২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

কুবিতে হল ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ

কুবি প্রতিবেদক।।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবারও কাজী নজরুল ইসলাম হল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

এতে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তবে দফায় দফায় সংঘর্ষ হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

গতকাল (০৯ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্রলীগ কর্মী সেলিম রেজাকে পথ থেকে সরে দাঁড়াতে বলে কাজী নজরুল ইসলাম হল ছাত্রলীগ নেতা ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল রায়হান।

নামাজ শেষে রায়হানের কাছে বিষয়টি জানতে চায় বঙ্গবন্ধু হলের সেলিম রেজা, রিফাতসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী। এ সময় দুই হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। উভয়পক্ষের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে।

এরপরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে পূর্ব ঘটনার জের ধরে ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এসময় ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ দু’পক্ষের মধ্যে কয়েক দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।

সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাদাৎ মো সায়েম, বঙ্গবন্ধু হলের ছাত্রলীগকর্মী ইকবাল, রাকিব, অনুপ দাশ, সোহাগ, নজরুল হলের সাকিব হাসান দীপ, আশরাফুল রায়হানসহ দুইপক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। আহতরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রাতে হলে ফিরে আসেন।

এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পুলিশ মোতায়েনের দাবি জানায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

একই ঘটনার জেরে শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা লাঠি, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া জড়িয়ে পড়েন।

এসময় এক পক্ষ আরেক পক্ষের উপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। ইট পাটকেলের আঘাতে দুই পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আহতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। আহতদের চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম এবং হল প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতাকর্মী এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখা ছাত্রলীগের কর্মী সাকিব হাসান জানান, আমাদের হলের পরিধি ছোট এবং নেতাকর্মী কম হওয়ায় বঙ্গবন্ধু হলের নেতাকর্মীরা আমাদের কোন মূল্যায়ন করছে না। তারা আমাদের সাথে উগ্র আচরণ করছে। আমাদের প্রায় ২০ জনের উপরে নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছে, প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তারা উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে ব্যার্থ।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী আল নাঈম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এমন গুরুতর সংঘর্ষের ঘটনা তেমন নেই। গতকাল দুপুরে উত্তেজনার সৃষ্টি। এরপরে রাতে এতটা ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছে। প্রশাসনের উচিত ছিল তখনি পুলিশ মোতায়েন করা। তারা ব্যার্থ হয়েছে।

এদিকে একাধিক ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মীর সাথে কথা বলে জানা যায়, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ নিয়মিত ক্যাম্পাসে থাকেননা। গতকাল থেকে কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও তিনি দুপুরে ক্যাম্পাসে আসেন।

শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ জানান, আমি নিজেও আহত। একা এখানে কোন কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিনা। আমার একার পক্ষে নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি।

তবে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, এমন ঘটনা এই কমিটির প্রথম। হয়তো এটা আমাদের ব্যার্থতা। দুই হলের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আমি অভিযোগ শুনেছি। সাংবাদিকদের কাছে ফুটেজ আছে আমি দেখে ব্যবস্থা নিবো।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম বলেন, গতকাল রাতে সংঘর্ষের পর আমি সারারাত ধরে হলেই অবস্থান করি এবং পরিবেশ ঠান্ডা রাখতে চেষ্টা করি। কিন্তু দুপুরে ছেলেরা খাওয়ার জন্য বের হলে তারা হামলার শিকার হয়।

এতে হলের ৪০-৫০জন শিক্ষার্থী বের হয়। আমরা এখানে মাত্র তিনজন মানুষ ছিলাম যাদের পক্ষে এতজনকে থামানো সম্ভব হয় নি। যার ফলে পুনরায় দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

সর্বশেষ আমার হলের সবাইকে আমি হলে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হই। আর যারা আহত হয়েছে তাদেরকে হসপিটালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।

সংঘর্ষের ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাদাৎ মো সায়েম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দোষারোপ করে বলেন, অনেক অভিযোগ করছে আমি নাকি ইন্দনদাতা। মূলত আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছি দুপক্ষকে থামানোর। আমি বলব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখানে ব্যার্থ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল প্রশাসন ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু কাজী নজরুল ইসলাম হল প্রশাসনের কোন ভূমিকা ছিলনা৷ আবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডি চাইলে গতকাল রাতের পর এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়না। কিন্তু তারা নিরব ছিল। তারা হয়ত চাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে আরেকজন খালেদ সাইফুল্লাহর লাশ পড়ুক।

এ ঘটনায় কাজী নজরুল ইসলাম হলে প্রভোস্ট ড. মিহির লাল ভৌমিককে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

তবে বারবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটনলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই কেন জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, প্রকটোরিয়াল বডি ও দুই হলের প্রশাসন সবসময় এখানেই ছিল। আমরা আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতেছিলাম এর মধ্যেই তারা আবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আব্দুল মঈনকে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে আছেন বলে ফোন রেখে দেন।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!