আর নয় ‘অটো পাস’, পরীক্ষা দিয়েই পেরোতে হবে এসএসসি-এইচএসসি
নিউজ ডেস্ক
স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের অধীনে এই দু’টি বৃহত্তম পাবলিক পরীক্ষা আয়োজনের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে
গত বছরের মতো “অটো পাস” পদ্ধতিতে ফলাফল না দিয়ে এ বছর মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা গ্রহণের পরিকল্পনা করছে সরকার।
এ বিষয়ে ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি নীতি চূড়ান্ত করে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের অধীনে এই দু’টি বৃহত্তম পাবলিক পরীক্ষা আয়োজনের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
এর আগে, সরকার কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে আগামী ২৩ মে থেকে স্কুল-কলেজ পুনরায় চালু করার ঘোষণা দিয়েছিল। যদি ২৩ মে থেকে স্কুল-কলেজ পুনরায় চালু হয়, তবে এসএসসি পরীক্ষা এ বছরের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসে এবং এইচএসসি পরীক্ষা এই বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হতে পারে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন বলেন, “করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা এ বছর এসএসসি এবং এইচএসসি শিক্ষার্থীদের জন্য অন্য কোনো বিকল্প পদ্ধতি অনুসরণ করব না। শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে গুরুত্বের সাথে পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণের বার্তা পৌঁছে দিতে বলা হচ্ছে।”
গত বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা মহামারি শুরু হওয়ার পূর্বেই পাঠ্যক্রম শেষ করতে পারলেও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা সেই সময়ের মধ্যে প্রাথমিক পাঠ্যক্রম সম্পন্ন করতে পেড়েছিল। ফলে গত বছর এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও প্রাদুর্ভাবের কারণে এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল করেছিল কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে সরকার “অটোপাস” পদ্ধতির মাধ্যমে এসএসসি ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছিল।
তিনি জানান, “এবছর সংক্ষিপ্ত পাঠ্যক্রমের উপর ভিত্তি করে পরীক্ষা নেওয়া হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু হলেই এসএসসি শিক্ষার্থীরা ৬০ দিন এবং এইচএসসি শিক্ষার্থীরা ৮০ দিনের জন্য ক্লাস করবে। পরবর্তীতে পাঠ্যক্রমের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পরীক্ষা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ক্লাস সমাপ্তি এবং পরীক্ষা গ্রহণের মাঝে দুই সপ্তাহের ব্যবধান থাকতে পারে। আর যদি স্কুল-কলেজ পুনরায় চালু হতে এক বা দুই মাস দেরি হয় তাহলে পরীক্ষাও পিছিয়ে দেওয়া হবে। তবে ক্লাস চলবে।”
সিদ্ধান্তটি পরিবর্তিত হবে না প্রতিশ্রুতি দিয়ে সচিব জানান, “আমরা চাই না শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা ছাড়াই সার্টিফিকেট নিয়ে যাক।”
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিএসএইচই) সৈয়দ মোঃ গোলাম ফারুক বলেন, তারা ইতোমধ্যে সকল শিক্ষাবোর্ডকে পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বলেছেন।
করোনাভাইরাস সংকটের আগে, ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখে এসএসসি পরীক্ষা এবং এপ্রিল মাসের ১ তারিখ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হত। মহামারির প্রাদুর্ভাব ঘটলে সরকার পরীক্ষাগুলো বাতিল বা বিলম্বের সিদ্ধান্ত নেয়।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের “অটো পাস” দেওয়া হলেও তারা ক্লাসের মাধ্যমে পড়াশোনা শেষ করে পরীক্ষার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করেছিল।
“অটো পাস” ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের সমস্যায় ফেলবে মন্তব্য করে রাশেদা চৌধুরী বলেন, “অটো পাস”পদ্ধতির পুনরাবৃত্তি করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। ক্লাসের মাধ্যমে ন্যূনতম পাঠ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।”
এ বিষয়ে অধ্যাপক মনজুর আহমেদ বলেন, গত বছর ব্যক্তিগত ক্লাসের অনুপস্থিতিতে অনলাইন ক্লাস এবং সংসদীয় টেলিভিশন শিক্ষার্থীদের লোকসান কিছুটা হলেও কাটানো গিয়েছিল।
“সরকার যেহেতু এই বছর পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞi তাই এবছর ‘ অটো-পাস ’পদ্ধতিটি শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বাদ দেওয়া উচিত,” বলে তিনি পরামর্শ দেন।
পরীক্ষার বিকল্প থাকা উচিত নয় উল্লেখ করে শিক্ষানীতি-২০১০ কমিটির সদস্য অধ্যাপক শাইখ একরামুল কবির বলেন, শিক্ষার্থীদের মেধা পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়।
‘অটো পাস’ এর বছর
পরীক্ষা গ্রহণ না করে ফলাফল দেবার কারণে গত বছরের এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার ফলাফল শতভাগ পাসের হারের সাক্ষী৷
গত বছর নয়টি শিক্ষা বোর্ড থেকে সর্বমোট ১১ লাখ ৪৫ হাজার ৩২৯জন পরীক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষার জন্য নিবন্ধভুক্ত ছিল যাদের শতভাগ পাস করেছিল। অন্যদিকে প্রায় ৮৮ হাজার ৩০২ জন মাদ্রাসা বোর্ড থেকে আলিম পাস এবং ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৪৬ জন কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে পাস করেছিল।
গত বছর এইচএসসি পরীক্ষায় মোট ১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ অর্জন করেছিল। যার মধ্যে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে ৫৭ হাজার ৯২৬ জন, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড থেকে ২৬ হাজার ৫৬৮জন, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড থেকে ৯ হাজার ৩৬৪ জন, যশোর শিক্ষা বোর্ড থেকে ১২ হাজার ৮৯২ জন, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড থেকে ১২ হাজার ১৪৩ জন, বরিশাল শিক্ষা বোর্ড থেকে ৫ হাজার ৫৬৮জন, সিলেট শিক্ষা বোর্ড থেকে ৪ হাজার ২৪২ জন, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড থেকে ১৪ হাজার ৮৭১ জন এবং ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড থেকে ১০ হাজার ৪০ জন জিপিএ ৫ পেয়েছিল।