১৭ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাগলা মসজিদের আটটি দানের সিন্দুকে ১৬ বস্তা টাকা!

নিউজ ডেস্ক।।
কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদের আটটি দানের সিন্দুক খুলে পাওয়া যায় সাড়ে ১৬ বস্তা টাকা।

সারা দিন গণনা করে দেখা গেছে, এবার দান হয়েছে তিন কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার ৪১৫ টাকায়। নগদ অর্থ ছাড়াও দানবাক্সে মার্কিন ডলারসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও সোনা-রুপার গহনাও পাওয়া গেছে।

আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জেলা প্রশাসনের কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও মসজিদ কমিটির কর্মকর্তাদের সামনে এ সিন্দুকগুলো খোলা হয়।

এর আগে গত ১২ মার্চ দানবাক্স খোলা হয়েছিল। তখন সিন্দুকগুলোতে সব মিলিয়ে তিন কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা পাওয়া গিয়েছিল। তারও আগে গত বছরের ৬ নভেম্বর সিন্দুক খুলে পাওয়া যায় তিন কোটি সাত লাখ ১৭ হাজার ৫৮৫ টাকা।

পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, ‘এবার তিন মাস ২০ দিন পর মসজিদের সিন্দুক খোলা হয়েছে। আমরা দেড় বছর ধরে মসজিদের দানের মূল টাকা খরচ করছি না। এগুলো ব্যাংকে জমা রাখা হচ্ছে। যা দিয়ে এখানে একটি আন্তর্জাতিক মানের বহুতল আধুনিক সুযোগ-সুবিধাযুক্ত দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে।

ওই কমপ্লেক্সে ৬০ হাজার মুসল্লির একসঙ্গে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা থাকবে। নারীদের জন্য পৃথক নামাজের ব্যবস্থাও থাকবে সেখানে। থাকবে সমৃদ্ধ লাইব্রেরিসহ আরো নানা আয়োজন।

এ প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে ১১৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এরই মধ্যে আমরা একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিয়েছি। এতে প্রকৃতপক্ষে কত খরচ হবে তারা তা চূড়ান্ত করে আমাদের জানাবে। এরপর কাজ শুরু হবে কমপ্লেক্সের।

জেলা প্রশাসক এ সময় জানান, ইসলামিক কমপ্লেক্সের পুরো ব্যয় দানের টাকা থেকে করা হবে।

সকালে সিন্দুক খোলার পর টাকাগুলো বস্তায় ভরে মসজিদের দোতলায় নিয়ে গণনার কাজ শুরু করা হয়। দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ২০০ মানুষ দানের টাকাগুলো গুনছিল।

টাকার বস্তাগুলো একে একে ঢেলে দেওয়া হয় তাদের সামনে। এভাবে বস্তার পর বস্তা টাকা গণনার কাজ এগিয়ে চলে। একই সঙ্গে ব্যাংকের লোকজন মেশিন দিয়ে টাকাগুলো আবার গণনা করেন।

কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. গোলাম মোস্তাফার নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন নির্বাহী মাজিস্ট্রেট টাকা গণনার কাজ তদারক করেন। আরেক দল পুলিশ ও আনসার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল।

তিনি বলেন, এটি আসলে দেখার মতো ঘটনা। মানুষ তাদের মনোবাসনা পূরণের জন্য এখানে কোটি কোটি টাকা দান করেন। থাকে স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রাও।

মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ বলেন, মসজিদের দানের টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত থাকে। আর ওই টাকার লভ্যাংশ থেকে মসজিদের উন্নয়নকাজ করা হয়। তা ছাড়া গরিব অসহায় লোকদের আর্থিক সহায়তাসহ ক্যান্সারসহ জটিল রোগে আক্রান্তদের আর্থিকভাবে অনুদান দিয়ে মসজিদটি আর্তমানবতার সেবায় ভূমিকা রেখে চলেছে।

তিনি আর বলেন, করোনা মহামারির সময় মসজিদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা রোগীদের সেবার জন্য বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি এবং ওষুধপত্র কিনে দেওয়া হয়েছে। এমনকি দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের অনুদান দেওয়া হয় মসজিদের তহবিল থেকে। এসব সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড সারা বছরই করে থাকে পাগলা মসজিদ।

পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শওকত উদ্দিন ভূঞা জানান, বিভিন্ন মাদরাসার ১২০ জন ছাত্র, মসজিদের ৩৪ জন কর্মচারী ও রূপালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী টাকা গণনার কাজ করেছেন।

জানা গেছে, মসজিদের বিপুল অর্থ-সম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ২৯ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। ওই কমিটির সিদ্ধান্তে মসজিদের সম্পদ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!