গাড়ি চাপা দেওয়া গার্ডারটির ওজন ছিল ৪০ টনের বেশি
নিউজ ডেস্ক।।
রাজধানীর উত্তরায় বাস র্যাপিড ট্রজিট (বিআরটি) প্রকল্পের যে গার্ডারটি প্রাইভেট কারকে চাপা দিয়েছে, সেটির ওজন ৪০ থেকে ৪৫ টন। বিপুল ওজনের এই গার্ডার পিলারে তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল।
কিন্তু যে ক্রেনটি দিয়ে তা তোলা হচ্ছিল, সেটির এই ওজন বহনের সক্ষমতা ছিল না। ফলে ক্রেনটি কাত হয়ে যায়। গার্ডারটি পড়ে গাড়িতে। নিমেষেই গাড়িটি চিড়ে-চ্যাপটা হয়ে পাঁচটি তাজা প্রাণ ঝরে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং প্রকল্পের কাজের সঙ্গে যুক্ত সূত্র বলছে, ক্রেনটি সমান জায়গাতেই দাঁড়ানো ছিল। গার্ডারটি ওপরে তোলার সময় এমনভাবে কাত হয়ে যাওয়ার কথা নয়।
এর অর্থ হচ্ছে গার্ডারের ভার বহনের ক্ষমতা ওই ক্রেনের ছিল না। যদি এমনটাই হয়ে থাকে, তাহলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং নির্মাণকাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা সরকারি প্রকৌশলীদের ওপর দায় বর্তায়।
দেশের সবচেয়ে বড় সেতু পদ্মা সেতুতে স্টিলের স্প্যান ক্রেন দিয়ে তোলা হয়েছে। প্রতিটি স্প্যানের ওজন ছিল প্রায় তিন হাজার টন। এসব স্প্যান পিলারে বসানোর সময় চার হাজার টন সক্ষমতার ক্রেন ব্যবহার করা হয়েছে। স্প্যান বসানোর সময় নদীতে নৌযান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এ জন্যই বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।
সেদিক থেকে বিআরটি প্রকল্পে গাফিলতির চরম দৃষ্টান্ত দেখা গেল ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায়। ব্যস্ত একটি সড়কে ভারী ও বড় গার্ডার তোলার আগে ওই স্থানটি নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় আনার বিষয়টি স্বাভাবিক বিবেচনা করা হয় বড় নির্মাণকাজে।
কিন্তু উত্তরায় দুর্ঘটনাস্থলে এমন কোনো নিরাপত্তাবেষ্টনী ছিল না। গার্ডার ও ক্রেনের নড়াচড়ার জন্য যতটুকু জায়গা দরকার ছিল, এর নাগালের মধ্যেই যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিআরটি প্রকল্পের নানা কাজ তদারকের জন্য চারটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হয়েছে। প্রতিটি বড় কাজের সময় তা সঠিকভাবে করা হচ্ছে কি না, কাজের মান কেমন, তা দেখার কথা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের।
পাশাপাশি থাকার কথা প্রকল্পের বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা সরকারি সংস্থার কর্মকর্তাদের। কিন্তু সোমবার সরকারি ছুটি থাকায় গার্ডার বসানোর সময় পরামর্শক ছিলেন না। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) কর্মকর্তারাও দেখভাল করেননি। ফলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা যেনতেনভাবে কাজটি করতে গিয়েছিলেন।
এর আগে গত ১৫ জুলাই গাজীপুর শহর এলাকায় গার্ডারে চাপা পড়ে একজন নিরাপত্তাকর্মী মারা যান। গত বছরের ১৪ মার্চ দুবার গার্ডারধসের ঘটনা ঘটে।
বিমানবন্দর এলাকায় একটি ঘটনায় চারজন এবং আবদুল্লাহপুর এলাকায় দুজন আহত হন। এর মধ্যে তিনজন চীনের নাগরিকও আছেন।
বিআরটি প্রকল্পের কাজ চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে মূল তিনটি কাজ করছে চীনা প্রতিষ্ঠান। উত্তরায় দুর্ঘটনায় পড়া অংশের কাজ করছে চীনের গেজহুবা গ্রুপ।