নায়িকার ঠাঁই এখন কাশিমপুর কারাগারে
নিউজ ডেস্ক।।
মডেল মৌ ও প্রযোজক রাজসহ আরো চারজন একই ঠিকানায়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় দুই দফায় ৬ দিনের রিমান্ড শেষে নায়িকা পরীমণিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল শুক্রবার তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে সিআইডি।
এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা।
অপরদিকে, তার আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ পরীমণির জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা মহানগর হাকিম তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন পরীমণি। এছাড়া গতকাল পরীমণি সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুকে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। অন্য মামলায় রিমান্ড শেষে মডেল মরিয়ম আক্তার মৌ, প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ ও তার সহযোগী সবুজ আলীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে পরীমণির জামিন আবেদনে তার আইনজীবী মজিবুর রহমান আদালতে উল্লেখ করেন, পরীমণি ‘ভারটিগো’ এবং ‘প্যানিক অ্যাটাক’-এর রোগী। তিনি দীর্ঘসময় পুলিশ কাস্টডিতে (হেফাজতে) অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বিপর্যস্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। হেফাজতে থাকলেও মামলা সংক্রান্ত জিজ্ঞাসাবাদে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটিত হয়নি। জরুরি চিকিৎসার স্বার্থে তাকে জামিনে মুক্তি দেয়া আবশ্যক।
অপরদিকে, পরীমণিকে জামিন না দিয়ে জেলহাজতে পাঠানোর আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা। আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, মামলার তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আসামি শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে স্মৃতিমনি ওরফে পরীমণিকে জেলহাজতে আটক রাখা একান্ত প্রয়োজন। আসামি জামিনে মুক্তি পেলে মামলার তদন্তে বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি পলাতক হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
সেখানে আরও বলা হয়, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে মামলার বিষয়ে আসামি (পরীমণি) বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত দিয়েছেন। মামলার তদন্তের স্বার্থে তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। মামলার অভিযোগের সঙ্গে তার জড়িত থাকার ব্যাপারে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তদন্ত অব্যাহত আছে। মামলার তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাকে জেলহাজতে আটকে রাখা একান্ত প্রয়োজন।
গত ৪ আগস্ট বিকেলে পরীমণির বনানীর বাসায় অভিযান চালায় র্যাবের গোয়েন্দা দলের সদস্যরা। প্রায় ৪ ঘণ্টার অভিযান শেষে রাত ৮টার দিকে তাকে আটক করে র্যাব সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ করার কথা জানায় র্যাব। এ ঘটনায় পরের দিন পরীমণির বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে র্যাব বাদী হয়ে একটি মামলা করে।
পরীমণির জামিন আবেদনে যেসব কারণ দেখানো হয়েছে : আইনজীবী মজিবুর রহমান জামিনের আবেদনে বলেন, আসামি পরীমণি একজন প্রথম সারির চিত্রনায়িকা। তিনি ‘ফোর্বস ম্যাগাজিন’ ডিজিটাল তারকা হিসেবে বিশ্বের ১০০ জনের মধ্যে আসামির নাম রয়েছে। যা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জন্য গৌরবজনক। আসামি জেলহাজতে আটক থাকলে চলচ্চিত্রের অঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তাছাড়া বিভিন্ন কোম্পানি ও চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সাথে যে চুক্তি হয়েছে তা ভঙ্গেরও সম্ভাবনা রয়েছে। সম্প্রতি ‘প্রীতিলতা’ নামক সরকারি সিনেমার জন্য ফটোশুট হয়েছে। এছাড়াও কয়েকটি চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের শিডিউল ভেঙে পড়েছে।
আবেদনে আরও বলা হয়, পরীমণির বিরুদ্ধে ১৮.৫ লিটার মদ ও অন্যান্য মাদক রাখার অভিযোগ করা হয়েছে, যা আসামির দখল থেকে উদ্ধার করা হয়নি।
ঘটনার পেছনে ভিন্ন কিছু আছে : পরীমণির আইনজীবী : আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় আইনজীবী মজিবুর রহমান বলেন, আমরা আদালতে বলেছি, এফআরআই ত্রুটিপূর্ণ। র্যাব সদস্য অপারেশন করেছেন, তার পূর্বানুমতি ছিল না। এটি আর্ম অ্যাক্ট ব্যাটালিয়ান অর্ডিনেন্স অনুযায়ী ছিল না। ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় তারা কাস্টডিতে রাখতে পারেন না।
বিজ্ঞ আদালতে সময় মতো প্রডিউস না করে ফৌজদারি কার্যবিধির ৬১ ধারার ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে। এভাবে আদালতে নিয়ে আসার একটা কারণ ছিল, একটা রহস্য ছিল। আমার মক্কেল পরীমণি আগে বলেছে, এখনও বলছে, দ্যায়ার ইজ অ্যাফ্যাক্ট বিহান্ড দ্য সিন। এটা আমরা আদালতে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি। আদালত তবুও মনে করছে জামিন দেয়া যাবে না।
পর্দায় আড়ালে কী আছে? এ বিষয়ে পরীমণি তাকে কিছু বলেছেন কি না এমন প্রশ্নে মজিবুর রহমান বলেন, মামলাটি যেহেতু তদন্তনাধীন আছে, সেহেতু আমরা বলতে পারব না। তদন্ত কর্মকর্তা নিশ্চয়ই সেটা উদ্ঘাটন করবেন। আমার মক্কেল আগেও বলছে, এখনও বলছে, আমি (পরীমণি) প্রতিহিংসার শিকার, ষড়যন্ত্রের শিকার।
তিন দফা রিমান্ড শেষে কারাগারে মডেল মৌ : মাদকসহ গ্রেপ্তার মডেল মরিয়ম আক্তার মৌকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আসামিপক্ষে করা জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে শুক্রবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাঈদ তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তিন দফায় ৮ দিনের রিমান্ড শেষে মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের করা মাদক মামলায় মৌকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক প্রবীণ কুমার ঘোষ। মৌয়ের পক্ষে ঢাকা বারের সভাপতি আবদুল বাতেন জামিনের আবেদন করেন।
শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। গত ১ আগস্ট রাতে মৌ-এর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের বাসায় অভিযান চালিয়ে মদ, ইয়াবাসহ তাকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। পর দিন আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর গত ৬ আগস্ট তার আরও তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর ১০ আগস্ট আবারও তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
জামিন নাকচ, প্রযোজক রাজও কারাগারে : বনানী থানায় দায়ের করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ ও তার সহযোগী সবুজ আলীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে হাজির করা হলে আদালত এ আদেশ দেন।
শুক্রবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেস্ট ধীমান চন্দ্র মন্ডলের আদালত রাজের জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়ে কারাগারে নিয়ে যেতে বলেন। গত ১০ আগস্ট ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আসামি রাজ ও তার সহযোগী সবুজ আলীর বিরুদ্ধে মাদক মামলায় দুই দিন এবং পর্নোগ্রাফির মামলায় চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে শুক্রবার তাদের আাদলতে হাজির করা হয়।
আদালতে রাজের পক্ষে আইনজীবী এস এম আখতারুজ্জামান হিমেল জামিন আবেদন করেন। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু এই জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন। শুনানি শেষে তাদের জামিন নামঞ্জুরের আদেশ দেন আদালত।