ফেন্সুগঞ্জের একটি ক্ষেত্র থেকে বাপেক্সের গ্যাস উত্তোলন; মাটির গভীরে আরও গ্যাস!
নিউজ ডেস্ক।।
দেশে এখন গ্যাসের খনিগুলো মাটির চার থেকে সাড়ে চার হাজার মিটার নিচে। এর নিচে কী আছে তা জানা যায়নি। তবে বাপেক্সের ত্রিমাত্রিক জরিপে দেখা যাচ্ছে ভূপৃষ্ঠের পাঁচ কিলোমিটার গভীরে আরও গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাপেক্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মর্তুজা আহমেদ ফারুক চিশতী জানান, ‘মাটির আরও গভীরে খনন করলে গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। দেশের খনিগুলোর মধ্যে তিতাসের সেই সম্ভাবনা উজ্জ্বল। তিতাসে বাপেক্স পরিচালিত ত্রিমাত্রিক জরিপে দেখা গেছে সেখানে পাঁচ হাজার মিটারের নিচে খনন করলে অন্তত ১.৬ টিসিএফ গ্যাস পাওয়া যেতে পারে।’
এ ছাড়াও সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনায় অবস্থিত ‘সুনেত্র’ এলাকায় এ ধরনের খননকাজ চালালে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি জানান, আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্র গুলোর মধ্যে তিতাসের মতো বড় গ্যাসক্ষেত্র ছাড়াও ফেঞ্চুগঞ্জ, পাথারিয়া, আটগ্রাম, সীতাকুণ্ড, সুনেত্র, মোবারকপুর, শ্রীকাইল, পটিয়া, কাসালং-এর মতো গ্যাসের অবকাঠামো আছে। এমন জায়গাগুলোতেও অনুসন্ধান শুরু করা দরকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দেশে ড্রিলিং করার মতো উন্নত যন্ত্রাংশ (রিগ) নেই। বিদেশি কোনও প্রতিষ্ঠানকে কাজটি দিতে হবে। এ ধরনের একটি কূপ খননে ৩০০ কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোট ২৫টি এলাকায় গভীর অঞ্চলে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য গভীর স্তরে কূপ খনন করা হয়। এগুলো মূলত চার থেকে পাঁচ হাজার মিটার গভীর হয়। ওই ২৫টির মধ্যে ১৬টি ক্ষেত্র স্থলভাগে। এরমধ্যে আছে লালমাই-২, কৈলাশটিলা-১, সেমুতাং ১, জলদি-৩, মুলাদি-১, মুলাদি-২, বিয়ানিবাজার, সিংড়া-১, আটগ্রাম-১, সীতাকুন্ড-৫, ফেঞ্চুগঞ্জ-২, হালদা-১, বিবিয়ানা-১, কাজল-১, সুনেত্র ও মোবারকপুর। এরমধ্যে কৈলাশটিলা-১, সেমুতাং-১, বিয়ানিবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ-২ এবং বিবিয়ানা-১ এ গ্যাস পাওয়া গেছে।
বাকিগুলোর তিনটি- হালদা, কাজল ও সুনেত্রতে গ্যাস পাওয়া যায়নি। অন্যগুলোতে গ্যাস আছে বলা হলেও উত্তোলন করা যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, চীন, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমারের মতো দেশ পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১২ হাজার মিটারের বেশি খনন করেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে গভীরে খনন হয়েছে রাশিয়াতে- ১২ হাজার ২৬২ মিটার। ১৫ হাজার মিটার পর্যন্ত খননের ইচ্ছে থাকলেও অতিরিক্ত তাপের কারণে তা করতে পারছে না তারা। এদিকে ৯ হাজার ৫৮৩ মিটার নিচ থেকে গ্যাস এবং ১০ হাজার ৬৮৭ মিটার নিচ থেকে তেল উত্তোলন করছে যুক্তরাষ্ট্র।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, ‘আমাদের দেশে গ্যাসের পরিমাণ যে হারে কমছে তাতে আগামী কয়েক বছরে হুট করে অনেক ক্ষেত্র ফুরিয়ে যেতে পারে। এখন ঘাটতি পূরণে এলএনজি আমদানি করা হলেও আচমকা ৩০-৪০ কোটি ঘনফুট ঘাটতি দেখা দিলে সামাল দেওয়া কঠিন হবে। তাই আমাদের দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানে আরও মনোযোগী হওয়া দরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার নয়, পুরনো অনেক ক্ষেত্রের নিচেও গ্যাস থাকার প্রমাণ পেয়েছি। প্রযুক্তির অভাবে সেখানে খনন শুরু করতে পারিনি। সেখানে খননের জন্য এখনই উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
পাশাপাশি কোন ক্ষেত্রের নিচে আরও কী পরিমাণ গ্যাস মজুত আছে সে উপাত্তও সংগ্রহ করা জরুরি। নিজেরা একা না পারলে বিদেশি অভিজ্ঞতা আছে এমন কোম্পানির সঙ্গে কাজ শুরু করতে পারে বাপেক্স।’