যেভাবে ব্যর্থ হয় নবীজিকে হত্যার ষড়যন্ত্র
✒️ ধর্ম ডেস্ক
অব্যাহত জুলুম-নির্যাতনে মুসলমানদের যখন দেয়ালে পিঠ লেগে গিয়েছিল, তখন মুসলমানরা হিজরত করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। এই সংবাদ পেয়ে মক্কার কাফিররা হিজরত ঠেকাতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়।
তারা শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে মুসলমানদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে চেষ্টা করে। এমনকি কোনো কোনো সাহাবির সহায়-সম্পত্তির পাশাপাশি স্ত্রী-সন্তান কেড়ে নেয়। এমন পরিস্থিতিতেও মুসলমানদের বেশির ভাগ হিজরত করে মক্কা থেকে মদিনায় চলে যান।
মক্কার মুশরিকরা যখন কোনোভাবেই সাহাবিদের দেশত্যাগ ঠেকাতে পারল না এবং বুঝতে পারল নবীজি (সা.) মদিনায় গিয়ে পৌঁছালে কোনোভাবেই ইসলামের উত্থান তারা ঠেকাতে পারবে না, তখন তারা নবীজি (সা.)-কে প্রতিহত করতে মক্কার ‘পরামর্শ কেন্দ্রে’ একত্র হলো। বৈঠকে উমাইয়া বিন খালফ, আবু জাহাল, নদর বিন হারিসসহ মক্কার শীর্ষ স্থানীয় সাত ব্যক্তি নিল। কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায় শয়তানও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল। বৈঠকে আবু জাহাল নবীজি (সা.)-কে হত্যার পরামর্শ দেয়। নাউজুবিল্লাহ! সে বলে প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন যুবক হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করবে। যাতে বনু হাশিম ও বনু আবদে মানাফ প্রতিশোধ গ্রহণের চিন্তা করতে না পারে। সিদ্ধান্ত হয় রাতের আঁধারে তারা একযোগে নবীজির ওপর হামলা করবে। (মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস : ১/৩৮৫; আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ১৬৭-১৬৮)
পবিত্র কোরআনে এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করো, কাফিররা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তোমাকে বন্দি করার জন্য, হত্যা করার জন্য অথবা নির্বাসিত করার জন্য এবং তারা ষড়যন্ত্র করে এবং আল্লাহও কৌশল অবলম্বন করেন। আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৩০)
রাতের বেলা নীলনকশা বাস্তবায়নে আবু জাহাল, হাকাম ইবনে আস, উকবা ইবনে আবি মুয়িত, নদর ইবনে হারিস, উমাইয়া ইবনে খালফসহ ১১ ব্যক্তি মহানবী (সা.)-এর বাড়ি ঘেরাও করে। অন্যদিকে মহানবী (সা.) নিজের বিছানায় হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)-কে শুইয়ে দেন। আর এজন্যই তখন ইমাম আলী (আ.)এর শানে নিম্নোক্ত আয়াত নাজিল হয়:
وَ مِنَ النَّاسِ مَن یشْرِی نَفْسَهُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّـهِ وَ اللَّـهُ رَءُوفٌ بِالْعِبَادِ
এবং মানুষের মধ্যে এমনও আছে, যে আল্লাহর সন্তোষ লাভের জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত বিক্রয় করে দেয় এবং আল্লাহ (এরূপ) বান্দাদের প্রতি অতিশয় অনুগ্রহশীল। (সূরা বাকারা, আয়াত ২০৭)
ইসলামের চরম শত্রুরা নবী করিম (সা.)এর বিছানার চারদিকে ঘিরে যখন দেখলেন কেউ চাদর গায়ে শুয়ে আছেন এবং তারা যখন তাকে আঘাত করতে যাবে, তখন বুঝতে পারল সেখানে মহানবী (সা.)এর স্থানে ইমাম আলী (আ.) শুয়ে আছেন। আর এভাবেই শত্রুরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল এবং তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হল।