১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘ইয়াস’ রূপ নিতে পারে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে

নিউজ ডেস্ক
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এখনও অস্তিত্ব লাভ করেনি। তবে এটি যে আসছে- তা নিয়ে কার্যত কোনো অনিশ্চয়তা নেই। উত্তর আন্দামান সাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির পরিবেশ তৈরি হচ্ছে, যা শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ পেতে পারে। আগামী বুধবার ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের ওডিশা-পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের খুলনা উপকূলে পৌঁছতে পারে। তবে এ নিয়ে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়ছে না।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস নিয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকেই ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর গতি-প্রকৃতিসহ নানা বিষয়ে বিস্তারিত আপডেট দিচ্ছে তারা। সে অনুযায়ী দেশটির ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গে মাইকিং করে মৎস্যজীবীদের সতর্ক করা হচ্ছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরও একটি ঘূর্ণিঝড়ের আভাস দিয়েছিল চলতি মাসের শুরুতে। মে মাসের শেষ দিকে ঘূর্ণিঝড়ের কথা বলা হয় সেই পূর্বাভাসে।

এরপর গত বৃহস্পতিবার রাত ২টা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের কোনো বার্তা ছিল না।

বিশ্বের কয়েকটি দেশের আবহাওয়ার পূর্ভাবাস মডেলের বরাত দিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর গত বৃহস্পতিবার রাত ২টার পর আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের ফেসবুক পেজে ‘ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক বার্তা’ শিরোনামে তিন লাইনের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, এমনিতে আমরা দৈনিক একবার আবহাওয়ার পূর্ভাবাস দিচ্ছি। আর ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে তিন ঘণ্টা পরপর পূর্বাভাস দেওয়া হবে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এখনও সৃষ্টি হয়নি। আজ শনিবার কিংবা আগামীকাল রোববার ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি না হলে আমরা এভাবে বার্তা দিই না।

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি বঙ্গোপসাগর থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলো ও ভারতের হলদিবাড়ি ও আশপাশের এলাকায় আঘাত হানতে পারে। তবে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার আগে নিশ্চিত করে কিছুই বলা যাচ্ছে না। ঘূর্ণিঝড়টির শক্তি কেমন হতে পারে, এ বিষয়ে জানাতে পারেননি এই আবহাওয়াবিদ। তিনি বলেন, আগে থেকে এর শক্তি সম্পর্কে বলা যাচ্ছে না।

আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে আমরা এই মাসে ঘূর্ণিঝড় হতে পারে বলে জানিয়েছিলাম। এটি একটি অ্যালার্ট মেসেজ। যখন লঘুচাপ হবে এবং ঘূর্ণিঝড় হবে, তখন নিয়মিত বিশেষ বুলেটিন প্রচার করা হবে।

গতকাল শুক্রবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এটি পরবর্তী সময়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে এবং ২৬ মে ওডিশা-পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশের খুলনা উপকূলে পৌঁছতে পারে।

কানাডার সাসকাচুয়ান ইউনিভার্সিটির আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক বাংলাদেশি পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে প্রবেশের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার। অপেক্ষাকৃত কম গতিবেগের বাতাসের কারণে এই ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির সক্ষমতা সম্বন্ধে অনেক মানুষ বিভ্রান্ত হতে পারে।

তিনি বলেন, ২৬ মে ভরা পূর্ণিমা। ফলে চন্দ্র, সূর্য ও পৃথিবী একই অক্ষে অবস্থান করবে। চন্দ্র ও সূর্যের মিলিত অভিকর্ষে ওই দিন উপকূলীয় এলাকায় প্রাকৃতিক নিয়মেই দুই থেকে তিন ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হবে। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে যার সঙ্গে যুক্ত হবে স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ থেকে ১০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস। ২৬ মে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ ও ভারতের উপকূলে আঘাত হানলে উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ থেকে ১০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের সম্মুখীন হবে। বেড়িবাঁধের অপেক্ষাকৃত দুর্বল স্থানগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস নিয়ে মোস্তফা কামাল বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস মডেলগুলোর কল্যাণে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের কথা পাঁচ থেকে ১৭ দিন আগেই এখন জানা যায়। আঘাত হানার দু-তিন দিন আগেই ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ নিশ্চয়তা দিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের পথ জানা যায়। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর সাধারণত একটি পূর্বাভাস দেওয়ার পর ছয় থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত আর কোনো আপডেট দেয় না। একটি পূর্বাভাসে ২ থেকে ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত দেওয়ার পরের পূর্বাভাসেই হঠাৎ তা বাড়িয়ে ৯ বা ১০ নম্বর মহা বিপদ সংকেত জারি করে।

জানা গেছে, জাপানের আবহাওয়াবিষয়ক কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ হিমাওয়ারি থেকে বঙ্গোপসাগরের ওপর সৃষ্ট যে কোনো ঘূর্ণিঝড়ের ছবি পাওয়া যায় প্রতি ১০ মিনিট অন্তর। সে ছবি বিশ্নেষণ করে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞরা যে কোনো ঘূর্ণিঝড় সম্বন্ধে ধারাবাহিকভাবে পূর্বাভাস দিতে পারেন। প্রতি ১০ মিনিট না হোক, প্রতি ৩০ মিনিটে কিংবা প্রতি ঘণ্টায় আপডেট দিতে পারেন তারা।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!