২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ ও ভারতে আমদানি -রপ্তানিতে অন্যতম রুট হবে, কুমিল্লার গোমতী নদী খনন,ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮৮ কোটি

মহানগর প্রতিনিধি।।
উত্তর-পূর্ব ভারতের অরুণাচল, আসাম, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও ত্রিপুরায় পণ্য রপ্তানি এবং সেখান থেকে আমদানি বাড়াতে ইতোমধ্যেই গোমতী নদী দিয়ে ভারতের এসব রাজ্যের সঙ্গে পরীক্ষামূলক নৌবাণিজ্য শুরু হয়েছে।

কিন্তু নাব্য সংকট থাকায় গোমতী নদী খনন ছাড়া এ বাণিজ্য সফলতার মুখ দেখছে না। তাই নদী খননের জন্য ৭৯৭ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছিল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।

তবে পুরনো ডিপিপি সংশোধন করে আবারও পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। নতুন করে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি জানুয়ারি ২০২২ হতে জুন ২০২৫ মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে।

গোমতী নদীর নাব্য পুনরুদ্ধার প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ নিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এজন্য সব প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রকল্পটি শিগগির জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি বা একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, নৌপথ মানেই পণ্য পরিবহনে ব্যয় সাশ্রয়। আমরা নৌপথগুলো খনন বা সংস্কার করলে একদিকে কম খরচে পণ্য পরিবহন করা যাবে অন্যদিকে সময়ও বাঁচবে। এরই অংশ হিসেবে গোমতী নদী খনন করবো।

এর মাধ্যমে ত্রিপুরাসহ ভারতের অন্যান্য রাজ্যে পণ্য রপ্তানি এবং আমদানিতে সুবিধা হবে। এতে উভয় দেশই লাভবান হবে। আমরা সব কাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। আশা করি শিগগির প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শুরু করতে পারবো।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গোমতী নদী ভারতে উৎপত্তি লাভ করে কুমিল্লা সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়ন দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

এর পরে কুমিল্লার সদর, দেবীদ্বার, কোম্পানীগঞ্জ হয়ে ১৫০ কিলোমিটার সর্পিল পথ পেরিয়ে দাউদকান্দির শাপটা এলাকায় মেঘনা নদীতে পতিত হয়েছে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তর-পূর্বপ্রান্তীয় পার্বত্যাঞ্চল ডুমুর নামক স্থান থেকে গোমতী নদীর উৎপত্তি।

ত্রিপুরার সিপাহিজলা জেলার সোনামুড়া থেকে বাংলাদেশের কুমিল্লার দাউদকান্দি পর্যন্ত নদীপথটি ৯৩ কিলোমিটার দীর্ঘ। এ নৌপথের ৮৯ দশমিক ৫ কিলোমিটার পড়েছে বাংলাদেশে এবং বাকি পথ ভারতে। বর্তমানে এ নৌপথে সর্বোচ্চ ৫০ টন ওজনের পণ্যবাহী নৌযান চলাচল করতে পারে।

নৌপথটি খনন করা হলে বাংলাদেশ ও ত্রিপুরার মধ্যে সরাসরি পণ্য আমদানি-রপ্তানির অন্যতম রুট হিসেবে এটি ব্যবহার করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এই পথে ২০০ থেকে ৪০০ টনের বড় বড় পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করতে পারবে বলে দাবি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের।

বাংলাদেশের অধিকাংশ সিমেন্ট কারখানা মেঘনা নদীর তীরে গড়ে উঠেছে। দাউদকান্দিতে মেঘনা সেতু ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকায় নারায়ণগঞ্জ বা পার্শ্ববর্তী মোক্তারপুর থেকে ট্রাকে করে ২০ টন সিমেন্ট নিয়ে নরসিংদী, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা হয়ে দীর্ঘপথ অতিক্রম করে বিবির বাজার স্থলবন্দরে পৌঁছাতে হয়। এতে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যায়।

গোমতী দিয়ে নৌপথটি চালু হলে নারায়ণগঞ্জ থেকে সোনামুড়ার দূরত্ব হবে ১২৫ কিলোমিটার। নৌপথ হওয়ায় কমবে পণ্যপরিবহন খরচও।

কলকাতা, দিল্লি বা অন্যান্য অঞ্চল থেকে এসব রাজ্যে পণ্য পরিবহনে দীর্ঘ সময় ও অর্থ ব্যয় হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জল, স্থল ও রেলপথ ব্যবহার করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য পরিবহন করা হলে সময় ও ব্যয় দুটোই সাশ্রয় হয়।

সেই বিবেচনায় বাংলাদেশের সঙ্গে নৌপ্রোটোকল ও কানেক্টিভিটির আওতায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্যে জলপথে পণ্যপরিবহন হয়ে আসছে, তবে সেটা স্বল্প পরিসরে।

কিন্তু গোমতী নদীর নাব্য সংকট ও কয়েকটি কম উচ্চতার সেতুর কারণে পণ্যবাহী নৌযান সোনামুড়া বন্দরে পৌঁছাতে সমস্যায় পড়ে।

এ অবস্থায় নৌপথটি খনন করা গেলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যে সিমেন্ট ও ভোজ্যতেলসহ পণ্য পরিবহন সহজ হবে এবং খরচও কম পড়বে বলে অভিমত ব্যবসায়ীদের।

প্রল্পের আওতায় বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজার দিয়ে ক্যাপিটাল ও মেইনটেইনেন্স ড্রেজিং ৪৫ ঘনমিটার, কনসালটেন্সি সেবা ১১২ জনমাস, প্রকৌশল জরিপ, হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ, মাটির ডাইক নির্মাণ ১৫১ লাখ ঘন মিটার, বেসরকারি ড্রেজার-এস্কেবেটর দিয়ে ক্যাপিটাল ও মেইনটেইনেন্স ড্রেজিং ১০৬ লাখ ঘনমিটার, নদীর তীরে বাঁধের ওপরে মাটি অপসারণ করা হবে ২০ লাখ ঘনমিটার।

এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ডাবল কেবিন পিকআপ একটি, ল্যান্ড, সিঁড়ি ও র‌্যাম ১০টি, খনন সহায়ক কাজ, যানবাহনের জ্বালানি ও অফিস সরঞ্জামসহ ইত্যাদি কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এসব বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সদস্য প্রকৌশলী ড. একেএম মতিউর রহমান (যুগ্ম-সচিব) বলেন, এই নৌপথের উন্নয়নের ফলে কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন এলাকায় পণ্য পরিবহন বাড়বে।

পাশাপাশি ভারতের ত্রিপুরাসহ অন্যান্য রাজ্যে রপ্তানি পণ্য বিশেষ করে সিমেন্ট রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে গোমতী নৌপথ। ইতোমধ্যেই প্রকল্পের পিইসি সভা হয়েছে। একনেকে অনুমোদনের পর প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!