২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুমিল্লা টাউন হলে ওদের ক্রিকেট খেলা হতাশা কাটানোর অনুপ্রেরণা

নিউজ ডেস্ক
কুমিল্লা শহরের প্রানকেন্দ্র টাউন হল। কর্ম ব্যস্ততা শেষে টাউনহলেই সবাই আড্ডা দেন। সেখানেই বিশ পচিশ জন প্রতিবন্ধী যুবক ক্রিকেট খেলতে আসেন। তাদের মধ্যে কেউ অটোরিকসা চালায়। কেউ বা দিন মজুরের কাজ করে। যারা একেবারেই অক্ষম তারা ভিক্ষা করেন। তাদের মধ্যে কেউ জন্মগত প্রতিবন্ধী কেউ বা দূর্ঘটনার পর হয়েছেন।

একদল প্রতিবন্ধী যুবক। কারও হাতে সমস্যা। কেউ বা হাঁটেন খুঁড়িয়ে। কারও নেই দৃষ্টিশক্তি। জীবিকার জন্য সপ্তাহের ছয় দিন কাজ করেন।

আর সপ্তাহের একদিন একসঙ্গে মিলিত হন। তখন কারও হাতে থাকে ব্যাট; কারও হাতে বল। টাউন হল মাঠে স্ট্যাম্প বসিয়ে মেতে ওঠেন ক্রিকেট খেলায়। এভাবে নিজেদের সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে প্রাণচঞ্চল হন।

এই প্রতিবন্ধী যুবকদের খেলা দেখতে বেশ কিছু মানুষ নিয়মিত আসেন। তারা খেলা বেশ উপভোগ করেন। ওদের খেলা স্রেফ বিনোদন নয়, অন্যদের জীবনের হতাশা কাটিয়ে ওঠার অনুপ্রেরণাও বটে।

কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্র টাউন হল। কর্মব্যস্ততা শেষে এই টাউনহলেই সবাই আড্ডা দেন। সেখানেই বিশ পঁচিশজন প্রতিবন্ধী যুবক ক্রিকেট খেলতে আসেন। তাদের মধ্যে কেউ অটোরিকশা চালান। কেউ বা করেন দিনমজুরের কাজ। যারা একেবারেই অক্ষম, তারা মানুষের কাছে হাত পাতেন। এদের কেউ জন্মগত প্রতিবন্ধী, কেউ বা দুর্ঘটনার পর হয়েছেন।

এদেরই একজন ১৯ বছর বয়সী জুম্মন। অটোরিকশা চালান। কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ধামতী গ্রামের জুম্মনের পরিবারে ১০ ভাইবোন। জুম্মনসহ ২ ভাই ও ২ বোন জন্মগত প্রতিবন্ধী।

ক্রিকেট খেলা নিয়ে জুম্মন বলেন, প্রতি শুক্রবারে টাউন হল মাঠে ২০/২৫ জন প্রতিবন্ধী খেলতে আসেন। এভাবে সারা বছর তারা খেলেন। আর বছরের শেষে একটি টুর্নামেন্ট হয়। খুবই আড়ম্বপূর্ণভাবে টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রায় পাঁচ বছর আগে সড়ক পার হতে গিয়ে বাসচাপায় একটি পা হারান সোহাগ মিয়া। এরপর হকারের কাজ আর করতে পারেননি। এখন ভিক্ষে করে সংসার চলে। তার একটি মেয়ে আছে।

তারপরও শুক্রবার এলেই টাউনহল মাঠে আসেন সোহাগ। ক্রাচে ভর দিয়ে এক পায়ে ক্রিকেট খেলেন অলরাউন্ডার সোহাগ। তিনি জানান, করোনার সময় খেলা বন্ধ রেখেছিলেন। এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসায় আবারও তারা ক্রিকেট নিয়ে সরব হচ্ছেন।

কুমিল্লা নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে চলছে ক্রিকেট খেলা
টাউনহল মাঠে প্রতিবন্ধী যুবকদের খেলা দেখতে আসেন আবুল কায়েস। ব্যাংক কর্মকর্তা কায়েসকে অনুপ্রেরণা জোগায় জুম্মন-সোহাগদের খেলা।

তিনি বলেন, ‘আসলে মানুষ চাইলে সব কিছু করতে পারে। এই প্রতিবন্ধী ছেলেগুলো তার প্রমাণ। যেসব ছেলেমেয়ে হতাশায় ভুগছে, আমি মনে করি, তারা টাউন হল মাঠে এসে প্রতিবন্ধী যুবকদের খেলা দেখতে পারেন। আশা করি, তাদের কিছু করতে না পারার হতাশা কেটে যাবে।’

কুমিল্লা ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক ম্যানেজার বদরুল হুদা জেনু বলেন, ‘প্রতিবন্ধী যুবকদের ক্রিকেট খেলার যে অদম্য ইচ্ছে, এটা সমাজের জন্য ইতিবাচক। তাদের নিয়ে বড় পরিসরে আয়োজন করা গেলে ভালো লাগত।’

জুম্মন-সোহাগদের পৃষ্ঠপোষকতা করে কুমিল্লা আদর্শ সদর প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ। এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রায়হান রহমান হেলেন বলেন, ‘সাড়ে তিন বছর ধরে প্রতিবন্ধী ছেলেরা ক্রিকেট খেলছে। তাদের জন্য সংগঠনের সদস্যরা বার্ষিক যে অনুদান দেয় তা দিয়েই তাদের খেলাধুলার সরঞ্জাম কেনা হয়।’

প্রতি বছর কুমিল্লা আদর্শ সদর প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদের উদ্যোগে প্রতিবন্ধীদের জন্য টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়। এই বছর কোরবানি ঈদের আগে এমন আরেকটি টুর্নামেন্টে আয়োজনের পরিকল্পনার কথা নিশ্চিত করেন সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর রায়হান রহমান হেলেন।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!