জীবনের প্রাণ।

চাতুর্য সবসময় মানুষকে উচ্ছ্বল, প্রাণবন্ত রাখতে পারে না।সব আনন্দই উপভোগ করা সম্ভব হয় না। অজানা এক শূণ্যতা সারাক্ষণ আচ্ছন্ন করে রাখে নিজেকে। আমি সেই পরিস্থিতির শিকার। আমার পরিবারের সবাই আসলে শোকে কাতর এখনো। মায়ের কথা মনে পড়লে ভেঙ্গে পড়ে হু-হু করে কান্না শুরু হয়।

আসলে সন্তানদের জীবনে মায়ের আসন হৃদয়ের সবটা জুড়েই। কেউবা তা প্রকাশ করতে পারেন খুব সহজে। আবার কোন কোন সন্তান তার প্রতিটি হৃদয় স্পন্দনে গভীর ভাবে তা উপলব্ধি করেন, কিন্তু প্রকাশ ক্ষমতায় তেমন পারদর্শী নন।

বিশাল এক ছায়ার নাম ‘মা’। সন্তানের জীবনে মায়ের কোন বিকল্প নেই। মায়া, মমতা, আদর, স্নেহের এক অফুরন্ত ভান্ডার। জাগতিক জীবনে এক নি:স্বার্থ ও নিরাপদ আশ্রয়স্থল। যাদের বাবা-মা বেঁচে আছেন তারা নি:সন্দেহে সৌভাগ্যবান, পৃথিবীতে চিরসুখী মানুষ।

আমি সেই সৌভাগ্যবঞ্চিতদের দলে। আজ যখন মাকে কাছে পেতে চাই,সময় দিতে চাই মায়ের কষ্টের কিছুটা অংশীদার হতে চাই, নিজের সমস্ত সামর্থ্য দিয়ে সেবা-যত্ন করতে চাই সর্বোপরি মাকে সুখী করতে চাই কিন্তু তা আর হল না।যেদিকে তাকাই সর্বত্রই কেবল কষ্টের হাতছানি। এই সুখের দিনে আমাদের মা নেই।

আমার পরিবারে যখন যার যার অবস্থানে এখন সচল ঠিক সেই সুখের সময় মা আমাদের মাঝে নেই। সেই শুণ্যতা আমরা কোনভাবেই পূরন করতে পারছিনা। মায়ের স্মৃতি আর আমাদের মানুষ করার স্বপ্ন ভাসছে চোখে। কিন্তু সেই স্বপ্ন কিভাবে পূরণ করবো। মা সব সময়ই তুমি আমাদের সাথেই থাকো, হয়তবা ডাকতেও পারিনা, ছুঁতেও পারিনা; কিন্তু এ দিনটি এলেই আরও বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি।

আমাদের সব আনন্দ-বেদনার সঙ্গী ছিলে তুমি। জীবনের প্রতিটি বাঁকে মায়ের উপস্থিতি খুবই জরুরি। অথচ ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! তোমার স্মৃতি আর অস্তিত্বকে উপলব্ধি করেই আমার সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। অথচ এক সময় নিজের ভালোলাগাকে তুচ্ছ করে পরম যত্নে তুলে রাখতে আমার জন্য।

আজ আল্লাহর কাছে চাওয়া, তোমাকে যেন শান্তিতে রাখে। আজকে নিজে যখন মা, তখন তোমার পরিশ্রম, উৎকণ্ঠা, দু:খ-কষ্ট, ভালোলাগা-মন্দলাগা কিছুটা হলেও উপলব্ধি করছি বৈকি। আসলে তুমি ছিলে জীবনে মহামূল্যবান সম্পদ, মণিরত্ন। মা তুমি নেই বলে আজ কেউ খবর নেয়না।

মা তুমি আমাদের মাঝে নেই ভাবতে বড় কষ্ট লাগে। প্রতিদানের মানসিকতা নিয়ে মায়েরা সন্তান বড় করেন না। তবুও বারবার মনে পড়ছে তোমাকে কি তোমার যোগ্য মর্যাদা দিতে পেরেছি। সে অপরাধবোধ আর অপারগতার জন্য ক্ষমা চাওয়া ছাড়া এ মুহুর্তে আর কীই বা করার আছে পারলে ক্ষমা করো। সাফল্যে আর তোমার উচ্ছ্বাসময় হাসি চোখে পড়ে না।

নানা প্রতিকূলতায় আশার বাণী শোনাও না। তুমি বড্ড সরল মনের মানুষ ছিলে। আবেগের আকূলতায় তোমার মূখটি ভেসে ওঠে স্মৃতির মণিকোঠায়। কারণে-অকারণে কত না কষ্ট দিয়েছি তোমাকে। নি:স্ব-নি:সঙ্গ তোমাকে কখনোই শান্তি দিতে পারিনি, হয়তবা জীবনভর শুধু উৎকণ্ঠা আর সীমাহীন দু:শ্চিন্তায় কেটেছে তোমার অনেকটা সময়। বলতে দ্বিধা নেই,

তুমি ছিলে সৃজনশীল শৈল্পিক মনের একজন সরল-সাধারণ মানুষ। সেজন্য সন্তান হিসেবে আমরা গর্বিত। জীবন আর জগৎ সম্পর্কে ছিল তোমার গভীর দৃষ্টিভঙ্গি। কী পেয়েছো আর কতটা পেতে পারতে তার হিসাব করে লাভ নেই। দুর থেকে দোয়া করো, যেন সব অশুভ অকল্যাণ আমাদের স্পর্শ না করে। পারিবারিক বন্ধন যেন আরও সুদৃড় হয়।

.. মা আজ আর লিখতে পারছিনা।
পরিশেষে-অগো মা তোমার-আমার
দেখা হবে জান্নাতের সীড়িতে…

আরো দেখুন
error: Content is protected !!