‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে স্বামীকে খুন, প্রেমিকসহ স্ত্রী গ্রেপ্তার
👁️নিউজ ডেস্ক ✒️
গাজীপুরে দুধের সঙ্গে নেশা জাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে ঘুমন্ত স্বামীকে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করে স্ত্রী ও তার প্রেমিক। পরে লাশ গুম করতে পাশের নির্মাণাধীন বাড়ির মেঝের বালুর নিচে চাপা দিয়ে রাখে। তারা ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে হত্যা পরিকল্পনার ছক আঁকেন।
এ ঘটনায় এক সন্তানের জননী ওই নারী ও তার প্রেমিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ক্লুলেস খুনের এ ঘটনায় নিহতের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উন্মোচন করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)।
রোববার (১৮ জুলাই) বিকেলে জিএমপি’র উপ-কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) জাকির হাসান এ তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেপ্তাররা হলেন- কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বড়াইকান্দি এলাকার শুকুর আলীর মেয়ে রূপালী খাতুন (২৫) ও জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার নীলেরচর এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে মোহাম্মদ সুজন মিয়া (১৯)।
জিএমপি’র উপ-কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) জাকির হাসান জানান, প্রায় ১০ বছর আগে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার চর গোয়ালমারী এলাকার আব্দুল বারেকের ছেলে জাহিদুল ইসলাম (৩২) রূপালী খাতুনকে বিয়ে করেন।
তাদের ৭ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। গাজীপুরের কাশিমপুর থানার শৈলডুবি এলাকায় সপরিবারে ভাড়া বাসায় থেকে নরসুন্দরের (নাপিত) কাজ করতেন জাহিদুল।
গত ৬ জুলাই রাতে তিনি নিখোঁজ হন। নিখোঁজের ১০দিন পর গত ১৬ জুলাই দুপুরে পচা দুর্গন্ধের সূত্র খুঁজতে গিয়ে প্রতিবেশী সফর উদ্দিন সাফার নির্মাণাধীন বাড়ির একটি কক্ষের মেঝের বালুর নীচে চাপা দিয়ে রাখা এক ব্যক্তির হাত ও হাঁটুর আংশিক দেখতে পায় এলাকাবাসী। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে বালুর নীচ থেকে জাহিদুল ইসলামের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে।
এ ঘটনার পর মূল আসামিকে গ্রেপ্তারে কাশিমপুর, কুড়িগ্রাম ও জামালপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশের একাধিক টিম। তথ্য প্রযুক্তি ও ম্যানুয়াল ইন্টেলিজেন্সের সহায়তায় হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শনিবার (১৭ জুলাই) কুড়িগ্রাম থেকে রূপালী খাতুনকে এবং জামালপুর থেকে সুজন মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে গেপ্তাররা স্বীকার করে যে, খাবারের সঙ্গে নেশা জাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে ঘুমন্ত জাহিদুলকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধার আশায় পথের কাঁটা দুর করতে জাহিদুলকে খুন করেন রূপালী ও তার প্রেমিক সুজন। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বালিশ জব্দ করা হয়।
রোববার (১৮ জুলাই) আসামিদের গাজীপুর মেট্রোপলিটন আদালতে হাজির করা হলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে তারা। এর প্রেক্ষিতে লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস জাহিদুল ইসলাম খুনের রহস্য উন্মোচিত হয়।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানায়, প্রায় ৯ মাস ধরে অপেক্ষাকৃত কম বয়সের সুজনের সঙ্গে রূপালী খাতুনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এর জেরে স্বামী সন্তান ফেলে রূপালী একাধিকবার সুজনের কাছে চলে যায়। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে জাহিদুল ও রূপালীর মাঝে দাম্পত্য কলহ চলে আসছিল। এক পর্যায়ে প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধাতে পথের কাঁটা দুর করার জন্য স্বামীকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেয় রূপালী। প্রেমিক সুজনকে নিয়ে সে ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে জাহিদুলকে হত্যা ও লাশ গুম করার পরিকল্পনা করে।
তারা আরও জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৬ জুলাই রাত ১১টার দিকে স্বামী জাহিদুলকে দুধের সঙ্গে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাওয়ায় রূপালী। পরে রাত ১টার দিকে ঘরে ঢুকে সুজন হত্যার জন্য ঘুমন্ত জাহিদুলের হাত-পা চেপে ধরে। এসময় রূপালী ভিকটিমের বুকের উপর চড়ে বসে এবং বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে জাহিদুলের মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে নিহতের লাশ পার্শ্ববর্তী ছফর উদ্দিনের নির্মাণাধীন বাড়ির একটি কক্ষের মেঝেতে বালুর নীচে চাপা দিয়ে রাখে তারা।
এ ঘটনার পর রূপালী খাতুন গত ১২ জুলাই কাশিমপুর থানায় একটি অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, গত ৭ জুলাই জাহিদুল তার বড় ভাইকে বিমানবন্দর থেকে আনতে গিয়ে নিখোঁজ হন। এরপর রূপালী খাতুন ও সুজন গাজীপুর ত্যাগ করেন।