১৪ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফজর নামাজ থেকে সূর্য ওঠা পর্যন্ত আমলের ‍ফজিলত

ধর্ম ডেস্ক।।
মানুষের বাস্তব জীবনে সুন্নাতের অনুসরণ ও অনুকরণ দুনিয়া ও পরকালের সফলতার একমাত্র পথ। ফজরের মাধ্যমে মানুষের দিন শুরু হয়। দিনের শুরুতে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জামাআতের সঙ্গে ফজর নামাজ আদায় করতেন। অতঃপর সূর্য ওঠা পর্যন্ত (আধা ঘণ্টা) কিছু সময় বসে জিকির-আজকার করতেন।

ফজরের নামাজ আদায়ের পর নামাজের স্থানে বসে তাসবিহ তাহলিলের এ আমলে রয়েছে অনেক ফজিলত। হাদিসে পাকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সময় নিজে সূর্যোদয়ের আগে নামাজের স্থান থেকে ওঠতেন না বরং তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আজকার, তেলাওয়াতসহ বিভিন্ন নেক আমলে অতিবাহিত করতেন। এ সামান্য সময়ের ফজিলত বর্ণনায় হাদিসে এসেছে-

> হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ফজর নামাজ আদায় করতেন, তখন (সূর্য পুরোপুরি ওঠে মাকরূহ ওয়াক্ত শেষ হয়) নামাজ (চাশতের নামাজ) জায়েজ হওয়ার সময় পর্যন্ত তাঁর বসার স্থান থেকে ওঠতেন না।

তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করার পর নামাজ জায়েজ হওয়ার সময় পর্যন্ত তাঁর বসার স্থানে বসে থাকবে, ওই ব্যক্তি একটি মকবুল হজ ও একটি মকবুল ওমরার সাওয়াব অর্জন করবে।’

> হজরত জাবের ইবনে সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ফজরের নামাজ আদায় করতেন তখন সূর্য ভালোভাবে ওঠা পর্যন্ত তাঁর বসার স্থানে চারজানু হয়ে বসে থাকতেন।’

হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ফজরের নামাজ আদায় করতেন তখন তাঁর নামাজের স্থানে বসে থাকতেন। মানুষেরা তার চারদিকে বসত। সূর্যোদয় পর্যন্ত তিনি এভাবে থাকতেন। এরপর তিনি একে একে তাঁর সব স্ত্রীদের ঘরে গিয়ে তাদেরকে সালাম দিতেন এবং তাঁদের জন্য দোয়া করতেন।’

> হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ফজরের নামাজের পরে সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর জিকিরে রত কিছু মানুষের সঙ্গে বসে থাকা আমার কাছে ইসমাইল আলাইহি সালামের বংশের ৪ জন ক্রীতদাসকে মুক্ত করার চেয়ে বেশি প্রিয়।

অনুরূপভাবে আসরের নামাজের পরে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর জিকিরে রত কিছু মানুষের কাছে বসে থাকা আমার কাছে ৪ ক্রীতদাস মুক্ত করার চেয়েও বেশি প্রিয়।’

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই ফজরের নামাজের পর নামাজের স্থানে সূর্যোদয় পর্যন্ত অবস্থান করে জিকির-আজকার, কুরআন তেলাওয়াত, তাসবিহ-তাহলিল ও নসিহতের মাধ্যমে সময় অতিবাহিত করতেন।

পরবর্তীতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবাগণও সুযোগমতো ফজরের নামাজের পর মসজিদে কিংবা ঘরে সূর্যোদয় হওয়া পর্যন্ত বসে ব্যক্তিগতভাবে জিকির-আজকার করতে ভালোবাসতেন।

বিখ্যাত তাবেয়ি মুদরিক ইবনে আওফ বলেন, আমি চলার পথে দেখলাম হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু ফজরের নামাজ আদায় করে বসে আছেন। আমি বললাম, বসে রয়েছেন কেন? তিনি বললেন, ‘সূর্যোদয়ের জন্য অপেক্ষা করছি।’

বিখ্যাত তাবেয়ি আবু ওয়াইল বলেন, আমি একদিন ফজরের নামাজের পর হজরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করলাম। আমরা তার ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইলাম। তিনি বললেন, ‘প্রবেশ কর।’ আমরা বললাম, ‘কিছু সময় আমরা অপেক্ষা করি, হয়ত বাড়ির কারো কোনো প্রয়োজন থাকতে পারে।’ তখন তিনি আমাদের দিকে ফিরে বসে তাসবিহ করতে থাকলেন।

তিনি বললেন, ‘হে আব্দুল্লাহর বাড়ির মানুষেরা, তোমরা গাফলতির চিন্তা করেছিলে!’ এরপর তিনি তার দাসিকে বললেন, দেখ তো সূর্য উঠেছে কিনা। সে বলল, ‘না’। পরে তৃতীয়বার যখন তিনি তাকে বললেন, ‘সূর্য ওঠেছে কিনা দেখ।’ তখন সে বলল, হ্যাঁ, সূর্য ওঠেছে।
তখন তিনি বললেন, আল্লাহর সব প্রশংসা, যিনি আমাদেরকে এই দিনটিও উপহার দিলেন। তিনি এই দিনে আমাদেরকে ক্ষমা করলেন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি প্রদান করেননি।

মনে রাখতে হবে

আল্লাহর রহমত ছাড়া কোনো মানুষই মুক্তি পাবে না। এমনটিই বলেছেন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রতি রহমত করতে কিংবা ক্ষমা করতে নেক আমল খুঁজবেন। তাইতো প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের জন্য অনেক ছোট ছোট কাজের বড় বড় প্রাপ্তির ঘোষণা দিয়েছেন। তন্মধ্যে ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত জিকির-আজকার অনেক কার্যকরী।

নেক আমল যেভাবে মানুষকে মুক্তি দিতে পারবে না আবার নেক আমল ছাড়া রহমতও লাভ করা যাবে না। তাই জীবনে সফলতা লাভে আল্লাহর রহমত কামনার পাশাপাশি নেক আমলের বিকল্প নেই।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ফজরের নামাজের পর নামাজের স্থানে বসে সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে জিকির-আজকার, তাসহিব-তাহলিল ও কুরআন তেলাওয়াত করে সময় অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!