দাঁত সুস্থ রাখার ১০টি গোপন রহস্য
লাইফস্টাইল ডেস্ক।।
আমরা মাত্র ২ পাটি দাঁত পেয়েছি, তাই এদের রক্ষা করার জন্য আমাদের উচিৎ সঠিক যত্ন নেওয়া। কিন্তু সঠিক পরামর্শ এবং অজ্ঞতার কারণে ধীরে ধীরে নষ্ট করে ফেলছি আমাদের অমূল্য সম্পদ এই দাঁতগুলো। কীভাবে ক্ষতির হাত থেকে দাঁতকে রক্ষা করা যায় তার কৌশল জানিয়ে দিলেন ডেন্টিস্টরা। কৌশল গুলো পানির মত সোজা কিন্তু আপনার দাঁতকে রক্ষার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী।
আমরা এই টিপসগুলো সংগ্রহ করেছি দন্ত-ক্ষয় প্রতিরোধ করে আপনার মুক্তঝরা হাসি ধরে রাখার জন্য। দয়া করে দাঁতের ক্ষয়পূরণ নিয়ে লেখা শেষের অসাধারণ বোনস টিপসটি পড়তে ভুলবেন না কিন্তু।
১. তেল লাগান
অয়েল ড্রয়িং বা অয়েল পুলিং কৌশলটি ব্যবহার করে দাঁতের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলো বের করে আনা যায়, এসব ব্যাকটেরিয়া দাঁতের ক্ষয় হওয়ার জন্য দায়ী। এর জন্য প্রয়োজন অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান সমৃদ্ধ তেল। যেমন তিলের তেল বা নারিকেল তেল। এর যেকোনো একটি তেল মুখে নিয়ে ২০ মিনিট মাউথওয়াশের মত কুলকুচি করতে হবে। এরপর পানি দিয়ে কুলি করে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
২. চিনি এড়িয়ে চলুন
অতিরিক্ত চিনি খেলে আপনার দাঁত ক্ষতিগ্রস্ত হবে নিশ্চিত। শুধু মিষ্টি বা চকলেটের চিনি নয়, এড়িয়ে যেতে হবে মিষ্টি স্বাদের যেকোনো খাবার। বিশেষ করে কোমল পানীয় এবং চুইংগাম খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। এসব খাবারে ব্যবহৃত চিনি দাঁতে আটকে থাকে এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার জন্য দাঁত ক্ষয়ের পরিবেশ তৈরি করে দেয়।
৩. প্রতিদিন ২ বার দাঁত মাজুন
প্রতিদিন সকালে আপনি হয়তো নিয়ম করে দাঁত ব্রাশ করেন। কিন্তু এটাই যথেষ্ট বলে ধরে নিলে ভুল করবেন। রাতের খাবার খেয়ে অবশ্যই আরও একবার দাঁত ব্রাশ করার অভ্যাস করুন। কারণ রাতের খাওয়া শেষে খাদ্যকণাগুলো দাঁতের ফাকে ফাকে গিয়ে জমা হয় এবং সারা রাত ধরে এগুলো মুখের ভেতরের পরিবেশকে অস্বাস্থ্যকর করে রাখে। ফলে খুব দ্রুত দাঁতে পাথর জমতে শুরু করে এবং দাঁত ক্ষয় হওয়া তখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তাই প্রতিদিন ঘুমানোর আগে এবং সকালের নাস্তা শেষে দাঁত ব্রাশ করুন। হয়তো ভাবছেন বাসি মুখে নাস্তা করতে হবে? না, সকালের নাস্তার আগে শুধু পানি দিয়ে মুখ কুলকুচি করে নিলেই হবে। কারণ রাতে খাবার পর তো আপনি ব্রাশ করেছেনই।
৪. জিহ্বা ব্রাশ করুন
ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার আশ্রয়স্থল শুধু দাঁত আর মাড়ি নয়। আপনার জিহ্বাও এদের বড় একটি আস্তানা। প্রতিবার দাঁত ব্রাশ করার সময় তাই জিহ্বাও নিয়ম করে ব্রাশ করতে হবে। টাং ক্লিনার নামে বাজারে একধরনের চাঁছনি পাওয়া যায় অল্প টাকায়। দাঁত রক্ষার জন্য এইটুুকু বিনিয়োগ তো করতেই পারেন, তাই না। আর ইদানিং ব্রাশের উল্টো পাশেও জিহ্বা পরিষ্কার করার জন্য খাঁজ তৈরি করে দিয়ে থাকে। ব্রাশ কেনার সময় এমন খাঁজওয়ালা ব্রাশ কিনতে পারেন। তাহলে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হয়ে যাবে।
৫. সামান্য পরিবর্তনেও নজর দিন
যখন আপনার দাঁতের স্বাস্থ্যের বিষয়, তখন ছোট খাটো কোনো পরিবর্তনকেও গ্রাহ্য করুন। মাড়ি কি সামান্য লাল দেখাচ্ছে? লালা কি সামান্য লালচে রংয়ের? নাকি দাঁতে হালকা ব্যথা অনুভব হচ্ছে? ডেন্টিস্টের কাছে ছুটুন এখনি। অবহেলা করলে এই সামান্য পরিবর্তনগুলোই বিশাল রূপ ধারণ করবে। এসব উপসর্গই জানান দেয় বড়সড় কিছু হতে যাচ্ছে।
৬. গ্রিন টি বা রং চা খান
গ্রিন টি এবং রং চা আপনার দাঁত সুস্থ রাখতে ভূমিকা রাখে। চায়ের ক্যামেলিয়া সিনেনসিস দাঁতের ক্ষয় রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে বলে প্রমাণিত হয়েছে। মিষ্টি খাবার খাওয়ার পর গ্রিন টি বা রং চা যাই পান, খেয়ে নিন। মুখের ভেতরে আটকে যাওয়া চিনির ক্ষুদ্র কণা ধুয়ে নিয়ে যাবে।
৭. অতিরিক্ত ব্রাশ করবেন না
অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। এমনকি অতিরিক্ত দাঁত ব্রাশও। দিনে দুই বারের বেশি ব্রাশ করলে দাঁতের উপরে যে শক্ত আবরণ থাকে সেই এনামেল ক্ষয় হতে শুরু করে। জোরে ব্রাশ করলেও একই সমস্যা হতে পারে। একটা ডিমের উপর ব্রাশ দিয়ে জোরে ঘষে দেখবেন, খোসা ভেঙ্গে যাবে। ডিমেরই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে দাঁতের অবস্থা চিন্তা করুন। দিনের পর দিন জোরে ব্রাশ করলে এর ক্ষয় হবে না তো করা ক্ষয় হবে?
৮. দাঁতের জন্য উপকারী খাবার খান
কিছু খাবার আছে যা দাঁতের ক্ষয় রোধ করে। দুগ্ধজাত খাবার বিশেষ করে পনির দাঁতের পাথর দূর করতে সক্ষম এবং এনামেলকেও মজবুত করে তুলতে পারে। আবার ফলের মধ্যে আপেলের কথা উল্লেখ করা যায়। যদিও আপেল সামান্য অ্যাসিডিক এবং মিষ্টি, তবুও এটি লালা উৎপাদনে সাহায্য করার মাধ্যমে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ হ্রাস করে।
৯. ফ্লস ব্যবহার করতে ভুলবেন না
শুধু দাঁত ব্রাশ করাই যথেষ্ট না। দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে জমে থাকা খাদ্যকণা এবং ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র সমাধান হলো ফ্লসিং। ফ্লসিং করা কোনো জটিল বিষয় না। এই সামান্য কাজটুকু করতে পারলে আপনার দাঁত রক্ষা পাবে খুব বড় কোনো ক্ষতির হাত থেকে। নিয়মিত ফ্লসিংয়ের অভ্যাস দাঁতের পাথর হতে দেয় না, মাড়ির রোগ প্রতিরোধ করে, মুখের দুর্গন্ধ প্রতিরোধ করে। শুধু ব্রাশ করার চেয়ে দাঁত পরিষ্কারের জন্য ফ্লসিং আরো কার্যকর উপায়।
১০. বছরে ২ বার দাঁতের ডাক্তার দেখান
ডেন্টিস্টরা আপনার মুখ পরীক্ষা করে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। ফলে গুরুতর কোনো সমস্যা হওয়ার আগেই তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে আপনার কোনো অসুবিধা হবে না। তবে এজন্য চাই ডেন্টিস্টের পরামর্শ। বছরে অন্তত ২ বার ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়ার সময়সূচী ঠিক করা থাকলে আপনি দাঁতের ব্যাপারে আরো যত্নশীল হবে।
ছবিতে যার দাঁত দেখতে পাচ্ছেন তিনি একদম প্রাথমিক পর্যায়ে দাঁতের গর্ত চিহ্নিত করতে সক্ষম হন। ঠিক তখন থেকেই শুরু করেন নারিকেল তেল পুলিং যা উপরে ইতিমধ্যে আলোচনা করা হয়েছে। তিনি চিনি খাওয়া বন্ধ করেছেন। আঠালো এবং অ্যাসিডযুক্ত কোনো খাবার মুখে দেন না। তিনি এমন টুথপেস্ট ব্যবহার করেন যা পিপারমেন্ট অয়েল, ম্যাগনেসিয়াম অয়েল এবং বেকিং সোডা দিয়ে তৈরি। ঘুমাতে যাওয়ার আগে মুখে পুরে দেন যষ্ঠিমধুর এটি ছোট্ট মূল।
একটা সামান্য টিপসে আপনি তীব্র ব্যথা নিয়ে ডেন্টিস্টের কাছে দৌড়ানোর হাত থেকে বেঁচে যাচ্ছেন। আপনারও কি এমন কোনো গোপন ট্রিক্স আছে যা ব্যবহারে যেকারো দাঁতের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে? থাকলে নীচের কমেন্টে আমাদের জানান।