কুমিল্লা বুড়িচংয়ের সোনালি আউশে ঝলমল পয়াতের জলা
মহানগর ডেস্ক
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন এই জলায় আউশ ধান হতো না। কখনও আমন ধানও নষ্ট হয়ে যেত। শুধু বোরো করতে পারত। এই জলা একসময় অভিশাপের মতো ছিল। বিএডিসি খাল খনন করায় জলাবদ্ধতা দূর হয়েছে।’চারদিকে আউশের সোনালি আভা। মৃদুমন্দ বাতাসে ধানগাছের পাতা দোল খাচ্ছে আর ছড়াচ্ছে হালকা মিষ্টি সুবাস। ক্ষেতের একদিকে কৃষক ধান কাটছেন, আরেক দিকে চলছে ধান মাড়াই। পাশের খালে মাছ ধরছে কেউ কেউ।
এই দৃশ্য কুমিল্লার বুড়িচংয়ের পয়াতের জলার। ২০ বছর পর এবার সেখানে আউশের ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
বুড়িচংয়ের সদর, বাকশীমুল, ষোলনল ও রাজাপুর ইউনিয়নের ১২ হাজার হেক্টর আবাদি জমি নিয়ে এই পয়াতের জলা। জলাবদ্ধতার কারণে এত বছর সেখানে ধানচাষে সুফল পাননি কৃষকরা।
জলাবদ্ধতা নিরসনে চলতি বছরের শুরুর দিকে সেখানে ২৫ কিলোমিটার খাল পুনর্খননের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন এই জলায় আউশ ধান হতো না। কখনও আমন ধানও নষ্ট হয়ে যেত। শুধু বোরো করতে পারত। এই জলা একসময় অভিশাপের মতো ছিল। বিএডিসি খাল খনন করায় জলাবদ্ধতা দূর হয়েছে।’
এরই মধ্যে ১৮ কিলোমিটারের বেশি খনন হয়ে গেছে। সেখানে এবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) উদ্যোগে পরীক্ষামূলকভাবে ৫০ একর জমিতে আউশ ধানের চাষ হয়েছে। প্রতি একরে ফলন হয়েছে ২ দশমিক ৩ টন ধান।
বুড়িচংয়ের হরিপুর গ্রামের গিয়াস উদ্দিন মাস্টার বলেন, ‘খাল খননে এলাকার মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। জমিতে ফসল হচ্ছে, খালে মাছ ধরতে পারছে। খালের পাড়ে হাঁটাচলার রাস্তাও হয়েছে। সেখানে বিএডিসি কাঠ ও ফলের গাছ লাগিয়েছে। সেগুলো ফলও দিচ্ছে, কৃষকদের ছায়াও দিচ্ছে।’
বুড়িচং সদর দক্ষিণপাড়া এলাকার কৃষক মমিন হোসেন বলেন, ‘জলাবদ্ধতার কারণে আমরা আগে এক ফসলও ঠিকমতো করতে পারতাম না। খাল খননের কারণে জলাবদ্ধতা দূর হয়েছে। এবার আউশ ফসল করেছি। ভালো ফলন পেয়েছি।’
আউশের ফলন দেখতে মঙ্গলবার পয়াতের জলায় যান বিনা, কৃষি বিভাগ ও বিএডিসির কর্মকর্তারা।
বিএডিসি কুমিল্লার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘পয়াতের জলায় ২০ বছর জলাবদ্ধতা ছিল। বিষয়টি নিয়ে মাননীয় কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক ও প্রয়াত এমপি আবদুল মতিন খসরু স্যারের কাছে সুপারিশ করা হয়। তাদের পরামর্শে এইখানে খাল খননের উদ্যোগ নেয়া হয়।
‘আগে এখানে আউশ ধান চাষ করা যেত না। এবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বিনার উদ্যোগে আউশ ধানের চাষ হয়েছে। এখানে ভালো ফলন হয়েছে। এতে দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়বে।’
বিনা কুমিল্লা উপকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আশিকুর রহমান বলেন, ‘জলাবদ্ধতার কারণে আউশ ধান হতো না। এবার আমরা বিনা-১৯ ও বিনা-২১ চাষ করেছি। ভালো ফলন পেয়েছি। আশা করি একসময় এই জলার ১২ হাজার একর জমিতেই আউশ ধানের চাষ হবে।’