মদিনায় মহানবী (সা.)-এর প্রথম জুমার খুতবা
ধর্ম ডেস্ক।।
মদিনায় হিজরত করার পর নবীজি (সা.) কিছুদিন মদিনার উপকণ্ঠে ‘কুবা’ নামক স্থানে কয়েক দিন অবস্থান করেন। পরবর্তী শুক্রবার তিনি মদিনার উদ্দেশে বের হন।
পথে জুমার সময় হলে তিনি জুমার খুতবা দেন এবং নামাজের ইমামতি করেন। এটিই ছিল মদিনায় তাঁর প্রথম জুমার নামাজ ও খুতবা। ঐতিহাসিক সে খুতবা নানা বিবেচনায় গুরুত্ব বহন করে। খুতবাটির ভাষান্তর করেছেন আতাউর রহমান খসরু।
‘সব প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য। আমি তাঁর প্রশংসা করছি, তাঁর কাছে সাহায্য চাইছি, তাঁর কাছে ক্ষমা চাইছি, তাঁর কাছে সুপথ প্রার্থনা করছি, তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করছি। আমি তাঁর প্রতি কুফরি করি না; বরং যারা কুফরি করে তাদের সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসুল।
তিনি তাঁকে পাঠিয়েছেন সুপথ, আলো ও উত্তম উপদেশ দিয়ে। এমন সময় পাঠিয়েছেন, যখন নবী-রাসুলের ধারাবাহিকতা ব্যাহত হয়েছে। পৃথিবীতে নামমাত্র ঐশী জ্ঞান টিকে আছে। ফলে মানুষ বিভ্রান্তিতে ডুবে আছে। পৃথিবীর আয়ুষ্কাল কমে এসেছে এবং কিয়ামত নিকটবর্তী হয়েছে।
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে সেই সুপথপ্রাপ্ত এবং যে তাদের অবাধ্য হবে সে বিভ্রান্তি, বাড়াবাড়ি ও চরম ভ্রষ্টতার শিকার হবে। আমি তোমাদের আল্লাহভীতির উপদেশ দিচ্ছি।
কেননা একজন মুসলিম অপর মুসলিমকে যে উপদেশ প্রদান করে তার মধ্যে আল্লাহভীতিই সর্বোত্তম। আল্লাহভীতি মানুষকে পরকালের পাথেয় সংগ্রহে উৎসাহিত করে। যদি মুমিনদের আল্লাহভীতির নির্দেশ দেওয়া হয়, তবে তোমরা তা বর্জন করো, যা আল্লাহ তোমাদের বর্জন করতে বলেছেন।
আল্লাহর স্মরণ ও উপদেশ প্রদানে আল্লাহভীতি থেকে উত্তম কিছু নেই। যে ব্যক্তি আল্লাহভীতি অনুসরণ করেছে সে আল্লাহর ভয়-ভীতি থেকে মুক্তি পেয়েছে। পরকালে আল্লাহভীতিই সত্যিকার বন্ধু।
যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে তার ও আল্লাহর মধ্যকার সম্পর্ক ঠিক করে নেবে এবং তার উদ্দেশ্য হবে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি, সেখানে কোনো জাগতিক স্বার্থ বা উদ্দেশ্য থাকবে না, আল্লাহ পৃথিবীতে তার সম্মান বৃদ্ধি করবেন। আর পরকালে তা হবে তার জন্য কল্যাণের ভাণ্ডার।
যেদিন সবচেয়ে বেশি মুখাপেক্ষী হবে ভালো কাজের। অন্যদিকে যার নেক আমলের পমিরাণ কম সে আল্লাহর দরবার থেকে পালাতে চাইবে।
আল্লাহ তোমাদের নিজের ব্যাপারে সতর্ক করছেন। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি দয়ালু। আল্লাহ সত্য বলেন এবং তাঁর অঙ্গীকার পূর্ণ করেন। তিনি কখনো অঙ্গীকার খেলাপ করেন না। আল্লাহ বলেন, ‘আমার কথার রদবদল হয় না এবং আমি বান্দার প্রতি কোনো অবিচার করি না।’ (সুরা কাফ, আয়াত : ২৯)
সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো তোমার পার্থিব ও অপার্থিব জীবনের ব্যাপারে প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে। কেননা যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার পাপ মার্জনা করেন, তাকে মহাপুরস্কার দেন।
যে আল্লাহকে ভয় করে সেই প্রকৃতপক্ষে সাফল্য লাভ করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহর ভয় তাঁর ক্রোধ, ক্ষোভ ও শাস্তি থেকে রক্ষা করে। তা মানুষের মর্যাদা বাড়ায় এবং আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে। সুতরাং তোমরা তোমাদের অংশ বুঝে নাও। আল্লাহর আনুগত্যে ত্রুটি কোরো না।
আল্লাহ তোমাদের তার কিতাব শিক্ষা দিয়েছেন এবং তাঁর পথ বাতলে দিয়েছেন, যাতে তিনি জানতে পারেন কারা সত্যবাদী এবং জানতে পারেন কারা মিথ্যাবাদী। আল্লাহ যেমন তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, তোমরাও মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কোরো এবং তার শত্রুদের শত্রু হিসেবে গ্রহণ কোরো। তিনি তোমাদের মনোনীত করেছেন এবং তোমাদের নাম রেখেছেন মুসলিম। যেন দলিল স্পষ্ট হওয়ার পর যার ধ্বংস হওয়ার সে ধ্বংস হয় এবং যে জীবিত থাকার সে জীবিত থাকে। আল্লাহ ছাড়া কোনো শক্তি নেই।
আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কোরো। মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য আমল কোরো। যে ব্যক্তি তার ও আল্লাহর মধ্যকার সম্পর্ক ঠিক করে নেয়, আল্লাহ তার ও মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক ঠিক করে দেন। কেননা আল্লাহ মানুষের ওপর কর্তৃত্বশীল, মানুষ আল্লাহর ওপর কর্তৃত্বশীল নয়। আল্লাহ মানুষের মালিক, মানুষের আল্লাহর কোনো কিছুর মালিক নয়। আল্লাহ সবচেয়ে বড় এবং মহান আল্লাহ ছাড়া কোনো শক্তি নেই।’ (আল বিদায়া ওয়ান-নিহায়া : ৩/২১৩; সিরাতে মোস্তফা : ১/৩৮৮)