কুমিল্লা জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাবলু
নিজস্ব প্রতিনিধি।।
নিজস্ব প্রতিবেদক।। কুমিল্লা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের দলীয় সমর্থন পেয়েছেন প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুর রহমান বাবলু।
তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি ও রেডক্রিসেন্টের সহ-সভাপতি। শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভা শেষে তাকে দলীয় সমর্থন দেওয়ার কথা জানানো হয়।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সারা দেশের বিভিন্ন জেলার জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় সমর্থিত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়।
কুমিল্লা থেকে পনের জন্য আওয়ামী লীগ নেতা দলীয় সমর্থন পেতে আবেদন করেন। তাদের মধ্যে মফিজুর রহমান বাবলুকে চেয়ারম্যান পদে দলীয় সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড।
এদিকে জেলা পরিষদ নির্বাচনে মফিজুর রহমান বাবলু আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়ায় তাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন সাবেক রেলপথ মন্ত্রী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হক মুজিব এমপি। এছাড়াও আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দও তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
কুমিল্লা জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৭ অক্টোবর কুমিল্লা জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৬৭৬ জন। এর মধ্যে ২ হাজার ৪৯ জন পুরুষ ভোটার এবং নারী ভোটার ৬২৭ জন। তফসিল অনুযায়ী-মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৫ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১৮ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের সময় ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর, আপিল নিষ্পত্তি ২২ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ২৬ সেপ্টেম্বর।
এর আগে বর্তমান প্রশাসক রিয়ার এডমিরাল (অব.) আবু তাহের সর্বশেষ চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং মেয়াদ শেষ হবার পর গত ২৭ এপ্রিল আবারো তাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
জানা গেছে, কুমিল্লা জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বর্ষীয়ান রাজনীতিক বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুর রহমান বাবলু ১৯৪৬ সালের ১০ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রখ্যাত আইনজীবী ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী।
মফিজুর রহমান বাবলু তার মামা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি কাজী জহিরুল কাইয়ুমের হাত ধরে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে রাজনীতির পথে পা বাড়ান।
তারপর ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ছিলেন অবিভক্ত কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। সে সময় জাতির পিতা ঘোষিত বাঙালির মুক্তির সনদ ছয়দফা আন্দোলনে অংশ নেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
ঊনসত্তরের গণআন্দোলনে অংশ নেন ডাকসুর সদস্য হিসেবে। সত্তরের নির্বাচনে দলের হয়ে কাজ করেন। অংশ নেন একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সমাজকল্যাণ সম্পাদকের।
পরে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।
১৯৮৬ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ছিলেন চৌদ্দগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ১৯৮২ ও ১৯৮৮ সালে দলীয় কর্মসূচি পালনকালে বিএনপি ও ফ্রিডম পার্টির নির্যাতনের শিকারও হয়েছেন রণাঙ্গনের এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।
মফিজুর রহমান বাবলু ছিলেন ২ নাম্বার সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধা। আগরতলার রাধানগরে যুব মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তিনি সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন।
পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময় চৌদ্দগ্রামে তার নিজের বাড়িটি ছিল মুক্তিবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প। আওয়ামী লীগের নেতারাও বিভিন্ন সময়ে সেখানে বৈঠকে মিলিত হতেন।
তার আরেকটি পৈতৃক বাড়িসহ এ দুটি বাড়িতে প্রায়ই পাকিস্তানি বাহিনী হানা দিত। একপর্যায়ে পাকিস্তানিরা একটি বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। মুক্তিযোদ্ধা বাবলুর চার চাচা সেই আগুনে শহীদ হন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি মফিজুর রহমান বাবলু নিজেকে জড়িয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিনেট সদস্য কুমিল্লা ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন ও কুমিল্লা ক্লাবের সদস্য। তিনি বাংলাদেশ ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যাসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য। লায়ন্স ইন্টারন্যাশনাল, কুমিল্লা লায়ন্স ক্লাব, কুমিল্লা কালচারাল কমপ্লেক্সের সঙ্গে জড়িত বাবলু কুমিল্লা শহর ও চৌদ্দগ্রামে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছেন।
বৈশিক মহামারি করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে এসেছিলেন রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুর রহমান বাবলু। বঙ্গবন্ধু অন্তঃপ্রাণ পঁচাত্তর বছর বয়সি এ মুক্তিযোদ্ধার চাওয়া বঙ্গবন্ধুকন্যার হাতে পূর্ণতা পাক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা। প্রধানমন্ত্রীর সহযোদ্ধা হয়ে নিজেকে সেই কর্মকাণ্ডে আরও সম্পৃক্ত করতে চান তিনি।