নন্দিত বিশ্বনেতা শেখ হাসিনা
নিউজ ডেস্ক
জীবন নামের বহতা নদীর বাঁকে বাঁকে শত ঘাত-প্রতিঘাতের মুখে পড়েছেন বারবার। আবার ফিনিক্স পাখির মতো ঘুরেও দাঁড়িয়েছেন বীরদর্পেই। মৃত্যুর খাড়া সারাক্ষণ মাথার ওপর নিয়েই পরিচালনা করছেন সতের কোটির বাংলাদেশ। বিশ্ব পরিমন্ডলে বাংলাদেশকে শক্তপোক্ত নতুন চেহারায় মাথা তুলে দাঁড় করিয়েছেন টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উপমহাদেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি সবচেয়ে বেশিবার অর্থাৎ সাড়ে ১৭ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকার অনন্য কৃতিত্বও নিজের সাফল্যের ঝুলিতে ভরেছেন। ক্ষমতা ও দুর্নীতি পাশাপাশি হাঁটলেও শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত রেখেছেন নিজেকে। ৪০ বছরের সংগ্রামমুখর রাজনৈতিক জীবনে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার জোরেই গণতন্ত্রের সংগ্রামে সফল হয়েছেন। সেই কারণে তাকে বলা হয় গণতন্ত্রের রাজনীতির বাতিঘরও।
ছাত্ররাজনীতির পাঠ শেষে অনেক ত্যাগ ও জটিল পথ পেরিয়ে দীর্ঘ সময় যাবত নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে। কিন্তু সব পরিচয় ছাপিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা। এই পরিচয়ই তার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। দেশপ্রেম আর মানুষের প্রতি মমত্ববোধে উজ্জীবিত শেখ হাসিনা তাঁর বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতোই দেশের মানুষের কাছেও আদর্শ ও অনুপ্রেরণার প্রতীক। বিশ্ব তাকে অনেক আগেই দিয়েছে ‘বিশ্বশান্তির অগ্রদূত’র খেতাব।নিজের মনোবল, প্রবল আত্নবিশ্বাস ও দৃঢ়তায় অবিচল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশাল কর্মযজ্ঞ নিয়েই উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দেশকে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছেন।
করোনাকালেও জীবন ও জীবিকা রক্ষার পাশাপাশি অর্থনীতি সচলে তাঁর ম্যাজিক বিস্ময়কর। সাহসী প্রধানমন্ত্রী দুর্যোগ মোকাবেলাতেও গোটা বিশ্বের কাছে ‘রোল মডেল’। ‘মানবিক প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে দেশজুড়ে তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তায় আবির্ভূত হন গভীর সঙ্কটে আলোর দিশারি শেখ হাসিনা। দেশের প্রয়োজনে আলো ছড়িয়ে হয়ে উঠেছেন আরও অপ্রতিরোধ্য, অপরিহার্য এবং অনিবার্য।
জনগণের জীবন ও জীবিকার চাকা সচল রাখতে প্রণোদনা প্যাকেজসহ উদ্দীপনা ও সাহস জুগিয়েছেন। জনগণের মাঝে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে নেতাকর্মীদের উদ্দীপ্ত করেছেন। কৃষকের স্বপ্নের ফসল ঘরে তুলে দিতে নেতা-কর্মীদের মাঠে নামিয়েছেন। এ সময়ে দেশের সীমানা ছাপিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও বিভিন্ন সংস্থা ও গণমাধ্যমে মুজিবকন্যার নেতৃত্ব প্রশংসিত হয়েছে।
এসবের পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই সাফল্য হাতের মুঠোয় ভরে পথ হেঁটেছেন নিরন্তর। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমস্যা জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদ দমনেও শেখ হাসিনার সাফল্য পরাক্রমশালী বিশ্ব নেতৃত্বকেও মুগ্ধ করেছে। দেশকে কেবল মধ্যম আয়ের দেশেই নিয়ে যাননি ‘হ্যাট্টিক’ প্রধানমন্ত্রী।
অবকাঠামোর উন্নয়নে বিশেষ করে যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি, মৎস্য খাতে বিপ্লবও ঘটিয়েছেন। পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্প নিজ টাকায় করে গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন। সাবমেরিনই কেনা হয়নি মহাকাশে স্যাটেলাইটও উৎক্ষেপণ করেছেন।
সমুদ্র বিজয় থেকে ছিটমহল- সব সমস্যার সমাধান করেছেন নিজের দূরদর্শী নেতৃত্বে। বিশাল বাজেট বিশাল উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ দেশজুড়ে বাস্তবায়ন করে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন বিশ্বের অন্যতম সৎ রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি শুধু সরকার প্রধান বা শাসক-ই নন, হয়েছেন মানবতারও নেত্রীও।মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যার জেরে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছেন। এ কারণেই যুক্তরাজ্যের টেলিভিশন ‘চ্যানেল ফোর’ তাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ উপাধিতে ভূষিত করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ছোঁয়ায় গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি, পার্বত্য শান্তি চুক্তি, ভারতের সঙ্গে করা সীমানা চুক্তির বাস্তবায়ন এবং বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড.শিরীন শারমিন চৌধুরীর মনে করেন, ‘জাতির পিতার আদর্শে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনা করেন, রাষ্ট্র পরিচালনা করেন মানবকল্যাণের কথা চিন্তা করে। বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যেই তিনি রাজনীতি করেন।
‘তিনি নিজের বাবা, মা, ভাই-স্বজনদের হারিয়েছেন। স্বজন হারানোর যে বেদনা তার চেয়ে গভীরভাবে কেউ অনুভব করে না, করতে পারে না। কিন্তু এতকিছুর পরেও, স্বজন হারানোর ব্যথা, বেদনা, সব কষ্ট নিয়েই কিন্তু তিনি এই বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করেন। এটাই তার একমাত্র লক্ষ্য, ব্রত এবং সাধনা।’
প্রমত্ত পদ্মায় এখন পুর্ণাঙ্গ সেতু দৃশ্যমান। বাংলাদেশের স্বপ্নই যেন মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে পদ্মার বুকে। মানবিক সহায়তা, মানবিক দৃষ্টান্তের আরেকটি সাহসী ও সফল নেতৃত্বের উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন কক্সবাজারের শরণার্থী হয়ে থাকা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার একটি অংশকে নোয়াখালী ভাসানচরে স্থানান্তরের সফল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে।
করোনাকালীন সময়ে সারাদেশে ৫০ লাখ পরিবারকে আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী মানবিক সহায়তার নতুন রেকর্ড গড়েছেন। শেখ হাসিনার মানবিক সহায়তা কর্মসূচি চালুর দিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেছিলেন, ‘আপনি যে মানবিক সহায়তা কর্মসূচি উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন, আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, পৃথিবীর ইতিহাসে এটি বিরল। একসঙ্গে এত মানুষের মানবিক সহায়তা পাওয়া বিরল ঘটনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর বাংলাদেশে আপনিই প্রথম এত সংখ্যক মানুষকে একসঙ্গে মানবিক সহায়তা দিলেন।’
এই ৫০ লাখ পরিবারের বাইরেও আরও ৫০ লাখ পরিবারের প্রায় দুই কোটি সদস্য আগে থেকেই সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ছিল। তারাও ভিজিএফ কার্ড, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, শিক্ষা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতা হিসেবে করোনাকালে অব্যাহত সহায়তা পেয়ে আসছেন।গত ৮ এপ্রিল সরকারি এক তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে, মহামারি করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় দফায় কর্মহীন মানুষকে সহায়তা দিতে ৫৭২ কোটি ৯ লাখ ২৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০০ পরিবারকে এই আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
করোনা দ্বিতীয় ঢেউয়ে ক্ষতিগ্রস্ত স্বল্প আয়ের গরিব মানুষের মাঝে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে দেশের ৩৬ লাখ পরিবারকে সরকার নগদ সহায়তা দেবে। উপকারভোগীরা ঘরে বসেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ‘ঈদ উপহার’।
এর মধ্যে ৩৫ লাখ স্বল্প আয়ের পরিবার প্রতি ঈদ উপহার হিসেবে দেওয়া হবে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ১ লাখ কৃষক পরিবার ৫ হাজার টাকা করে পাবেন। এই অর্থ মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস বিকাশ, নগদ এবং রকেটের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। ইতোমধ্যে উপকারভোগীদের তালিকা সম্পন্ন হয়েছে।
দীর্ঘ সংগ্রামমুখর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আর সাহসী কর্মকান্ডের মধ্যে দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নন্দিত হয়েছেন শেখ হাসিনা। বাঙালিদের এনে দিয়েছেন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা। এই অঞ্চলে গণতন্ত্র, শান্তি ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারী শিক্ষার বিস্তার, শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস ও দারিদ্র্য বিমোচনের সংগ্রামে অসামান্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে দেশি-বিদেশি ৩৯ টি পুরস্কার ও সম্মানে তিনি ভূষিত হয়েছেন।
এর মধ্যে সাউথ-সাউথ ভিশনারি পুরস্কার-২০১৪, শান্তিবৃক্ষ-২০১৪, জাতিসংঘ পুরস্কার- ২০১০ ও ২০১৩, রোটারি শান্তি পুরস্কার-২০১৩, গোভি পুরস্কার-২০১২, সাউথ-সাউথ পুরস্কার-২০১১, ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার-২০১০, পার্ল এস. বার্ক পুরস্কার-২০০০, সিইআরইএস মেডাল-১৯৯৯, এম কে গান্ধী পুরস্কার-১৯৯৮, মাদার তেরেসা শান্তি পুরস্কার-১৯৯৮, ইউনেস্কোর ফেলিক্স হোফুয়েট-বোয়েগনি শান্তি পুরস্কার-১৯৯৮ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণে অসামান্য অবদানের জন্য জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন শেখ হাসিনা।
দীর্ঘ সময় পর এই দেশে ক্ষমাহীন দু’টি অপরাধের বিচার সম্পন্ন করার মধ্যে দিয়ে বাঙালি জাতিকে পূর্ণ কলঙ্কমুক্ত করেছেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। সুনামও কুড়িয়েছেন দেশ পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও। একটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা এবং অন্যটি মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার।
পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্সের গবেষণায় বিশ্বে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সবচেয়ে বিচক্ষণ নেতা বিবেচিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িক ফোর্বসের বিশ্বের ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে তাঁর নাম। ২০১৮ সালে টাইম ম্যাগাজিনের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় উঠে এসেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
দেশের বেশিরভাগ মানুষই বিশ্বাস করেন শেখ হাসিনা ছাড়া এই দেশ চালানোর মতো যোগ্য নেতা আর কেউ নেই। তাঁর বিকল্প তিনি নিজেই। নিজের সরকারের তৃতীয় মেয়াদে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রমাণ করেছেন একমাত্র তিনিই নি:সঙ্কোচে অন্যায়কারী এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে একজন পর্যবেক্ষক বলেন, টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা যেন দুটো সত্ত্বায় আবির্ভূত হয়েছেন। একটি রাজনীতিবিদ শেখ হাসিনা এবং অন্যটি প্রশাসক শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা রাজনীতিবিদ হিসেবে যেমন দলকে ভালোবাসেন, দলের কর্মসূচিতে উপস্থিত হন। রাজনৈতিক বক্তব্য রেখে বিরোধী দলকে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করেন। আবার সরকারপ্রধান হিসেবে তিনি অনেকটাই নিরপেক্ষ এবং নির্মোহ।
আওয়ামী লীগের ২০ তম জাতীয় সম্মেলনের খসড়া ঘোষণাপত্রের প্রথম অধ্যায়ের ২২ নম্বর পৃষ্ঠায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের শক্তি ও সম্পদ দুটোই। নেতৃত্বের কারিশমায় আওয়ামী লীগের প্রধান সম্পদ জননেত্রী শেখ হাসিনা। পরে কাউন্সিলরদের মতামত নিয়ে চূড়ান্ত করা হয় এই ঘোষণাপত্র।
গত নির্বাচনের ইশতেহারে শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি ঘোষণা করেন। এরপর সরকারের শুরুর দিকেই তিনি শুদ্ধি অভিযান শুরু করলেন। নিজের পছন্দে বানানো ছাত্রলীগের সভাপতি শোভন ও সাধারণ সম্পাদক রাব্বানীকে পদ থেকে সরিয়ে দেন। নিজের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুককেও ছাড় দেননি নূন্যতম। বাদ দিতে কূণ্ঠাবোধ করেননি স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতিকেও।
শেখ হাসিনার সাফল্যের সবচেয়ে বড় কারণ হলো তার কঠোর পরিশ্রম। প্রতিদিন ১৮ থেকে ২০ ঘন্টা পরিশ্রম করেন এই সফল রাষ্ট্রনায়ক। বাংলাদেশ তো বটেই, বিশ্বের সবচেয়ে পরিশ্রমী এবং কর্মঠ সরকারপ্রধান হিসেবেও তিনি স্বীকৃতি পেয়েছেন। গত ১২ বছর ক্ষমতায় থাকলেও তাকে ঘিরে কোন রকম সিন্ডিকেট গড়ে উঠতে দেননি প্রধানমন্ত্রী। বারবার প্রমাণ করেছেন, কারও ওপরই তিনি নির্ভরশীল নন।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে দলটির সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনা এখন আর স্রেফ কোনো পলিটিশিয়ান নন। তিনি আজ একজন স্টেটসম্যানে পরিণত হয়েছেন।’
শেখ হাসিনার একটি অনন্য দিক হলো অহংকার কখনও তাকে স্পর্শ করেনি। দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকার পরও তিনি নিরাভরণ সাদামাটা জীবন-যাপনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার কাজে সার্বক্ষণিক ব্যস্ত থাকতে হয়। এরই মধ্যে সময় করে তিনি পারিবারিক কাজেও মনোনিবেশ করেন।
নানা রাষ্ট্রীয় ব্যস্ততার মধ্যেও চিরায়ত বাঙালি নারীর মতো গণভবনের বারান্দায় বসে সেলাই মেশিনে কাপড় সেলাই করেন। একজন প্রধানমন্ত্রী হয়েও নিজ হাতে কাজের একটি অপূর্ব নিদর্শন কেবল তিনিই তৈরি করতে পারেন এবং করেছেনও। আবার কখনও গণভবনের পুকুরে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করেন।পাহাড়সম ব্যস্ততার মধ্যেও প্রধানমন্ত্রীই গণভবনের লনে শিশুদের সঙ্গে খেলার জন্য সময় বের করেন। নিজ পরিবারের ঘনিষ্ঠ স্বজনদের আদুরে শিশুরা ছাড়াও যেখানে আসতে পারেন অন্যান্য কচি-কাঁচারাও। তারকা ক্রিকেটার সাকিবের কন্যা আলাইনা হাসানকে কোলে নিয়ে বসতে পারেন, মেতে উঠতে পারেন খেলাতেও।এসব টুকরো টুকরো স্মৃতি সবার মানসপটেই তাজা। শেখ হাসিনার দূর থেকে কাছের মানুষ মাত্রই জানেন পিতা মুজিবের কাছ থেকেই এসব গুণাবলী পেয়েছেন তিনি।
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর হয়েও তাদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য অনুধাবন করেই সহানুভূতিশীল হয়েছেন। অবজ্ঞা না করে মহানুভবতার মাধ্যমে কীভাবে ওদের আপন করে নিতে হয় সেই বার্তাই দিয়েছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের মাত্র ক’দিন আগেও পাঠ্যপুস্তক উৎসব শেষে শিশুদের সঙ্গে গণভবনে খেলতে খেলতে তাদের বায়না মেটাতে ছবিও তুলেছেন।
এইতো বছর পাঁচেক আগে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসে এক অটিষ্টিক শিশুকে বুকে জড়িয়ে ধরেন বঙ্গকন্যা। প্রায় তিন ঘন্টা সেই অনুষ্ঠানে থেকে শিশুদের কথাই সেদিন মেনে চলেছেন! তাদের মনোজগতের বিকাশ ঘটাতে ভূমিকা রেখেছেন।
এই প্রধানমন্ত্রীই ছোট বোন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির সন্তান লীলা ও কাইয়ূসের সঙ্গে একেবারে নির্ভার হয়ে মাতোয়ারা হয়ে উঠতে পারেন আনন্দে। পরম যত্নে নাতনির চুলে বেণীও বেঁধে দিতে পারেন। নিজ হাতে মাছ কেটে পরিস্কার করেন; পরম মমতায় রান্না করে পরিবেশন করেন নাতিপুতিরা খাবেন বলেই। তিনি ছাড়া আর এমন প্রধানমন্ত্রী কী কোনদিন দেখেছে বাংলাদেশ?মূলত এসব গুণাবলীর কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের অন্যসব ক্ষমতাধর রাষ্ট্রনায়ক থেকেও নিজেকে অনন্য করেছেন। নিয়ে গেছেন অবিশ্বাস্য এক উচ্চতায়। শিশুদের তিনি আনন্দ দেন। নিজেই এক বিরাট শিশু হয়ে বন্ধুর মতো ওদের সঙ্গে গভীরভাবে মিশতে পারেন। অকৃত্রিম স্নেহ, মমতা আর গভীর ভালোবাসায় মিষ্টি মুহুর্তে মুগ্ধ করেন শিশুদের।
পটুয়াখালীর চতুর্থ শ্রেণির স্কুল শিক্ষার্থী শীর্ষেন্দু বিশ্বাসের চিঠির জবাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেখিয়ে দেন তিনি বিত্ত-বৈভব নয়, ক্ষমতার গর্বে অভিষিক্তও নন। গণতন্ত্রের মূল্যবোধের ওপর সবার অধিকার প্রতিষ্ঠাই তাঁর কাছে মুখ্য। শত-সহস্র বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে, ১৯ বারের সশস্ত্র হামলা ও হত্যার হুমকিসহ কতশত প্রতিকূলতা ঠেলে ভাত-ভোট এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য অবিচল থেকে সংগ্রামী হয়ে উঠতে পারেন।বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (অটিস্টিটক) কিশোরী রায়ার ইচ্ছে পূরণ করতে ভিডিওকলে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন এই বঙ্গকন্যাই। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু দেশের প্রধানমন্ত্রীই নন, একজন মমতাময়ী জননীও। বার বার এমন প্রমাণও দিয়েছেন। একবার বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের সমাপনী দিনে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে নিজের মায়াবী হাতে মুছে দিয়েছিলেন মেয়েদের চোখের পানি।
গলায় পদক পরিয়ে টেনে নিয়েছিলেন বুকে। ওদের দিয়েছিলেন দাদীর স্নেহ। নিজের আদর ও ভালোবাসায় কচি-কাঁচাদের ভুলিয়ে দিয়েছিলেন ট্রফি না পাওয়ার বেদনা। এমন একজন ‘স্টেটসম্যান’ আর কী কোনদিন পাবে বাংলাদেশ?