২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুরবানির পশু জবেহ সম্পর্কিত জরুরি মাসায়েল

✒️ধর্ম ডেস্ক
। মুফতি মুহাম্মদুল্লাহ ক্বাসেমী ।।
প্রশ্নঃ ১|রাতে কুরবানি করার বিধান কি?
উত্তরঃ জবেহ ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে রাতে কুরবানি করা মাকরূহ৷ অন্যথায় করা যেতে পারে। (সূত্র- দুররুল মুখতার, খন্ড- ৬, পৃষ্ঠা- ৫৩১)

প্রশ্নঃ ২|কুরবানির পশু জবেহের ছুরি বা অস্ত্র কেমন হওয়া দরকার?
উত্তরঃ জবেহের অস্ত্র ধারালো হওয়া উত্তম। (সূত্র- বাদায়েউস সানাঈ, খন্ড- ৪, পৃষ্ঠা- ২২৩)

প্রশ্নঃ ৩|কুরবানির পশু জবেহের ছুরি কখন ধার করে নেওয়া উত্তম?
উত্তরঃ কুরবানির পশু জবেহের ছুরি পশু শোয়ানোর পূর্বেই ধার করে নেওয়া মুস্তাহাব। পশু শোয়ানোর পর ছুরি ধার করা মাকরূহ। (সূত্র- দুররুল মুখতার, খন্ড- ৬, পৃষ্ঠা- ৪৯৪ এবং ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, খন্ড- ৫, পৃষ্ঠা- ৩৩১)

প্রশ্নঃ ৪|পশু জবেহের পর কতক্ষন পর্যন্ত অপেক্ষা করা উত্তম?
উত্তরঃ জবেহের পর পশুর দেহ পুরোপুরি নিস্তেজ হওয়ার পূর্বে চামড়া ছিলা মাকরুহ৷
(সূত্র- বাদায়েউস সানাঈ, খন্ড- ৪, পৃষ্ঠা- ২২৩ এবং দুররুল মুখতার, খন্ড- ৬, পৃষ্ঠা- ৪৯৫ এবং ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, খন্ড- ৫, পৃষ্ঠা- ৩৩২)

প্রশ্নঃ ৫|জবেহকারী কেমন হওয়া প্রয়োজন?
উত্তরঃ জবেহকারী অবশ্যই মুসলমান হতে হবে। কাফেরের জবেহকৃত পশু হারাম৷ (সূত্র- দুররুল মুখতার, খন্ড- ৬, পৃষ্ঠা- ৪৯৫ এবং ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, খন্ড- ৫, পৃষ্ঠা- ৩২৮)।

প্রশ্নঃ ৬|মহিলা বা নাবালক ছেলে-মেয়েদের জবেহের হুকুম কি?
উত্তরঃ জবেহকারী চাই পুরুষ বা মহিলা কিংবা নাবালেগ ছেলে-মেয়ে হোক, যদি তারা জবেহের সঠিক পদ্ধতি জানে এবং জবেহের দোয়া পড়ে তাহলে তাদের দ্বারা জবেহকৃত পশু খাওয়া হালাল৷ (সূত্র- দুররুল মুখতার, খন্ড- ৬, পৃষ্ঠা- ৪৯৬ এবং ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, খন্ড- ৫, পৃষ্ঠা- ৩২৮)।

প্রশ্নঃ ৭|কুরবানির পশু নিজ হাতে জবেহ করা কেমন?
উত্তরঃ কুরবানির পশু নিজ হাতে জবেহ করা মুস্তাহাব। (সূত্র- দুররুল মুখতার, খন্ড- ৬, পৃষ্ঠা- ৫৪২)।

প্রশ্নঃ ৮|কুরবানির নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা কি জরুরী?
উত্তরঃ কুরবানির নিয়ত মনে মনে করা যথেষ্ট। মুখে উচ্চারণ করা আবশ্যক নয়। তবে যবেহের দোয়া মুখে বলা আবশ্যক। (সূত্র- রদ্দুল মুহতার, খন্ড- ৬)।

প্রশ্নঃ ৯|কোন দিকে মুখ করে কুরবানির পশুকে শোয়ানো সুন্নাত?
উত্তরঃ কুরবানির পশুকে কিবলামুখী করে শোয়ানো সুন্নত। এর ব্যাতিক্রম করা মাকরূহ। (সূত্র- দুররুল মুখতার, খন্ড- ৬, পৃষ্ঠা- ৪৯৫ এবং ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, খন্ড- ৫, পৃষ্ঠা- ৩৩২)।

প্রশ্নঃ ১০|জবেহের মধ্যে একাধিক ব্যক্তি শরীক হলে বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার পড়ার বিধান কি?
উত্তরঃ জবেহের মধ্যে একাধিক ব্যক্তি শরীক হলে প্রত্যেককেই বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার পড়তে হবে। (সূত্র- ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, খন্ড- ৫, পৃষ্ঠা- ৩২৯)।

প্রশ্নঃ ১১|একবার বিসমিল্লাহ বলে অনেক পশু জবেহ করা যাবে কি?
উত্তরঃ একবার বিসমিল্লাহ বলে একাধিক পশু জবেহ করা জায়েয নয়। (সূত্র- রদ্দুল মুহতার, খন্ড- ৬)।

প্রশ্নঃ ১২|কুরবানির পশুর কয়টি রগ কাটা আবশ্যক?
উত্তরঃ কুরবানির পশুর ৪টি রগের মধ্য থেকে কমপক্ষে ৩টি রগ কাটা আবশ্যক। যেমন- (১)খাদ্যনালী, (২)শ্বাসনালী, (৩, ৪) রক্তনালী। এর মধ্য থেকে ১, ২ নং রগসহ যেকোনো একটি রক্তনালী কাটা বাধ্যতামূলক। (সূত্র- রদ্দুল মুহতার, খন্ড- ৬, পৃষ্ঠা- ৪৯৩ এবং ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া খন্ড- ৫, পৃষ্ঠা- ৩৩০)।

প্রশ্নঃ ১৩|কুরবানির দিনে কুরবানির নিয়তে মোরগ-মুরগি ইত্যাদি জবেহ করার বিধান কি?
উত্তরঃ কুরবানির দিনে কুরবানির নিয়তে মোরগ-মুরগি ইত্যাদি জবেহ করা জায়েয নয়। (সূত্র- দুররুল মুখতার, খন্ড- ৬, পৃষ্ঠা- ৫২১)।

প্রশ্নঃ ১৪|যদি শরীকদের মধ্য থেকে কোনো একজন আগে ঈদের নামায পড়ে নেয় এবং বাকিদের কেউ তখনও ঈদের নামায না পড়ে থাকে, তাহলে আগে নামায আদায়কারী ব্যক্তি কি বাকিদের পক্ষ থেকে কুরবানি করতে পারবে?
উত্তরঃ আগে নামায আদায়কারী বাকিদের পক্ষ থেকে তাদের অনুমতিক্রমে কুরবানি করতে পারবে। কেননা, শহরের যেকোনো এক স্থানে নামায হয়ে গেলে শহরের বাকি জায়গায় কুরবানি করা জায়েয। (সূত্র- ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম, খন্ড- ১৫, পৃষ্ঠা- ৫০৯ এবং বাহরুর রায়েক, খন্ড- ৮, পৃষ্ঠা- ৩২২)।

প্রশ্নঃ ১৫|কুরবানির পশু চুরি হয়ে গেলে কুরবানির বিধান কি?
উত্তরঃ কুরবানির পশু চুরি হয়ে গেলে নতুন পশু ক্রয় করে কুরবানি করা ওয়াজীব। (সূত্র- দুররুল মুখতার, খন্ড- ৬, পৃষ্ঠা- ৫৩৫)

প্রশ্নঃ ১৬|জবেহের সময় পশুর দেহ থেকে মাথা আলাদা হয়ে গেলে তার হুকুম কি?
উত্তরঃ পশুর দেহ থেকে মাথা আলাদা করে ফেলা মাকরূহ। তবে পশু হালাল এবং কুরবানিও হয়ে যাবে। (সূত্র- ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, খন্ড- ৫, পৃষ্ঠা- ৩৩১)

প্রশ্নঃ ১৭|কুরবানির পশু জবেহ করার বিনিময়ে পারিশ্রমিক দেয়া-নেয়ার বিধান কি?
উত্তরঃ কুরবানির পশু জবেহ করার বিনিময়ে পারিশ্রমিক দেয়া-নেয়া জায়েয। তবে কুরবানির পশুর কোনো অংশ পারিশ্রমিক হিসেবে দেয়া-নেয়া জায়েয নেই৷ (সূত্র- কেফায়াতুল মুফতি, খন্ড- ৮, পৃষ্ঠা- ২৪৩)

লেখক: ফারেগে দারুল উলমূ দেওবন্দ এবং শিক্ষক ও খতীব- জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদ্রাসা -ঢাকা।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!