২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুমিল্লায় স্ত্রীর পরকীয়া, ক্ষোভে-অভিমানে স্বামীর আত্মহত্যা

মহানগরনিউজ ডেস্ক।।
প্রায় ৮ বছরের প্রেমের সম্পর্ক থেকে অনেকটা পরিবারের অমতেই বিয়ে করেন এমরান হোসেন মুন্না ও সৈয়দা সাজিয়া শারমিন উষা। তারপর এক বছর না যেতেই তাদের দাম্পত্য জীবনে নেমে আসে অশান্তির পদধ্বনি।

স্ত্রী উষা ঢাকায় পড়াশুনার সুবাদে জড়িয়ে পড়েন পরকীয়ায়। নানাভাবে চেষ্টা করেও স্ত্রীকে পরকীয়া সম্পর্ক থেকে ফেরাতে না পেরে অবশেষে আত্মহত্যা করে এমরান হোসেন মুন্না (২৯)।

গত বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় কুমিল্লা শহরতলীর বারপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) স্ত্রী সৈয়দা সাজিয়া শারমিন উষার (২৮) বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন নিহতের পিতা মো. মতিউর রহমান।

স্থানীয় ও মামলা সূত্রে জানা যায়, শহরতলীর বারপাড়া এলাকার মো. মতিউর রহমানের পুত্র এমরান হোসেন মুন্না। আর লাকসামের রাজাপুর এলাকার খিলা বাজার গ্রামের সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের কন্যা সৈয়দা সাজিয়া শারমিন উষা।

একসময় কুমিল্লা কর্মাশিয়াল ইন্সটিটিউট (বর্তমানে সরকারি সিটি কলেজ) এ শিক্ষার্থী ছিল মুন্না ও উষা। দুইজন এক বছরের সিনিয়র-জুনিয়র। ফলে কলেজ জীবনে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তারা।

প্রেমের সম্পর্ক থেকে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের বছর খানেক পর থেকেই তাদের পারিবারিক জীবনে টানাপোড়ন শুরু হয়। উষা ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার সুবাদে বেশিরভাগ সময় ঢাকায় থাকতেন।

আর মুন্না প্রথমে কুমিল্লায় একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরি করলেও পরে চাকরি ছেড়ে কুমিল্লাতেই ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন। দিনদিন তাদের মধ্যে সম্পর্কে ফাটল ধরে।

মুন্নার পরিবারের অভিযোগ, উষা ঢাকায় সোহেল নামের এক ছেলের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে মুন্নাকে বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করত।

চাহিদা মতো টাকা দিতে না পারার অজুহাতে মরে যাওয়ার কথা বলে কটাক্ষ করত। এতে মানসিকভাবে মুন্না ভেঙ্গে পড়ে।

গত বুধবার সে আত্মহত্যার প্রস্তুতি নিয়ে স্ত্রীকে ছবি পাঠায় এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠায়। কিন্তু স্ত্রী উষা এতেও কর্ণপাত করেনি। বরং উল্টো উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলেন।

এতে মুন্না ক্ষোভে ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করে। পরে পরিবারের লোকজন শব্দ পেয়ে দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বাদ জোহর গুধির পুকুরপাড় ঈদগাহ ময়দানে এমরান হোসাইন মুন্নার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

এদিকে যুবলীগ কর্মী মুন্নার মৃত্যুতে রাজনৈতিক সহকর্মী ও সহপাঠিরা সরব হয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। তারা বিভিন্ন অবেগঘন স্ট্যাটাস দেওয়ার পাশাপাশি মুন্নার স্ত্রী উষার বিচার দাবি করছেন।

এদিকে, মুন্না ও উষার হোয়াটসঅ্যাপের বার্তা আদান-প্রদানের কপি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। মুন্নার বন্ধু ইমদাদুল হক চৌধুরী বাবু ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘স্ত্রী উষার প্ররোচনায় পরে গলায় ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করে মুন্না।

আত্মহত্যা করার পূর্বেও সে তার স্ত্রী উষার সঙ্গে কথা বলেছে এবং আত্মহত্যা করবে বলে জানিয়েছে। পরকীয়ার বিষয়টি উষার পরিবারকে মুন্না জানিয়েছিল, তারা সেটি এড়িয়ে গেছেন।

কতটুকু মানসিক নির্যাতন করলে একটি মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আত্মহত্যার পর তার পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। এভাবে ঝরে গেল আরেকটি তাজা প্রাণ।

এমরানের পরিবারসহ আমরা সবাই এ ঘটনার কঠিন থেকে কঠিনতম বিচার চাই, যেন এভাবে কোনো পরিবার সন্তান ও ভাই হারা না হয়। এমরান হত্যার বিচার চাই।’

কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনয়ারুল আজিম জানান, খবর পেয়ে নিহতের মরদেহ উদ্বার করে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। পরিবার আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করেছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!