দলে দলে মানুষ ঢাকা ছাড়ছে, টার্মিনালগুলোতে ঈদযাত্রার মত ভিড়
বাংলাদেশে সোমবার থেকে সারা দেশে সাতদিনের লকডাউন শুরু হচ্ছে। এ ঘোষণার পর শনিবার দুপুরের পর থেকেই ঢাকা ছাড়তে শুরু করেন মানুষ। রোববারও সকাল থেকে বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশন, লঞ্চ ঘাট এবং বিমানবন্দরে ছিল বাড়ি ফিরতি মানুষের ভিড়।
এরই মধ্যে লকডাউন বিষয়ক প্রজ্ঞাপন জারি করে বলা হয়েছে, সোমবার সকাল ছ’টা থেকে বাংলাদেশের সব ধরণের অভ্যন্তরীণ গণপরিবহন – অর্থাৎ ট্রেন, বাস, নৌপথ ও অভ্যন্তরীন বিমান চলাচল বন্ধ্য হয়ে যাবে।
সরকার বলছে, লকডাউনের মুখ্য উদ্দেশ্য হবে অবাধ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা ও সভা-সমাবেশ বন্ধ রাখা।
কিন্তু লকডাউনের খবর পাওয়ার পর শনিবার দুপুরের পর থেকেই মানুষ বাস ও ট্রেন স্টেশন এবং লঞ্চ টার্মিনালের দিকে ছোটেন।
একটি বড় অংশের মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন সড়ক পথে। দূরপাল্লার বাসগুলোতে ছিল বাড়তি ভিড়। বাসের টিকেট যারা বিক্রি করেন তারা জানিয়েছেন, চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
বিবিসির নাগিব বাহার গিয়েছিলেন গাবতলী বাস টার্মিনাল, সেখানে তিনি দেখেছেন ঈদে বাড়ি ফেরার জন্য যে উপচে পড়া ভিড় দেখা যায় তার মতই অবস্থা চলছে।
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যাচ্ছে, করোনাভাইরাস এবং যেকোন মুহূর্তে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে ঢাকা ছাড়ছেন মানুষ।
সেই সঙ্গে গণপরিবহণে অর্ধেক যাত্রী নেওয়ার নির্দেশনার কারণে বাসে আসন না পেয়ে রাস্তায় এবং বাস টার্মিনালে অপেক্ষা করছেন অনেক যাত্রী।
দর্শণা পরিবহনের ম্যানেজার জাকির স্বপন বিবিসিকে বলেছেন, শনিবার রাতে যাত্রীর চাপ আজকের চেয়ে অনেক বেশি ছিল।
তিনি বলছেন যাত্রীর চাপ সাধারণের প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
এখন কাউন্টার থেকে তারা আর টিকেট দিতে পারছেন না, কারণ রোববার রাত পর্যন্ত সব টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে।
এদিকে, বাস কোম্পানির মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার রফিকুল হোসেন কাজল জানিয়েছেন, যারা লকডাউনকে সামনে রেখে শহর ছাড়ছেন তাদের বড় অংশটি দৈনিক ভিত্তিতে রোজগার করে।
তিনি বলছেন, ছোট ছোট ব্যবসা করেন এমন মানুষজন এবং দিন হিসেবে যাদের মজুরী হয়, তারাই বেশি যাচ্ছেন ঢাকা ছেড়ে। কারণ লকডাউনে তাদের রোজগার বন্ধ থাকবে এই আশংকা থেকে শহর ছাড়ছেন তারা।
মি. হোসেন বলেছেন, ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানুষের মধ্যে উত্তরবঙ্গে কয়েকটি জেলা এবং পূর্ব অংশের কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং চট্টগ্রামের রুটে বেশি ভিড় দেখা গেছে।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল
শনিবার দুপুরের পর দক্ষিণ অঞ্চলের বিভিন্ন রুটের লঞ্চে ছিল ব্যাপক ভিড়।
রোববার বিআইডব্লিউটিএ’র একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, ডেকে ও সিটে ৫০ শতাংশ যাত্রী ফাঁকা রাখার কথা থাকলেও ভিড়ের চাপ সামলাতে গিয়ে অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে পারেননি।
ওই কর্মকর্তা বলেছেন, রোববারও সকাল থেকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ভিড় করতে শুরু করেছেন অনেকে।
কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলের রুটগুলোর বেশিরভাগ লঞ্চ ছাড়ে সন্ধ্যার পর, যে কারণে তিনি বলছেন, এই ভিড় দুপুরের পর আরো বাড়বে।
ইতিমধ্যে বিআইডব্লিউটিএ জানিয়েছে, সোমবার সকাল ৬টা থেকে সব ধরণের নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে।
বিমানবন্দর
বিবিসির পারমিতা হিম গিয়েছিলেন ঢাকার অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে, সেখানে অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ভিড় ছিল বলে জানিয়েছেন।
তিনি জানিয়েছেন লকডাউনের ফলে দীর্ঘদিনের জন্য ছুটির প্রস্তুতি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন অনেকে।
বিমান যাত্রার জন্য চেক-ইন লাইনে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখা যায়নি।
মুখে মাস্ক থাকলেও, সামাজিক দূরত্ব রেখে লাইনে দাড়াতে দেখা যায়নি অনেককেই।
সূত্র-বিবিসি।