যেভাবে পালিয়ে ছিল শিক্ষক হত্যাকারী জিতু
নিউজ ডেস্ক।।
সাভারের কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে পিটিয়ে হত্যার পর জিতু গাজীপুর শ্রীপুর উপজেলার নগরহাওলা এলাকায় তার বন্ধু বশির শরিফের (১৮) আশ্রয়ে ছিলেন।
বশির নগরহাওলা গ্রামে মোশাররফ হোসেনের ভাড়া বাড়িতে বড় ভাই ইমরান বিশ্বাস ও বড় বোন জিনিয়া আক্তারের সঙ্গে থেকে পার্শ্ববর্তী একটি স্পিনিং মিলস লিমিটেডে চাকরি করত।
বশিরের বাড়ি নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার বাইউসোনা গ্রামে। বশির এখানে এসেছে প্রায় দেড় মাস আগে। সে জানত না জিতু শিক্ষককে মারধরের ঘটনা ঘটিয়েছে।
বশির জানায়, মঙ্গলবার (২৮ জুন) জিতু তার নানার বাড়ি মানিকগঞ্জে ছিলেন। সেখান থেকে আমাকে ফোন করে বলে আমার এখানে এসে বেড়াবে। বুধবার (২৯ জুন) ভোরে জিতু শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় এসে আমাকে ফোন করলে আমি তাকে মাওনা চৌরাস্তা থেকে বাসযোগে জৈনাবাজার এলাকায় আসতে বলি। জৈনাবাজার থেকে তাকে রিসিভ করে বাসায় নিয়ে আসি।
তিনি বলেন, আমরা দুই ভাই ও এক বোন একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে থাকি। তাই তাকে আমার সঙ্গে না রেখে আমার আরেক বড় ভাই সুজনের ভাড়া বাসায় রাখি। সেখান থেকেই বুধবার তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় র্যাব।
‘জিতুর সঙ্গে হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে একসঙ্গে পড়াশোনা করতাম। নবম শ্রেণি থেকে জিতুর সাথে আমার পরিচয় হয়।’
বশির আরও বলেন, জিতু এখানে এসেই জানায় তার বাবা এক হাজার টাকা পাঠাবে। পরে আমি তার বাবার পাঠানো টাকা উঠাতে স্থানীয় একটি কারখানার সামনে যাই।
এসময় হঠাৎ র্যাব সদস্যরা তাদের পরিচয় দিয়ে জিতুর ছবি দেখিয়ে সে কোথায় আছে জানতে চান। পরে আমি তাদের সুজনের ভাড়া বাড়িতে নিয়ে আসি। এসময় জিতু ঘুমিয়ে ছিলেন। পরে র্যাব সদস্যরা তাকে ডেকে তুলে নিয়ে যায়।
জিতুকে স্থানীয় সিদ্দিকুর রহমানের বাড়ির ভাড়াটিয়া সুজনের কক্ষে রেখেছিলেন বন্ধু বশির।
বাড়ির মালিক সিদ্দিকুর রহমান জানান, ওই ছেলেটিকে তারা কেউ চেনেন না। বুধবার বিকেলে মাগরিবের নামাজের আগে হঠাৎই বাড়ির ভেতর কিছু লোকজন এসে বিভিন্ন ঘরে তল্লাশি শুরু করে।
এ সময় ঘুম থেকে ডেকে তুলে এক ছেলেকে হ্যান্ডকাপ পরানো হয়। পরে সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে গত ২৫ জুন সাভারের চিত্রশাইলে হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জিতু স্ট্যাম্প দিয়ে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।
প্রথমে মাথায় আঘাত করে এবং পরে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে ওই শিক্ষার্থী। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই শিক্ষককে আশুলিয়া নারী ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেয়া হয়। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সোমবার (২৭ জুন) ভোরে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শিক্ষক উৎপল সরকার।
উৎপল সরকার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক এবং কলেজের শৃঙ্খলা কমিটিরও সভাপতি ছিলেন। প্রায় ১০ বছর ধরে ওই কলেজে অধ্যাপনা করেন তিনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে এই কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন উৎপল সরকার।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার এঙ্গেলদানি গ্রামের ছেলে উৎপল সরকার পরিবার নিয়ে ঢাকার মিরপুরে বসবাস করতেন বলেও জানা গেছে।