আবার চবির বিবর্ণ শাটলে রঙের ছোঁয়া
নিউজ ডেস্ক।।
শাটল ট্রেন। শুধু ট্রেন বললে ভুল হবে। একে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ বলা যায়। ঐতিহ্যের স্মারক শাটলকে ঘিরে প্রতিটি শিক্ষার্থীর কত যে সুখ-দুঃখের গল্প জড়িয়ে আছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। যেখানে একই সঙ্গে চলে প্রেম, গল্প, গান এবং পড়াশোনা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের বহনকারী শাটল ট্রেনের কথা। শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে শাটল ট্রেন চালু হয় ১৯৮০ সালে। প্রতিদিন সাত জোড়া ট্রেনে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী যাতায়াত করেন।
তবে দীর্ঘদিন ধরে রংহীন বিবর্ণ রূপে ছিল শাটলের বগি। এবার সেই বগিগুলোর গায়ে লেগেছে রঙের ছোঁয়া। আর কাজটি করেছেন সুদূর জার্মান থেকে আসা লুকাস জিলেঞ্জার এবং লিভিয়া। পুরো কাজটিই তারা করেছেন নিজস্ব অর্থায়নে। যেখানে স্থান পাচ্ছে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন, সংসদ ভবন, সিআরবি, সূর্যাস্তের দৃশ্য, সমুদ্রসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্যের শিল্পকর্ম।
চলতি মাসের ২১ জুলাই থেকে কাজ শুরু করেন লুকাস ও লিভিয়া। বৈরী আবহাওয়াতেও থেমে থাকেনি তাদের কাজ। প্রতিদিন গড়ে ১০ ঘণ্টার বেশি সময় কাজ করে পাঁচ দিনে রাঙিয়ে তুলেন শাটল।
২০২১ সালে প্রথমবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন লুকাস। পরিচয় হয় চবির নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক অরুপ বড়ুয়ার সঙ্গে। পরিচয়ের সূত্র ধরে শাটলে চিত্রকর্ম করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন লুকাস।
শুধু আগ্রহই নয়, এই কাজ করতে কয়েকবার বাংলাদেশেও আসেন তিনি। প্রশাসন আর রেলওয়ের অনুমতি নিয়েই শুরু করেন কাজ। লুকাস জিলেঞ্জার বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যেই শাটল ট্রেন প্রতিদিন হাজারো শিক্ষার্থী বহন করে। সেই ট্রেনে কাজ করতে পেরে গর্ববোধ করছি। সুযোগ পেলে সামনে বাংলাদেশে আরও কাজ করতে চাই।
জার্মান শিল্পীর রঙের ছোঁয়ায় শাটলের বাইরের দৃশ্য পরিবর্তন হলেও ভেতরের ত্রুটিগুলো বাস্তবায়নের দাবি শিক্ষার্থীদের। পর্যাপ্ত বগি বৃদ্ধি, লাইটিং বাড়ানো, ফ্যানগুলো সচল করাসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের দাবি তাদের।
রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাহ মো. আরিফ বলেন, শাটলের বগি পিটিয়ে বেসুরে গলায় গান গাওয়া দলের মাতিয়ে রাখা পরিবেশ শাটল ছাড়া আর কোথাও নেই। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে চবির ভিন্নতা এখানেও। দীর্ঘদিন ধরে রংহীন ছিল শাটল। এ নিয়ে আক্ষেপ ছিল শিক্ষার্থীদের। জার্মান শিল্পীর শিল্পকর্মে সেই আক্ষেপ ঘুচল।
আরেক শিক্ষার্থী শারমিন জাহান বলেন, শাটল ট্রেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণসঞ্চারক, হাজারো শিক্ষার্থীর জীবনের জানা-অজানা অসংখ্য গল্পের আঁতুড়ঘর। চবির বহু বছরের ঐতিহ্য। বর্তমানে শাটলে রঙের ছোঁয়া সৌন্দর্য ফিরিয়ে এনেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর নিজের অজান্তেই মনের সঙ্গে মিশে গেছে শাটল, যা তারা নিজেরাই জানেন না। ভাবতে ভাবতে কখন যে ট্রেন চলে আসে চবি জংশনে তা টেরই পাওয়া যায় না। শাটলকে ঘিরে জন্ম নেয় হাজারো স্মৃতি, যার শেষ নেই।