২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের প্রথম ছবি পৃথিবীর জন্মের আগের মহাবিশ্ব

মহানগর নিউজ ডেস্ক।।
পৃথিবীর জন্মেরও আগের গহিন মহাশূন্যের হাজারো ছায়াপথের ছবি তুলে পাঠিয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ‘জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ’।

এতে দেখা যায়, গোল, চ্যাপ্টা ও লম্বাটে নক্ষত্রপুঞ্জ। তার প্রতিটি বিন্দু স্পষ্ট ধরা পড়েছে ছবিতে। আবার এর পাশেই রয়েছে ঝকঝকে তারার আলো। খালি চোখেও বোধ হয় এত নিখুঁত ছবি দেখা সম্ভব হতো না। তবে নাসা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং বৃহত্তম দূরবীক্ষণ যন্ত্র ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের সাহায্যে সেই ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছে।

ছবিটি প্রকাশ করে সংস্থাটি জানিয়েছে, বহির্বিশ্বের এখন পর্যন্ত যত ছবি তোলা হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে ধারালো এবং গভীরতম ইনফ্রারেড ছবি এটি। জেমস ওয়েবের তোলা ছায়াপথগুচ্ছের এমন ছবি এই প্রথম প্রকাশ করা হলো।

নাসা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী স্পেস স্যাটেলাইটের তোলা গহিন মহাশূন্যের ছবির অ্যালবাম প্রকাশ করার এক দিন আগেই গত সোমবার অ্যালবামের একটি ছবি হোয়াইট হাউসে দেখিয়ে দেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা ১৩ বিলিয়ন বা এক হাজার তিনশ বছর আগেকার ছবি দেখছি। কারণ, বিন্দুর মতো যে তারাগুলো রয়েছে, তার আলো আসতে এক হাজার তিনশ বছর লেগেছে।’

গহিন মহাশূন্যের ছায়পথগুচ্ছ ‘এসএমএসিএস-৭২৩’ পৃথিবীর জন্মের আগে যেমন ছিল, তাই উঠে এসেছে জেমস ওয়েবের তোলা প্রথম ‘ডিপ ফিল্ড’ ছবিতে। ছবিটি তুলেছে ওয়েব টেলিস্কোপের নিয়ার-ইনফ্রারেড ক্যামেরা (এনআইআরক্যাম)।

নাসা তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, ওয়েব টেলিস্কোপ ‘এসএমএসিএস-৭২৩’-এর যে ছবি তুলেছে, ছায়াপথগুচ্ছটি ৪৬০ কোটি বছর আগে সেই অবস্থায় ছিল।

সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, ওয়েব টেলিস্কোপ মহাকাশের যে অংশটির ছবি তুলেছে, সেটি মহাকাশের ক্ষুদ্রতম একটি অংশ মাত্র। কতটা ছোট, তা বোঝাতে নাসা বলেছে- হাতের তালুতে ধরা একটা ছোট্ট বালুর দানা বলা যেতে পারে ওই ছবিকে। তবে ওয়েবের সাহায্যে আগামী দিনে বহির্বিশ্বের আরও রহস্যভেদ করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন নাসার বিজ্ঞানীরা।

জেমস ওয়েব যে ইনফ্রারেড তরঙ্গের ছবি তুলেছে, তা হাবল টেলিস্কোপের ক্ষমতার অনেক বাইরে। বিভিন্ন ইনফ্রারেড তরঙ্গের এমন একটি ছবি তুলতে হাবল টেলিস্কোপের কয়েক সপ্তাহ লাগত বলে জানিয়েছে নাসা।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন জেমস ওয়েবের একটি ছবি হোয়াইট হাউসে দেখালেও নাসা ছবির পুরো অ্যালবাম প্রকাশ করে মঙ্গলবার মার্কিন পূর্বাঞ্চলীয় স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায়; বাংলাদেশের সময়ে যা রাত সাড়ে ৮টা। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইসা) এবং কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সির (সিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে ওই ছবিগুলো প্রকাশ করবে নাসা। ওয়েবসাইটে উন্মোচন অনুষ্ঠান লাইভ দেখাবে নাসা।

সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে লাগে প্রায় ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড। এর মানে হলো, ঠিক সূর্যাস্তের সময় আমরা যে সূর্য দেখি, তা আসলে ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড আগেই অস্ত গেছে। এভাবে যত দূরের বস্তু আমরা দেখি, সেগুলোর আসলে তত আগের চেহারা আমরা দেখতে পাই।

নাসার জেমস ওয়েব মহাবিশ্বের যে অংশের ছবি তুলেছে, সে অংশ থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে লাগে প্রায় ৪৬০ কোটি বছর। ফলে যে ছবিটি টেলিস্কোপ তুলেছে, সেটি আসলে ৪৬০ কোটি বছর আগের চেহারা দেখাচ্ছে। গতকাল তাহলে ওই অংশের চেহারা কেমন? সেটি জানা যাবে ওই একই নিয়মে ৪৬০ কোটি বছর পরে! সূত্র :বিবিসি, রয়টার্স ও এএফপি।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!