২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জেনে নিন আদরের সন্তানকে ডিপ্রেশন থেকে বাঁচাতে মা-বাবার করণীয়

লাইফস্টাইল ডেস্ক।।
প্রতি ৫ জনের ১ জন কিশোর-কিশোরীর অবসাদ ডিপ্রেশনে ভোগে। বিশেষ করে বয়সন্ধির সময় তাদের মধ্যে এই সমস্যাগুলো গুরুতর আকার ধারণ করে। এছাড়াও বর্তমানে বেশিরভাগ পরিবারই দেখা যায়।

শিশু বাবা-মায়ের থেকে দূরে থাকছে। বাবা-মা কর্ম ক্ষেত্রে ব্যস্ত থাকায় শিশু বড় হচ্ছে আয়ার কাছে। এতে করে তার সব কথা কারো সঙ্গে শেয়ারও করতে পারে না।

আসক্ত হচ্ছে ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তির ওপর এতে করে দেখা দিচ্ছে শিশুর শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি মানসিক সমস্যাও।

অনেক সময় দেখা যায় মনের কথা কাউকে বলতে না পারার ফলে নিজেরাই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। মানসিক অবসাদে এতটা গ্রাস করে ফেলেছে আত্মহত্যার মতো কাজ করে ফেলে। এসময় তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন তাদের বাবা-মায়েরাই।

কিশোর-কিশোরীকে তার অবসাদ থেকে মুক্ত করার জন্য বাবা-মা হিসেবে আপনি অনেক কিছুই করতে পারেন। জেনে নিন আপনার করনীয় কী এই সময়…

সন্তানের পছন্দের গুরুত্ব দিন: সন্তানকে গান গাইতে ভালোবাসে বা ছবি আঁকতে? তারা তার শখ পূরণ করতে সাহায্য করুন। এতে পজিটিভ এনার্জির পরিমাণ বাড়বে। মন ভালো থাকবে। পছন্দের বিষয় নিয়ে আসে যত ব্যস্ত থাকবে, তার মনের অবসাদ তত দূর হবে।

দরকার সঠিক ঘুম: আপনার কি মনে হচ্ছে আপনার সন্তান অবসাদে ভুগছি? তাহলে লক্ষ করুন রাতে তার ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা? ঘুম ভালো না হলে অবসাদ বাড়বে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা রাতে কম জাগেন তাদের মধ্যে অবসাদের পরিমাণ কম হয়। তাই বাবা মা হিসেবে চেষ্টা করুন সন্তানকে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে বাধ্য করতে। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর কম সকালে তাড়াতাড়ি উঠার অবসাদ কমানোর জন্য অন্যতম উপায়।

পরিসংখ্যান বলছে, যারা রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যান এবং সকালে তাড়াতাড়ি উঠে পড়েন। তাদের মধ্যে পজিটিভ এনার্জি পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। মন খারাপকে তারা সহজেই কাটিয়ে উঠতে পারেন।

শরীরচর্চা অভ্যস্ত করতে পারেন: আপনার সন্তান কি স্বাস্থ্যসচেতন? তা যদি না হয় তাহলে তাকে বাধ্য করুন স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে উঠতে। নিয়মিত এক্সারসাইজ ব্যায়াম করার জন্য সময় বেঁধে দিয়ে। যারা নিয়মিত এক্সারসাইজ করেন, তাদের শরীরে সে সমস্ত হরমোনের ক্ষরণ অনেক বেশি হয় যে হরমোন মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। এতে অবসাদ ডিপ্রেশনে পরিমাণ কমে।

নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন: প্রত্যেক মানুষের মধ্যে কিছু না কিছু সহজাত ক্ষমতা থাকে। যে ক্ষমতাগুলো ব্যবহার করে তারা হয়ে উঠতে পারেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল। আপনার সন্তানের মাঝে তেমনি অনেক ক্ষমতা আছে। সে হয়তো এখনো সেগুলো আবিষ্কার করে উঠতে পারেনি। বাবা মা হিসেবে আপনার কর্তব্য সেই কিশোর-কিশোরীর পাশে দাঁড়ানো। তার ক্ষমতাগুলো তাকে চিনতে সাহায্য করা।

সন্তানকে রক্ষা করুন ডিপ্রেশনের কবল থেকে

বন্ধুদের সঙ্গে টিফিন খাওয়া নিয়ে সামান্য মনোমালিন্য। আর এই সামান্য কথা কাটাকাটিটুকু মেনে নিতে পারল না ক্লাস সিক্সের ছোট্ট মেয়েটি। মা এবং দিদির অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করল সে!

সারাক্ষণ মোবাইল নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটির জন্য বকেছিলেন মা। ক্লাস টেনের ছেলেটি হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যা করল ক্লাস টেনের ছেলেটি।

সাম্প্রতিককালে খবরের কাগজের পাতায় চোখ রাখলে হামেশাই চোখে পড়ে এ ধরনের খবর। অনেক কারণ থাকতে পারে একটি অল্পবয়সী ছেলে বা মেয়ের এ হেন আচরণের।

তার মধ্যে একটা কারণ ডিপ্রেশন বা অবসাদ। হাসপাতালগুলোতে ডিপ্রেসড টিনএজার রোগীর সংখ্যা বিগত এক বছরেই 15-20 শতাংশ বেড়ে গেছে। একসময় ছেলেমেয়েরা যৌথ পরিবারে বাবা-মা ছাড়াও পরিবারের অন্য গুরুজনদের স্নেহের ছত্রছায়ায় থাকত। এখন পরিস্থিতি অনেক পালটে গেছে।

যৌথ পরিবার আর নেই বললেই চলে। অনেক ছেলেমেয়েই বাবা-মায়ের বিশ্রী বিবাহবিচ্ছেদের সাক্ষী। ফলে একাকীত্ব খুব দ্রুত গ্রাস করছে এই সব কিশোর কিশোরীদের।

তার সঙ্গে পরীক্ষায় ফেল করার ভয়, প্রেমে প্রত্যাখান এবং ক্রমাগত নিত্যনতুন জিনিসের চাহিদাও আত্মহত্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ছেলেমেয়েরা কিন্তু অনেক সময়ই তাদের আচরণের মাধ্যমে ডিপ্রেশন বা আত্মহত্যাপ্রবণতার কথা জানান দিয়ে থাকে। অবশ্য বেশিরভাগ বাবা-মাই তা বুঝতে সক্ষম হন না। সন্তানের হাতে হয় দামি উপহার বা অযথা বকাঝকাকেই তাঁদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র বলে মনে হয়।

কীভাবে বুঝবেন আপনার সন্তান ডিপ্রেশনের শিকার কিনা?

1. প্রতিদিনের কাজকর্মে অনীহা

2. অপরাধবোধ এবং আত্মপ্রত্যয়ের অভাব

3. রাত্রে না ঘুমোনো

4. খিদে না পাওয়া বা বেশি-বেশি খাওয়া

5. ক্লান্ত হয়ে পড়া এবং আশেপাশের ঘটনা থেকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া

6. অধ্যবসায়ের অভাব, দুর্বল স্মৃতি এবং নেগেটিভ চিন্তাভাবনা

7. আত্মহত্যা নিয়ে কথা বলা বা সেই বিষয়ে নেটসার্ফিং করা

সাহায্যের হাত

সন্তান যখন আপনার তখন সবচেয়ে বেশি দায়িত্বও আপনার। সে পড়াশোনা করছে কিনা সেটা দেখা যেমন কর্তব্য, সেরকমই তার মনে কী চলছে সেটা বোঝাটাও জরুরি। হোমওয়ার্কের খাতা দেখার সঙ্গে খোঁজ নিন সে সারাদিন স্কুলে বা কলেজে কী করেছে। তাকে কোনও বিশেষ ঘটনা তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে কিনা সেটাও বোঝার চেষ্টা করুন।

পরীক্ষার ফল খারাপ হলে বকাঝকা না করে সন্তানের আত্মপ্রত্যয় বাড়ান। তাকে বলুন পরের বার নিশ্চয়ই ভালো হবে। প্রয়োজনে যেখানে সে পড়ছে সেখানকার শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলুন।

এখন অনেক অনলাইন সাইটে বাবা-মা সমেত সন্তানের বিনামূল্যে কাউন্সেলিং হয়, সেখানে অংশগ্রহণ করুন। এম নাসের, শিব খেরা, স্টিভ জোবস, এরিক থমাসের মতো জনপ্রিয় বক্তাদের মোটিভেশনাল স্পিচ সন্তানকে শোনান।

শরীর যেরকম খারাপ হয়, ঠিক সেরকমই মনও খারাপ হতে পারে। তাই সেই সমস্যাকে এড়িয়ে না গিয়ে সন্তানের বন্ধু হয়ে উঠুন। যে কোনও মনোবিদের আগে আপনিই তার নিশ্চিন্ত আশ্রয়। তাই যে কোনও পরিস্থিতিতে তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে কখনও কুণ্ঠাবোধ করবেন না।

আরো দেখুন
error: Content is protected !!