২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যে ফুলের খুশবোতে সারাজাহান মাতোয়ারা

ফুল ভালোবাসার প্রতীক। ফুল দিয়ে ভালোবাসা বিনিময় হয়। হযরত মুহাম্মদ (সা:) সারাজাহানের জন্য ফুল স্বরূপ। হযরত মুহাম্মদ (সা:) এমনই এক ফুল, যে ফুলের আদর্শের মধ্যে আল্লাহতায়ালার অবারিত রহমত বরকত ও করুণা নিহিত রয়েছে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমাদের যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সূরা আহযাব:২১)। হযরত মুহাম্মদ (সা:) নামক ফুলের আদেশ উপদেশ মানলে আল্লাহতায়ালার আদেশ উপদেশ মান্য করা হয়ে যায়। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর আনুগত্য করল সে আল্লাহর আনুগত্য করল।’ (সূরা নিসা: ৮০)।

কঠিন হাশরের ময়দানে আপনজন, প্রতিবেশি ও বন্ধুবান্ধব পরস্পর একে অপরের নিকট পরিচয় গোপন রাখবে। স্বামী তার স্ত্রীকে পরিচয় দিবে না, বাবা তার ছেলেকে পরিচয় দিবে না, ভাই তার বোনকে পরিচয় দিবে না, বন্ধু তার অপর বন্ধুকে পরিচয় দিবে না। কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (সা:) কারো নিকট পরিচয় গোপন করতে পারবেন না। কারণ আল্লাহতায়ালা মানব জাতির প্রত্যেককে তার ঈমাম ধরে ডেকে ডেকে হিসাব নিবেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,‘ স্বরণ কর, যেদিন আমি প্রত্যেক দলকে তাদের নেতাসহ আহবান করব, অতঃপর যাদেরকে তাদের ডান হাতে আমলনামা দেয়া হবে, তারা নিজেদের আমলনামা পাঠ করবে এবং তাদের প্রতি সামান্য পরিমানও জুলুম করা হবে না।’ (সূরা বনি-ইসরাঈল: ৭১)। হযরত মুহাম্মদ (সা:) আমাদের নবী। তাই আখিরাতে আল্লাহতায়ালার সন্তোষ্টি লাভ করতে হলে, ইহকালে আমাদেরকে হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর আদেশ উপদেশ অনুযায়ী চলতে হবে বা আমল করতে হবে। তার সুন্নতের উপর বেশি বেশি আমল করতে হবে তথা সুন্নতকে ভালোবাসতে হবে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি বলুল, তোমরা যদি আল্লাহ পাককে ভালোবাস, তাহলে আমার কথা মেনে চলো, আল্লাহ পাক ও তোমাদের ভালবাসবেন এবং তিনি তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন।’ (সূরা আল ইমরান: ৩১)।

কম-বেশি সৃষ্টি জগতের সকলে আল্লাহতায়ালার ইবাদত ও শোকর গুজারী করে। সৃষ্টিই তারস্রষ্টার আরাধনা বা উপাসনা করবে ইহাই স্বাভাবিক। সৃষ্টি ক‚লের মধ্যে হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর ক্ষেত্রে ইহার ব্যতিক্রম দেখা যায়। আল্লাহতায়ালা স্বয়ং নিজে এবং তাঁর ফেরেশতাগণ হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর উপর দুরূদ পড়ে থাকেন। আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাদেরকেও হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর উপর দুরূদ পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে ‘আল্লাহ নবীর প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁহার ফেরেশতাগণও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে। হে মুমিনগণ! তোমরাও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা কর ও তাহাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।’ (সূরা আহযাব:৫৬)। কুল কায়েনাতের মধ্যে যে বা যারা আল্লাহতায়ালার শোকর গুজারি করেন, তাদের মধ্যে হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর শোকর গুজারিকে আল্লাহতায়ালা সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়েছেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,‘আমিই আপনার স্মরনকে সর্বোচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছি।’ (সূরা আলাম নাশরাহ:৪)।

আল্লাহতায়ালা হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর শান-মানকে বিশেষ কোনো একটি স্থান, গোত্র বা জাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি। কুরআনে ইরশাদ এরশাদ হয়েছে ‘আমি আপনাকে বিশ্ব জগতের প্রতি কেবল রহমত স্বরূপ প্রেরণ করছি।’ (সূরা আম্বিয়া: ১০৭)। হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর দুনিয়ায় আগমণের সংবাদ অন্যান্য নবী (আ:) এর কিতাবেও উল্লেখ ছিল। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর স্বরণ করুন, যখন মারইয়াম পুত্র ঈসা বলেছিল, ‘হে বনী ইসরাইল, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর প্রেরিত রাসূল। আমার পূর্ববর্তী তাওরাতের সত্যায়নকারী এবং একজন রাসূলের সুসংবাদদাতা যিনি আমার পরে আসবেন, যার নাম আহমদ।’ (সূরা সাফ:৬)।

গোনাহগার উম্মতের জন্য দরদী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর চেয়ে দ্বিতীয় আর কেউ নেই। উম্মতের দুঃখ-বেদনা তাঁর হৃদয়কে স্পর্শ করে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের নিকট একজন রাসূল এসেছেন, তোমাদের দু:খ-কষ্ট তার কাছে কষ্ট দায়ক। তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, অত্যান্ত দয়ালু। (সূরা তাওবা:১২৮-১২৯)।

হাশরের ময়দানে পানির তৃষ্ণা নিবারণের একমাত্র উৎস হবে হাউজে কাউসার। সূর্যের প্রচন্ড তাপে মানুষ যখন পানির পিপাসায় দিক-বেদিক ছুটাছুটি করতে থাকবে। সর্বশেষ সকলে এসে হাউজে কাউসারের নিকট সমবেত হবে। হযরত মুহাম্মদ (সা:) নিজ হাতে হাউজে কাউসারের পানি দিয়ে উম্মতের তৃষ্ণা নিবারণ করবেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমিই আপনাকে হাউজে কাউসার দান করেছি।’ (সূরা কাউসার :১)।

হযরত মুহাম্মদ (সা:) কে পরিবার-পরিজনের চেয়ে বেশি ভালোবাসতে হবে। তা না হলে মুমিন হওয়া যাবে না। আর মুমিন হতে না পারলে, জান্নাতের আশা করা যাবে না। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর নবী মুমিনদের কাছে তাদের নিজেদের চাইতেও বেশী প্রিয় এবং নবীর স্ত্রীরা হচ্ছে তাদের মাতা; আল্লাহর কিতাবে অনুযায়ী আত্মীয় স্বজন সব মুমিন মুহাজির ব্যক্তির চাইতে একজন আরেকজনের বেশী নিকটতর।’ (সূরা আল-আহযাব: ৬)। হযরত আনাস (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের কেউই ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যে পর্যন্ত না আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সকল মানুষ থেকে অধিক প্রিয় হই।’ (বোখারি:১/১৫)।

সেদিন ১২ই রবিউল আউয়াল হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর আগমণে সারা জাহান মাতোয়ারা হয়েছিল। তাঁর আগমণের ধ্বনিতে আকাশ বাতাস আসমান জমিন উল্লাস করেছে। চারদিকে আল্লাহর রহমতের সুবাতাস বইতে ছিল। যা আজো অব্যাহত রয়েছে। সেদিনের মতো হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর আগমণের খুশবোতে পুলোকিত হওয়ার জন্য আল্লাহতায়ালা তৌফিক দান করুন। আমীন।
লেখক: ইসলামিক চিন্তাবিদ ও গবেষক।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!